Tuesday, October 15, 2019

'দাভা টেঙাত্ত্যেয়'

 "দাভা টেঙাত্ত্যেয়"
 নূতন ধন চাকমা,

ধেয় তাগলান ধারেলুঙ,
চিনচিন্ন্য গরিনেয়।
হাত্ত্নদ যেম এবার মুই,
সমার তোগেয়নেয়।

তরে্ লবার হাত্ত্নদ যেম,
গাজ-বাজ হাবিম্বোয়।
ত্ বাবা-মামা দোজ্জ্যোন্দে দাভা টেঙাগুন
যুগুলেবার যোগা মুই চেম্বোয়।

দাভা টেঙা বেজ দোজ্জ্যোন,
মত্ত্যেয় বো ন্ দিবাত্ত্যেয়।
সে দুগে হাত্ত্নদ যাঙঅর,
তরে লবাত্ত্যেয়।

জীবনদ ধ্ হাত্ত্নদ ন্ যাঙ,
গাজ-বাজ হেনে্ হাবিম্বোয় হিজেনী?
তরে ন্ পেলে দুগে যেব মর,
এ জীঙগানির নিজেনী।

৫ বজর ধুরি লে্ন গরির,
অামি দ্বি'জনে।
লবার অক্ত্দ অারেবার ন্ চাঙ,
তরে অারেলে, বাজিম মুই হেনে?

জীবনত্ত্যেয় মুই সুগী ওই,
তরে লোয় পেলে।
দি্ল হেনা যেদ্ নয় মর,
তরে ন্ পেলে।

দাভা টেঙাগুন যুগুলেয় পারল্ল্যে,
যাদি পিরিম্বোয়।
মত্ত্যেয় বিলি তুয়ো এবার,
গোজনত্তুন বর মাগিচ্চোয়।

হাত্ত্নদ যেনেয়...
বাঘ-ভালুক্কুনরে মৈত্রী দিম্বোয়,
বুদ্ধ'র পহ্দ ধুরি।
তারাও মরে মৈত্রী দিবাক
ম্ অাগোজ্দ পুরি।

বেন্ন্যে-বেল্ল্যে বন্দনা গরিজ,
হুজি গরিনেয়।
ত্ পূর্ণ বলে যাদি পিরি পারঙ পা্,
তিরোজ পুরেয়নেয়।

সিত্তুন ফিরিলে লো-লি অহ্ভঙ,
দাভা টেঙাগুন দ্বি'নেয়।
জীঙগানির নিজেনী সুগী অহ্ভঙ,
ল'গ সমারী ওনেয়।
=======
পুুর- ১৫.১০.২০১৯ইং।







Monday, October 14, 2019

রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের জীবন

       ১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সাল
   
  রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের জীবন। 
       নূতন ধন চাকমা, সংবাদকর্মী
                    পর্ব-১-১৪
বিএসসি পড়তাম।
সকালে রান্না করে সেই খাবার রাতেও খেতে হতো। গরমে তরকারি বাসি হয়ে যেতো।
সারাদিন কলেজে ক্লাশ।
বিকেলে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশ। হোস্টেলে ফিরতে মাঝে২ সন্ধ্যা হয়ে যেত। রুমে ফেরার পর শরীর দুর্বল হয়ে যেতো।
স্নান শেষে একটু বিশ্রাম নিলেই রাত হয়ে যেতো।
তাই মাঝে মাঝে রান্না করারও সুযোগ হতো না। সকালের রান্না পর বিকালে তরকারী বাসি হয়ে যেত। এমনভাবে বাসি হয়ে যেত যে-তরকারী সমূহ ফেনায় ভরে যেত। তবুও খেয়েছি সেই বাসি খাবার।কত বাসি খাবার খেয়েছি। তার কোনো ইয়াত্ত¡া নেই। সে খরব বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে কলেজে। তখন অনেক বন্ধু বান্ধবী জেনে যায় বাসি খাবার খাওয়ার কথা।মাঝে মাঝে রাতভর থাকে না বিদ্যুৎ। গরমে ছটপট করে লেখা লেখাপড়া করতে হয়েছে। হোস্টেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে মাঝে মাঝে ১১/১২টা বেজে যেত। তখন রাতভর চুরি করে লেখাপড়া করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।প্রায় সময় বন্ধুদের থেকে চুরি করে রাতভর লেখাপড়া চালিয় যেতাম।
মাঝে২ ভোরে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যখন সূত্রপাত করত তখন ঘুমিয়ে পড়তাম।
আবার রান্নার জন্য ৭টা বা সাড়ে ৭টা সময় উঠতে হতো।।হাতমূখ দোত করা, স্নান করা, ওয়াশ রুমে কাজ শেষ করতে আর রান্না করতে করতে  সময় যেত প্রায় ঘন্টা খানেক। কলেজে যেতে হবে, কলেজের স্যারদের বাড়ী কাজ করতে করতে চলে যেত আরো প্রায় ঘন্টা খানেক।
সেই অনেক পরিশ্রমের কাজ ছিল। অনেক কষ্ট করেছি জীবনে সফলতার জন্য। এমনি একটা দিনে রান্না শেষে সকালে  মন খারাব করে আনমনে বসে আছি হোস্টেলে বারান্দায়।
হঠাৎ এক বন্ধবী এসে আমায় অভ্যার্থনা জানালো। (বান্ধবীটি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।)
জিজ্ঞেস করলো কেমন আছি। প্রতি উত্তরে, দুঃখের সুরে লম্বা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে -
বললাম, আছি ভালো কোনো মতে।

তিনি আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাস  ছেড়ে দেওয়া অনুভব করে বললেন- দাদা, খুবই কষ্টে আছেন মনে হয়।
তাকে বললাম- আমি কৃষকের ছেলে। কষ্টতো শুধু আমাদের জন্য এসেছে। আপনাদের জন্য নয়।
তিনি বললেন- কেন?
প্রতি উত্তরে বললাম- আপনার জীবতো সুখের। মা-বাবা সরকারী চাকুরী করেন। তাই কষ্ট কি? তা বুজতে পারেনি। কোনো কিছুরই অভাব আপনার নেই।
আর আমি চলি কোন রকমে।
মাস শেষ হওয়ার আগে শেষ হয়ে যায় টাকা।শেষ হয় বাড়ী থেকে পাঠিয়ে দেওয়ার চাউল। তখন বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে মাস শেষ করতে হয়।
এ কথাগুলো বলতে বলতে আমার কথার ফাঁকে  তিনি আমাকে বললেন -
সারাদিন দাড়িঁয়ে রাখবেন? না রুমে নিবেন?
বললাম চলেন রুমে।
রুমে যাওয়ারর পর আমার পড়া চেয়ারে বসতে বললাম তাকে তিনি বসলেন না।
 বসলেন পড়ার টেবিলের পাশে আমার বিছানায়।
বললেন-আজ আপনার রান্না করা ভাত খাবো।
তাকে বললাম-আমি শুধু আলু আর আমেল্ল্যা(এক ধরনের টক তরকারী) রান্না করছি। যা আপনি খাবেন না।
এবংকি খেতেও পারবেন না।
 তিনি প্রতি উত্তরে বললেন-খাবো।আপনি যা খাবেন তা দিয়ে।
তাকে বললাম- রুমে পানি নেই। পানি নিয়ে আসি অপেক্ষা করেন।
তারপর পানি আনার অন্যের থেকে খাবারের প্লেত ১টা আনলাম।
খাবার রেডি করতে করতে তিনি ব্যাগ থেকে ছোট্ট দু'টি টিপিনের বক্স বের করলেন।

তাকে বললাম -এগুলো কি?
তিনি বললেন- এ দু'টি বক্সের মধ্যে ১টিতে মুরগীর মাস। আর অপরটিতে চাপিলা মাছের ভাসি আছে। তখন একটু লজ্যাও পেলাম।
বললাম কেন আনলেন এগুলো?
উত্তরে তিন বললেন-কলেজে অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি পঁচা বাসি খাবার খান মাঝে মাঝে। তাই এগুলো নিয়ে আনলাম আপনার জন্য।
তাকে বললাম-এগুলো যে আনলেন আপনার বাবা-মা কি জানেন?
তিনি বললেন- না।
তাকে বললাম-আমি কৃষকের ছেলে।
তাও আবার ৭ভাই বোনের মাঝে আমি সবার ছোট।
একসাথে ৩ ভাই-বোন লেখা পড়া করি।
বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী।
 অভাবতো থাকবেই স্বাভাবিক।
একথা বলার সাথে সাথে কেন জানি তার চোখের পানি এসে গেছে।
তাকে চোখের পানি মুছতে বললাম।
তিনি চোখ মুছলেন।
বললাম -চলেন খেতে বসি।
খাওয়া শুরু করে দিলাম। তিনি শুধু
আমেল্ল্যা ঝোল আর কিছু আলু তরকারী খাবার প্লেটে নিলেন।
মাস আর মাংস নিতে বললেও তিনি নিলেন না।
বললেন-আমিতো সব সময় মাস,মাস দিয়ে
খাবার খাই। তাই খেতে ইচ্ছে করছে না।
শুধু এগুলো দিয়ে খাবার অভ্যাস করার চেষ্টা শুরু করি।
তখন অভাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে
রইলাম।
এ ফাকে সে আমার খাবার প্লেটে কয়েক পিচ মাস আর মাংসের তরকারী দিয়ে দিলেন। এবং আমাকে খাওয়ার জন্য
অনরোধ করলেন।
আমি বললাম-আপনি না খেলে আমিও খাবো না।
তখন তিনি  আমার প্লেট থেকে এক পিচ ভাজি মাস আর এক টুকরো মাংসের পিচ নিলেন।
খাবার শেষে বাকী থাকা মাস আর মাংসের
তরকারী সমূহ বক্স সহ রেখে দিলেন।
 বললেন -এগুলো দুপুরে খাবেন আর রাত্রে।
আর বললেন-রেডি হয়ে যান কলেজে যেতে হবে।
আমিও রেড হয়ে যায়। চলে গেলাম কলেজে।
বান্ধবিটাকে কলেজে নাস্তা করাবো সে হাতকড়িও আমার নেয়। তখন মাস প্রায় শেষে।
তাই তাকে নাস্তা করাবো চিন্তা করেও করাতে পারিনি।
কলেজে ২টি ক্লাশ করার পর সে আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আসে। আমি ক্লাশ রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমাকে দেখে নিলেন কলেজ ক্যান্টিনে।
 আমার হাতকড়ি নেয়। তাই পড়লাম মহা সংকতে।
নাস্তা করার পর বিল দেওয়ার টাকাও আমার নেয়।
তিনি বললেন -আমি দেবো।
খাবার শেষে  বেরিয়ে আসলাম ক্যান্টিন থেকে।
তিনি আমাকে অনেক অনুরোধ করলেন গাছ তলায় বসে তার সাথে গল্প করতে।
আমি সময় দিতে পারিনি। সে সময় ছিল গণিতের ক্লাশ। তাই আবার ক্লাশে গেলাম।
গণিতের স্যার সপ্তাহে আসেন মাত্র ৩ দিন।কোনো অবস্থাতেই ক্লাশ ফাকি দেওয়া যায় না।

                   পর্ব -২।
গণিতের স্যার ছিলেন খুবই তীক্ষ্ন বুদ্ধিদীপ্ত।মনে হয় গণিতের পুরো বইটি মুখস্ত। ক্লাশ শেষে স্যার কিছু নোট দিলেন ফটোকপি করে রাখার জন্য।
আমার হাতে টাকা না থাকায় ফটোকপি করে রাখতে পারলাম না।
আমার সকল বন্ধুরা ফটোকপি করে রেখেছেন।
ক্লাশ শেষে বুক ভরা দুঃখ নিয়ে হোস্টেলে যাচ্ছিলাম।
পথে সেই বান্ধবীটি আমার অপেক্ষায় আছে।
আমাকে দেখে বললেন- মুখের ভাজে এত দুঃখ দেখা যাচ্ছে কেন?
সকালে আমি তরকারী এনে দিয়েছি তাই?
উত্তরে বললাম- নাতো, শরীর ক্লান্ত  লাগছে তাই।
পরে গণিত স্যারে নোটের কথা বললাম।টাকা না থাকায় নোটগুলো ফটোকপি করে রাখতে পারিনি। তাই মন খারাব।
একথা বলার সাথে সাথে তিনি পার্স থেকে টাকা বের করে দিলেন। নেন এগুলো।এগুলো দিয়ে
ফটোকপি করে রেখে দিন।  কাজে লাগবে।
তাকে বললাম- বন্ধুদের কপি থেকে পরে ফটোকপি করে রেখে দেবো।
আজ করবো না।
মেয়েটি কোন কথা না শুনে টাকাগুলো দিয়ে গেলেন।বললেন  আজকের মতো বাই।
কাল সকালে দেখা হবে। যাওয়ার সময় ফটোকপি করে রেখে দেওয়ার কথা স্মরন করিয়ে দিলেন।
পরের দিন কলেজে গেলাম।মেয়েটি আমায়
দেখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বললেন-কেমন আছেন?
বললাম ভালো আছি। তিনি বললেন একটু দাড়িঁয়ে কথা বলতে। সময় দিতে পারাবোনা বললাম। এখন আমার পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাশ। পরে কথা বলবো।
এ বলে ক্লাশে গেলাম। পদার্থ বিজ্ঞানের স্যারও অনেক নোট দিলেন ফটোকপি করার জন্য।
আমার সেই একই অবস্থা।
ক্লাশ থেকে বের হবার সাথে সাথে দেখলাম মেয়েটি দাড়িঁয়ে আছে আমার ক্লাশ রুমের পাশে।
বললেন চলেন ক্যান্টিনে। আমি না বলাতেই সে হাত ধরে নিয়ে হেলেন ক্যান্টিনে। নাস্তা করালেন।
এবং বললেন ক্লাশে যান। ক্লাশ মিস না করারও অনুরোধ করলেন।
ক্লাশ শেষে কলেজ বাউন্ডারির চারিদিকে তাকিয়ে চাইলাম। মেয়েটি সম্ভবত বাসায় ফিরেছে।
দুপুরে হোস্টেলে এসে খাবার খেলাম।কিছু বিশ্রাম নিয়ে কলেজে প্রাকটিস  ক্লাশ করলাম।
আর মনে মনে বাবার কথা স্মরন করলাম।বাবা কবে আসবেন? টাকা, চাউল করে এনে দিবেন?
 পর্ব-৩
পরের দিন ছিল রবিবার।
প্রতি দিনের মতো রান্না করে খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।
আজ সেই মেয়েটির সাথে দেখা হলো না।
তাই একটু মন খারাব ছিল। ইংরেজী, গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাশ করে দুপুরে খাবার খাওয়ারের জন্য হোস্টেলে ফেরার পথে মেয়েটির বান্ধবী ছোট্ট একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিলেন।
সেই কাগজে লেখা ছিল-
প্রিয় দাদা,
আমার মন ভালো নেই। তাই কলেজে আসা হলো না। ভালো থেকো।
ইতি
সেই আমি।
কাগজটি পেয়ে আমারও খারাব লাগলো।
খাবার খেয়ে আবারও কলেজে গেলাম এবং ক্লাশও করলাম। তবু দেখা হলো না
তার সাথে।
পরের দিন ৭টায় ঘুম থেকে উঠে হাত মূখ ধূয়ে ভাতের পাতিলা চুলায় তুলে দিলাম।
সেই ক্ষনে তিনি হোস্টেলের আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করলেন -কেমন আছি?
বললাম ভালো আছি। তবে মন ভালো নেয়।
তিনি বললেন -কে?
বললাম হাতে টাকা নেই। তাছাড়া বাড়ী থেকে আনা চাউলগুলোও শেষ হচ্ছে। পরশু বাবা না আসলে না খেয়ে থাকতে হবে।
তিনি বললেন- চিন্তার কোনো কারন নেই। কাল আমি টাকা এনে দেবো।
বললাম -কেন?
তিনি বললেন হাত খরচের জন্য।
আবার বললাম-আপনার থেকে টাকা নিলে ফেরৎ দিতে কষ্ট হবে। লাগবেন না।
তিনি বললেন-ফেরৎ দিতে হবে না।
তাকে বললাম আমার লাগবে না। কারন আমি হোস্টেলের বাইরে কোথাও বাহির হবো না।
কলেজ  আর হোস্টেলেই থাকবো।
 কথা বলতে বলতে ভাতগুলো হয়ে গেছে। আলু রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সে সময় তিনি বললেন -আজ আলু খাবো না।
আমি মুরগীর মাংস এনেছি। শুধু মুরগীর মাংস দিয়ে খাবো।
তাকে বললাম-আমার জন্য এত কষ্ট করেন কেন?
আপনার "মা" কি জানেন? এখানে এসেছেন? মাংসের তরকারী এনেছেন।
তিনি বললেন- মা'র অনুমিত নিয়ে মাংস নিয়ে এসেছি। ভোরে মা রান্না করে দিয়েছে।
মাকে আপনার কথা বলেছি। তাই মা'ই বলেছে মাংস নিয়ে আসতে।
যতারীতি খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।এবং ক্লাশগুলো  করার পর দুপুরে খাবারের জন্য হোস্টেলে আসার পথে আবার তার সাথে দেখা হলো।
তিনি আমার সাথে হোস্টেলে আসলেন। দু'জনে খাবার শেষে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি ঠিক সে সময়  বাবা রুমের বাইরে থেকে আমার রুম মেট থেকে জিজ্ঞেস করলেন আমার "কালা বাবা" কি এ রুমে থাকে।
রুম মেট আমাকে ডাক দিয়ে বললেন -দাদা আপনার বাবা এসেছেন।
তখন আমি খুশি হয়ে বাবা'কে ডাক দিলাম রুমে আসার জন্য।
বাবা চাউল এক বস্তা কাঁধে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।
বাবা'কে পায়ে ধরে প্রণাম দিলাম।
আমার সাথে মেয়েটিও প্রণাম দিলেন।
বাবা বললেন মেয়েটি কে?
বাবাকে বললাম আমার বন্ধু।
বাবাকে পানি দিলাম। ৫/৬ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে "বাবা" বললেন-
"কালা বাবা" আমি চলে যাবো। দেরী হলে গাড়ী পাবো না।
বাবা আমাকে ২ মাসের খরচের ৩৩০০ শত টাকা হাতে দিলেন।
আর বললেন তোমার প্রাইভেটের টাকাগুলো দিয়ে দিও। 
অবশিষ্ট টাকাগুলো দিয়ে কষ্ট করে ২ মাস চলতে হবে।
"বাবা" দীর্ঘ একটা নিঃস্বাস ছেড়ে দিয়ে বললেন সেই ভোর ৪টায় বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। বাসায় ফিরতে রাত ৮/৯ টা বাজবে।
এ বলে চলে আসলেন।বাবা ধূতি পড়েন।
বাবা আসার পর মেয়েটি বললেন -আপনার  বাবা আপনার জন্য অনেক অনেক কষ্ট করেন?
তাকে বললাম -আমি গ্রামের লোক।কৃষকের ছেলে। পানছড়ি উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রামে থাকি।
তাই বাবাকে সেই পাখি ডাকা ভোরে আসতে হয়েছে। ঘরে ফিরতে রাত ৮/৯ টা বেজে যেতে পারে। এভাবে কথা বলতে বলতে কলেজে দিকে রওনা দিলাম দু"জনে। ক্লাশ শেষে বিকালে আমাকে বাই বাই কাল দেখা হবে বলে  চলে গেলেন।
আমিও হোস্টেলে গেলাম মনের আনন্দে।
                 পর্ব-৪
প্রতি দিনের মতো করে সহপাঠীদের নিয়ে কলেজে গেলাম।
তবে আজ সকালে দেখা হয়নি।  দু'টি ক্লাশ করে গণিত ৩য় পত্রের খুটিনাটি জানার জন্য আমার ৩ সহপাঠীসহ লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রায় আধা ঘন্টায় গণিতের অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম।

লাইব্রেরী থেকে বাহির হওয়ার পথে মেয়েটির সাথে দেখা হল।আমাকে দেখে মেয়েটি বন্ধুদের সামনে
 "দা -আ-দা" (যেন এক নরম সুরে)ডাক দিলেন।
ডাক শুনে বন্ধুদের বললাম
আপনারা ক্লাশে যান। আমি আসতেছি। সহপাঠীরা চলে যাওয়ার পর মেয়েটির ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে গেলাম।
মেয়েটিকে বিনয়ের সুরে বললাম
আমার এখন গণিতের ক্লাশ। ক্লাশে যাবো। মেয়েটি হ্যাঁ না কিছুই বললেন না।
বললাম ঘন্টা খানেক পরে দেখাা হবে। এবং
মেয়েটিকেও ক্লাশে যেতে অনুরোধ করলাম।
মেয়েটি অনেকটা মুখ কালো করে ক্লাশে গেলেন।
ক্লাশ শেষে মেয়েটির সাথে দেখা হলে
মেয়েটি বললেন চলেন গাছের ছায়ায় গল্প করি।
মেয়েটির কথা সাড়া দিয়ে মেয়েটির সাথে গাছতলায় গেলাম।
সাথে মেয়েটির এক বান্ধবীও ছিল।
গাছের ছায়ায় বসার সাথে সাথে
মেয়েটি বললেন এখন থেকে তুমি বলতে হবে।
আপনি বললে অনেক দূরে মনে হয়। তাই আপনি করে কথা না বলার অনুরোধ করলেন।
মেয়েটিকে বললাম-দেখেন আমি কৃষকের ছেলে। আমরা সাত ভাইবোন।
২ ভাই ৫বোন।বড় ভাই ইন্টার পড়ার সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমি গরীবের ছেলে।

আমি সবার ছোট। বিএসসি ভর্তি হওয়ার জন্য ২২ হাজার টাকা দিয়ে
বাবার ১ কানি(৪০শতাংশ)ধান্য জমি বিক্রি করতে হয়েছে। সে টাকা দিয়ে বিএসসি পড়তে এসেছি।  জানিনা সেই টাকা দিয়ে বিএসসি শেষ করতে পারবো কিনা? আর
আপনিতো সরকারী চাকুরী জীবির মেয়ে।আপনার বাবা মা দু'জনেই সরকারী চাকুরী করেন।
প্রেমের সম্পর্ক হলেও আপনাকে হয়ত আমি নাও পেতে পারি।এভাবে বলার সাথে সাথে মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বললেন-আমি সবকিছুই  মানি।
মেনে নিয়েছি বিধায় আপনার কাছে আসি।
তখন মেয়েটিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা কেন জানি হারিয়ে ফেলেছি।
বললাম আজ থেকে তুমিই বলবো। আর কেঁদো না।
 চোখের পানি মুছতে বলার সাথে সাথে সে মুছে নিল।
এরপর
মেয়েটিকে বললাম তোমায় কি নামে ডাকতে পারি?
মেয়েটি বলল "চিজি" বলে ডাকো।
তখন থেকে মেয়েটি আমার জন্য "চিজি" হয়ে গেল।
এবং সে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল।
খামটি তার সামনে খুলতে চাইলে সে না খোলার অনুরোধ করল।
তাই খামটি পকেটে নিতে হলো।
গাছের ছায়া থেকে কলেজে এসে দেখি আমার সহপাঠীরা সবাই চলে গেছে।
এবং কি তার সহপাঠীরাও ।
সে আমাকে বাই বাই বলে চোখে প্রেমের ভাব দেখিয়ে হাতে দৃষ্টিতে লাভ ইউ বলে চলে গেল।
আর আমি খামটি নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম।
                   পর্ব-৫

বিকাল ৫টা। রুমে যাচ্ছি আর পকেটের খাম থেকে কি যেন প্রেমের আভাস পাচ্ছি।
হোস্টেলের কাছে পৌঁছতেই দেখি হোস্টেলে সহপাঠিরা মাঠে খেলা খেলতেছে।
হোস্টেলের ছোট ভায়েরা কিছু না বললেও সহপাঠিরা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রসিকতা করতে শুরু করেছে।আর আমি কাউকে কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
ড্রেস পরিবর্তন করে স্নান করে হোস্টেলের বারান্দায় একা একা বসে আছি।
আর চিন্তাা করছি  "চিজি"কে নিয়ে।
আর মনে মনে বললাম-আমি কি চিজি'র জন্য যোগ্য?
তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বো ? সম্পর্ক করলেও জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো ?
 এ রকম হাজারো প্রশ্ন করছি মনে মনে।
যেন চিন্তার মহা সাগরে ভাসতেছি।সে সময়
পাশের রুমে থেকে ববের হয়ে এক বড় ভাই(তিনি রাস্ট্র বিজ্ঞানে এমএ পড়তেছেন)
আমাকে দেখে বললেন- কিরে ছোট ভাই, খেলা না খেলে একা একা বসে আছ কেন?
মন খারাব নাকি?
তাঁকে বললাম-দাদা, শরীর দুর্বল লাগছে তাই।
খেলা শেষে করে সবাই যার যার রুমে আসলো। অনেকেই স্নান করতে গেল।
আর আমি নিঃসঙ্গ করে একা একা বসে আছি। তখন প্রায় সন্ধ্যা।
আমিও রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে পড়ার জন্য বসে গেলাম।
মন মানছে না। বারবার গাছ তলায় গল্প করার কথাগুলো ভেসে আসছে দু'চোখে।
আর তখনি পকেট থেকে খামটি বের করে পড়তে শুরু করলাম।
প্রানের প্রিয়, দাদা,
একরাজ রজনী গন্ধা ফুলের শুভেচ্ছা রইল। খুব বেশি ভালোবাসি তাই তুমি বলে সম্বোধন করলাম।
জানি, চিঠি পেয়ে রাগ করবে। আবেককে সামলাতে না পেরে তবুও লিখতে বাধ্য হয়েছি।
তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে।ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে না পেলে আমি চলে যাবো দূরে,সেই  দূরে।অনেক দূরে।
হয়ত জন্ম-জন্মান্তরে দেখা হবে না আর।
জানি পাবো না। তবুও পেতে চাই।
সৃষ্টি ককর্তার কাছে প্রার্থনা করছি
তুমি যেন আমার পবিত্র ভালবাসা গ্রহণ কর।
দাদা, আমার প্রার্থনাটি পূর্ণ করে দাও।
 বিভো, দেহ হৃদে বল!
না জানি ভক্তি, নাহি জানি  তুষ্টি
কি দিয়া করিব, তোমায় আরতি
আমি নিঃসম্বল!
তোমার দুয়ারে আজি রিক্ক করে
দাঁড়ায়েছি প্রভো, সঁপিতে তোমারে
শুধু আঁখি জল,
দেহ হৃদে বল!
      ইতি
 সেই আমি।
বিঃদ্র ঃ উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
                    পর্ব -৬
পড়ার টেবিলে বসে চিঠিটা অনেক অনেক বার পড়ে নিলাম।
সব কিছু মুখস্ত হয়ে গেল। তবুও মন ভরেনি।বার বার পড়তে মন চাইছে। ডুবে গেলাম মহা সমুদ্রে। তখন রাত প্রায় ১০টা।
 রুমের পাশের সীটের ছোট ভাই, গণিত বই আর খাতা এনে
বলল -দাদা, ক্যালকুলাসের এ দু'টি অংক পারতেছি না।
আমাকে একটু করিয়ে দেন। তাকে অংক দু'টি করিয়ে দিয়ে
আমিও গণিতের কয়েকটি সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করলাম। ৩-৪টি সমস্যা সমাধান করলাম মাত্র। কি যেন টেনশন মায়ায় ডুকে গেল নিজেও বুজলাম না।
তারপর ওয়াশ রুম থেকে হাত-মূখ ধুয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসে পদার্থ বিজ্ঞানের বাড়ী কাজগুলো করে নিলাম।
ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে গেলাম।
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে তবুও ঘুম আসছে না।
চোখ বন্ধ করতেই মেয়েটির ছবি ভেসে উঠে বার বার।
এভাবে অনেক ক্ষণ থাকার পর অবশেষে  নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছি।
খুব ভোরে রাঙামাটি রাজ বন বিহার থেকে মাইকের সুরে গৌতম বুদ্ধে অমৃতময় সুত্রগুলো শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
হাত-মূখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতেই চিঠিটির দু'একটি লাইন আবারও মনে পড়ে গেল।
তবুও মনযোগ দিয়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত পড়ে নিলাম।
 তবে কোনো পড়া মুখস্ত করতে পারিনি।
ভাতের পাতিলা চুলায় বসিয়ে দিলাম।
আর আলু রান্না করলাম।
স্নান করে খাবার শেষে আজ সহকর্মীদের বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্যাম্পাসের বারান্দায় দাড়িঁয়ে রইলাম।
কিছুক্ষণ পরে কলেজ বাস থেকে
"চিজি" নেমে গিয়ে ক্যাম্পাসের চারিদিক টাকিয়ে দেখল। মনে হয় যেন আমাকে খুঁজচ্ছে।
ক্যাম্পাসের বান্দার এসে আমায় দেখে
দাদা’  করে ডাক দিয়ে আমার কাছে এসে বলল চল ক্যান্টিনে/লাইব্রেরীতে।
আমি তাকে লাইব্রেরীতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে সে আমাকে ধরে বলল চল লাইব্রেরীতে।
 লাইব্রেরীতে গিয়ে পাশাপাশি বসে আমার হাত ধরে  বলল- দাদা, খুঁশিতে কাল রাতভর ঘুমাতে পারিনি।
সত্যি করে বল তুমি আমার হবে ?
বললাম-হবো।
আর শর্ত দিলাম যে
ক্লাশ চলাকালীন সময়ে আমাকে যেন না ডাকে।
চিজি রাজি হয়ে বলল-পড়ার সময় তোমাকে ডাকবো না।
আর বলল আমার চিঠি উত্তর কোথায়।চিজি'কে বললাম-চিঠি তো লাগবে না।
কারন তোমাকে আমি মেনে নিয়েছি। চিজি অনেকটা অভিমান করে বলল-
আমার চিঠির উত্তর চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে।
চিজি'কে বললাম তোমার চিঠির উত্তর দেবো পরশু দেবো।চিন্তা করো না।
এই বলে দু'জনেই ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে দুপুরে দেখা হয়নি চিজি'র সাথে।
দুপুরের খাবারের জন্য হোস্টেলে আসলাম। তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
গাছ তলায় দু'জনে অনেক ক্ষণ গল্প করলাম। আর মনের আবেগের কথা প্রকাশ করলাম।
এরপর ক্লাশে চলে গেলাম। একটা ক্লাশ করার পর বের হতেই চিজি বলল।আমার ক্লাশ শেষ।
তোমার আরো ক্লাশ আছে। ক্লাশ কর।
আমি চলে যাচ্ছি বলে চিঠির মাধ্যমে চিঠির উত্তর পাওয়ার শর্ত জুরে দিয়ে লাভ ইউ দাদা বলে চলে গেল।
                   পর্ব -৭

ক্লাশ শেষে সহপাঠীদের সাথে হোস্টেলে আসলাম।
বিকেলে হোস্টেল মাঠে খেলা খেলে সময় পার করলাম।
খেলা শেষে পড়ায় বসতেই আবার চিজি
মূখ খানি চোখে ভেসে উঠল।
চিজি ছিল আমার চোখে দেখা প্রথম বিশ্ব  সুন্দরী।
চোখ, নাক, খুবই সুন্দর ছিল। গায়ের রঙ ফর্সা আর চুল ছিল কোমর পর্যন্ত লম্বা। উচ্চতা
আমার সম পরিমান লম্বা।
মনে হয় যেন পরি।
বয়স কম। তাই একটু চঞ্চল প্রকৃতির। কয়েক দিন সম্পর্কে
আমার সাথে প্রচুর দুষ্টামি করতো।
সুযোগ পেলে  জরিয়ে ধরার চেষ্টা করতো।
সেইগুলো চোখে ভাসতে থাকে সব সময়।
তবুও বই পড়ার চেষ্টা করলাম।
সফল হতে পারিনি।
রুমের বাকী দুই ছোট ভাই নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক চেষ্টা করে আমি নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিতে চাইলেও পারিনি। অবশেষে ঘুমিয়ে পড়েছি।
ভোরে আমার পাশে সীটের ছোট ভাইটি জেগে উঠে বলল দাদা উঠেন। ৪টা বেজে গেছে।
হাত মুখ ধৌত করে পড়ার টেবিলে বসলাম।
বেশ কিছু পড়া আয়ত্বেও নিলাম।
৭টা পর ভাত রান্না শুরু করলাম।
প্রায় আধা ঘন্টার পর দোরজায় দেখি চিজি এসে গেছে। আর বলছে।
আজ 'মা' ভোরে রান্না করে তোমার জন্য মাছ পাঠিয়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি আসলাম। আমিও খায়নি। একসাথে খাবো।
দাদা, আজ বিকেলে তোমাকে নিতে বলেছে। অবশ্যই যেতে হবে।

চিজিকে বললাম আজ যাবো না। কয়েক দিন পর যাবো।
তবুও নিতে চাইছে সে। তাকে বললাম মা'কে বলো আজ পড়া লেখার চাপ বেশী।
তাই আসতেছে না। কয়েক দিন পরে আসবে।
এভাবে বলতে বলতে ভাত খাওয়া সেরে ফেললাম।এরপর কলেজে গেলাম।
ক্লাশ শুরু না হওয়ায় দু'জনে গাছের তলা বসে গেলাম।
আমার দু'হাত ধরে চিজি বলল
দাদা-তুমি আমার প্রাণ। তুমি আমার সব কিছু। তোমায় ছাড়া বাসবো না।তোমায় না পেলে আমান জীবন বৃথা হবে।

চিজি'কে বললাম- তোমার জন্য হয়েছে আমার জন্ম। তোমাকে খুবই ভালোবেসেছি।
তুমি ছাড়া আমার জীবনও অচল হবে।
চিজি' কে আরো বললাম-আমাদের সম্পর্কটা তোমার পরিবার
মেনে না নিলে কি করবা?
চিজি হেঁসে হেঁসে বলল-মা আর বাবা আমাকে খুবই ভালোবাসে। তোমার ব্যাপারে মাকে সব ববলেছি। মা মেনে নিয়েছে।
আর বাবা মায়ের কথা শুনে।  বাবাও মেনে নেবে।
মেনে না নিলে পালিয়ে বিয়ে করবো।
চিজি বলল- দাদা, আমার চিটি উত্তর দিলে না যে?
বললাম দেবো, পরশু দেবো বলে- দু'জনে ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে আবার দু'জনে দুপুরের খাবারের
জন্য হোস্টেলে আসলাম।
থাবার শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে গাছ তলায় প্রায় ঘন্টা খানেক আড্ডা দিলাম।

                পর্ব -৮

বিকালে ক্লাশ শেষ প্রায় ঘন্টা খানেক  গাছ তলায় আড্ডা দিলাম।
আজ চিজি যেন আমার ছাড়ছে না।
 আমার হাত দু'টো ধরে
একটার পর একটা প্রশ্ন করতে চলেছে।
আর আমাকে নিয়ে পর্যটন ঝুলন্ট ব্রীজ, সুবলং ঝর্ণায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করছে আর অনুমতি নিচ্ছে।
চিজিকে বললাম- আমার এখনো পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ,সুবলং ঝর্ণা আর কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিলল দেখার সুযোগ হয়নি।
চিজি বলল- এত দিন কেন যাওয়া হয়নি।
চিজি'কে বললাম-এমনিতেই যাওয়া হয়নি।
চিজি আরো বলল-হাতে টাকা নাই তাই যাওয়া হয়নি না?
মাথা নিচু করে হ্যাঁ করলাম।
চিজি বলল- আগামী মাসে বন্ধ আছে।সবগুলোতে ঘুরবো, আড্ডা করবো। তোমার জন্য মা থেকে টাকা চেয়েছি। মা দিয়ে দেবে বলেছে।
আমার মা ০+ রক্তের মানুষ।খুবই সহজ সরল, উপকারী আর উদার মনের মানুষ।
তাই বলতে আমাকে প্রশ্ন করল তোমার রক্তের গ্রুপ কি? আমি  অই+ গ্রæপের।
আমি বললাম রক্তের গ্রæপ তো পরীক্ষা করা হয়নি।
কাল করে নিয়ো।মাথা নিচু করে হ্যাঁ বললাম। আর রক্ত পরীক্ষা করার জন্য আমার পকেটি ৫০০ টাকা একটা নোট দিয়ে দিল।
টাকাগুলো না নিতে চেয়ে সে অভিমান করল। আর
কিছুক্ষণ পর আমার চিটির উত্তর চাইল।
আমি একটু আদর করে বললাম -চিজি তোমায় আমি খুবই ভালোবাসি।
তোমাকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি।
আরো অনেক অনেক......
চিঠির প্রসঙ্গে বললাম -প্রতিদিনতো দেখা হয়।
মনের কথাগুলো বলাও হয়। তাই চিটি লিখিনি।
এ কথা বলাতেই চিজি কেঁদে দিল।
আর বলল-তুমি আমাকে ভালোবাস না।আমার সাথে ছলনা করতেছ শুধু।
আরো অনেক কিছু। তাই চিঠি দিচ্ছ না। অনেক ক্ষণ কোনো কথা না বলে আমার হাত দু'তো ধরে মাথা নিচু করে রইল।
বুঝাতে চাইলেও বুঝাতে পারিনি। চোখ,নাক,মুখ মুছতে শুরু করল।
তারপর চিজিকে বললাম আমার একটা হাত ছেড়ে দাও। তোমার জন্য সুখবর দেবো। তবুও সে বিশ্বাস করল না।
অবশেষে একটা হাত ছেড়ে দিল।
তারপর প্যান্টের পকেট থেকে চিজির হাতে খামটি ধরিয়ে দিলাম।
তখন সে খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরতে চাইলো।
সাথে সাথে বললাম পাশে কেউ দেখে ফেলবে। জরিয়ে ধরো না।
পরে অনেক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল।চোখ,মুখ মুছতে মুছতে বলল তুমিই আমার জীবন। তুমি আমার স্বপ্ন। তুমিই আমার শ্রষ্টা। তুমি আমার সবকিছু।
আমার সামনে খামটি খুলতে চাইল। না খুলতে অনুরোধ করাতে ব্যাগের পার্সে ঢুকিয়ে নিল।
চিজিকে বললাম প্রায় ৫টা বেজে গেল তোমাকে সিএনজিতে তুলে দিতে হবে।চল।
চিজি আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাইল।
আমি না বলাতে সে আমার হাত ধরে উঠে গেল।
কলেজ গেইটে এসে চিজি'কে সিএনজিতে তুলে দিলাম।
খামটি পেয়ে চিজিও মনের খুঁশিতে চলে গেল।আর আমি হোস্টেলে চলে আসলাম।
                      পর্ব -৯
পরের দিন বৃস্পতিবার।
সকাল ৮টায় চিজি হোস্টেল রুমে এসে হাজির হল।
বলল শুভ সকাল।
আমিও উত্তর দিলাম শুভ সকাল।
আজ সে মহা খুশি। 'মা'য়ের আর্শীবাদ পেয়েছে তাই। আর
আমার জন্য একটা উপহার এনেছে। আমার হাতে দিয়ে বলল এখন খোলা যাবেনা।
আমিও অবুঝ শিশুর মতো করে উপহার না খুলে ব্যাগে দেখে রেখে দিলাম।
চিজি বলল-আজ কি পাক করেছ?
বললাম শুধু আলু ভাজি।
চোখের ইশারায়
বুঝলাম সে সকালে কিছুই খাইনি।
ডিমটি চিজির জন্য তাড়াতাড়ি ভাজি করে দিলাম।
আর দু'জনে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি দিয়ে খেতে বসলাম।
তার আলু ভাজি ভাল লাগছে না টের পেয় ডিম ভাজিটি তাকে দিয়ে দিলাম।
সে আমায় অর্ধেক দিয়ে দিলো।
তাকে বললাম তোমারতো আলু ভাজি খাওয়ার অভ্যাস নেই তুমি পুরোতায় খাও।সে তবুও আলু ভাজি খেতে চাইল। আর বলল তুমি খেতে পারলে আমি পারবোনা কেন?
তোমার সুখে-দুখে আমি। শুধু তোমার জন্য আমার জন্ম। তোমার ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
তোমাকে আমি খুবই ভালোবাসি।
আমি আবারও অবাক হয়ে
তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বললাম সত্যি কি তাই?
চিজি বললো- সত্যি,সত্যি,সত্যি।
গল্প করতে করতে ভাত খাওয়া শেষ করলাম।
এরপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে রওনা দিলাম।
যাওয়ার সময় চিঠির কথাগুলো সত্য কিনা জিজ্ঞেস করল।
তাকে বললাম চিটিতে যা লিখেছি সবি সত্যি।
কথা বলতে বলতে কলেজে পৌঁছে গেলাম।
ক্লাশ শুরু হতে আর বেশী দেরী নেই।

চিজিকে বললাম তুমিও ক্লাশে যাও।
সে বলল- বাংলা ক্লাশ।
না করলেও চলবে।
আর আমায় জিজ্ঞেস করল তোমার পথম ক্লাশ কি?
বললাম আমাদের রুটিনেও আজ প্রথম ক্লাশ বাংলা।
চিজি বলল-আজ বাংলা ক্লাশ না করলেও চলবে।
আমি বললাম আমি এখনো ক্লাশ মিস করিনি।
চিজি আমার কোনো কথা না শুনে আমার হাত ধরে গাছের তলায় নিয়ে গেল।
বলল-লক্ষী ছেলের মতো এখানে বস।
ক্লাশ মিস করতে পারবো না বলে
উঠে আসতে চাইলে সে অভিমান করে বসে রইল।
তাই আমারও কলেজ জীবনে ঐটি প্রথম
ক্লাশ মিস করতে হলো। আমি অদ্যাবধি ক্লাশ মিস করিনি।
সে আমার থেকে পাওয়া চিঠি পড়ে শুনালো।
চিঠিতে ছিল...
প্রিয়, চিজি,
তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি।
জানি তোমার যোগ্য নয়। তবুও ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
আমিও তোমারকে পেতে চাই জন্ম-জন্মান্তরে।
এ স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হবে কিনা জানিনা।
কারণ তোমার পরিবারে স্ট্যাটাস আর আমার পরিবারে স্ট্যাটাস আকাশ আর পাতালের সমান।
তোমার পরিবার মেনে নেবেনা।
আর গ্রামে গিয়ে তুমি আমার পরিবারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা সন্দেহ।
তাই তোমার সাথে সম্পর্ক করবো কিনা এ নিয়ে আমি মহা সমুদ্রে ভাসতেছি।
ভালো থেকো। শুভ কামনা রইল।
ইতি,
আমি।
                             পর্ব-১০
সকালে ক্লাশ শেষে দেখা হলো চিজি সাথে।
তখন আমি হোস্টলে আসতেছি।
চিজি আমায় ডাক দিয়ে বলল -কোথায় যাচ্ছ? আমাকে নিচ্ছ না কেন?
বললাম-দুপুরে খাবার খেতে।।
চিজি অভিমান করে বলল- আমারতো পেট নেই।তাই খাওয়ার রুচিও নেই।
চিজিকে বললাম চল হোস্টেলে এক সাথে খাবো।সে বলল আজ যাবো না।
আমি নাস্ট খেয়ে থাকবো।
বললাম-কেন?
সে বলল-আমাকে নেওয়া কোনো ইচ্ছে নেই তাই।
তার অভিমান দেখে আমি আর দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসলাম না।
তখন সে একাই ছিল। আমাকে বলল-যাও খেয়ে আছ।বিকালে তোমার ক্লাশ আছে।
না খেয়ে ক্লাশ করলে মন শরীর দুটোই দুর্বল হবে।
তাহার এমন অভিমানের কথা পেয়ে আমিও তার কাছে গিয়ে বললাম আজ আমিও খাবোনা।
তখন সে বলল-চল ক্যান্টিন থেকে হালকা নাস্টা করে আছি। ক্যান্টিনে গিয় হালকা নাস্টা খেয়ে নিলা।এরপর গাছের তলায় বসলাম।
চিজি আমার বলল-রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা
করার জন্য তোমাকে বলেছি।করেছ কি?
পতি উত্তরে মাথা নিচু করে বললাম করা হয়নি।
সে অনেকটা রাগ করে বলল-আজ বিকালে করে নেবো দু'জনে গিয়ে।
তাকে বললাম পরে করবো।তোমার দেওয়া সেই ৫০০ টাকা আমার খরচ হয়ে গেছে।তাই করা হয়নি।
চিজি বলল- তোমার টাকার চিন্তা করতে হবে না।আমি দেবো।
আজ বিকালে যাবো। আমি অনুরোধ করলাম আজ না কাল শুক্রবারে করবো।
আমাকে নেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করল।আমি গেলাম না।
কারণ আমার হাতে টাকা নেই।
যা আছে তা দিয়ে মাস চলতে হবে।
চিচিকে বললাম এসব বাত দাও।
ব্লাড টেস্ট যেকোনো সময় করা যাবো।
চিজি বলল কাল শুক্রবার নাস্টা করার সাথে নাথে বনরুপা লাইব্রেরী দোকানে আসবে।
সেখানো দেখা হবে। ব্লাড টেস্ট করার পর ঝুলনাত ব্রীজে যাবো।
পড়ে গেলাম আরো মহা ঝামেলায়।
আমার হাতকড়ি প্রায় শেষ।তবুও তাবে বললাম আসবো।
চিজি বলল- তোমাকে আমি জন্ম-জন্মান্তরে ক পেতে চাই।
তোমাকে ছাড়া আমি অচল জয়ে যাবো।
তুমি আমায় গ্রহণ না করলে আমি বিষ খেয়ে মেরবো না হয় অন্য পদ ধরবো।
যা তোমার কল্পনাও বাইরে ছিল।
পরক্ষনে দেখি নবাই নিজ নিজ বাসায় গেছে।
শুধু আমি আর চিজি হাছ তৈায় দেখলাম শুধু আমরা রয়েছি।
চিজিকে বললাম তুমিও যাও তোমার মা চিন্তায় থাকবে ।
যাওয়ার সময় চিজি আমার
হাতে দুটো চুমু দিয়ে বলল ভালো থাকিছ। কাল বনরুপায় দেখা হবে।
তোমায় রক্তের গ্রæপ পরিক্ষা করতে হবে। মনে রেখো কিন্তু।
                                      পর্ব-১১
হোস্টেলে ফিরতেই দেখি বিকাল প্রায় ৫টা বেজে গেছে।
হোস্টেলে বন্ধুরা হোস্টেলের মাঠে খেলা খেলছে।
হ্যাঁ আগে বলা হয়নি।
আমাদে বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই এসে গেছেন রাঙ্গুনিয়া থেকে ।
কলেজ কতৃপক্ষের সাথে কি যেনে একটা সমস্যার কারনে রাগ করে প্রায় বছর খানেক আগে বাড়ী চলে গেছে। আর সপ্তাহ খানেক আগে আবার হোস্টেলে এসেছে।
সেই সপ্তাহ খানেক ধরে আমার আর দুপুরে বা বিকেলে ঠান্ডা ভাত আর মাঝে মাঝে পচাঁ বাসি খাবার খেতে হচ্ছেনা। এবার দুপুরে আর রাত্রে গরম খাওয়ার খাওয়া হচ্ছে।
আরো পরে গেলাম এক সমস্যায়।
তখন হোস্টেলের ডাইল আমার মোটেই ভালো লাগেনি।
সপ্তাহ খানেক ধরে খেতে খেতে তাও অভ্যাসে পরিণত হলো।
আগামী কাল শুক্রবার খাবার মজা করবো, বিরানি, সাদা ভাত, মাছ,মাংছ দিয়ে মজা করে খাবো বলে ম্যাচ ম্যানেজারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আমাদের চাহিদা মতো ম্যাচ ম্যানেজার বিকালে মুরগী, মাছ কিনে আনলেন।
সেই মুরগীগুলো রেখে দিলাম স্টোর রুমে।
আমরা অনেক দিন ধরে মজার খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম।
তাই সবাই একটু হাঁসি-খুশিতে ছিলাম।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো।
মজার মজার খাবার খাবো।
যা অনেক দিন ধরে খাওয়া হয়নি।
আজ কলেজ হোলি দে। তাই সবাই একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠেছে।
আমার পাশে রুমে থাকতেন ম্যাচ ম্যানেজার।
 প্রতিমাসে একজন করে ম্যাচ ম্যানেজার পরিবর্তন করতাম।
সেই ম্যানেজারকে কাছে সাত সকালে এসে অভিযোগ দিলেন বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
দাদা দাদা করে ডাক দিয়ে ম্যানেজারকে নেপাল বড়ুয়া ডাকলেন।
তার শব্দে আমারও ঘুম ভেঙ্গে গেল।
নেপাল দা ম্যানেজারকে বললেন দাদা আমাদের স্টোর থেকে মুরগিগুলো চুরি হয়ে গেছে।
আমরা যারা সিনিয়র ছিলাম সবাই বলাবলি করলাম। তদন্ত করে বুঝতে পারলাম
আমাদের মুরগিগুলো শিয়াল মামা চুরি করেছে।
তারপর হোস্টেলের যারা থাকি (প্রায় ৩০/৩৫ জন) হবে।
আলোচনা করলাম কি করা যায়।
বড় ভায়েরা মানে আমরা যারা বিএ, বিএসসি,বিকম, পড়ি আর দু'একজন আছে যারা মাস্টার করতেছেন তারা মিলে পরামর্শ করে শিয়াল মামার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার ঘোষণা দিলাম।
হোস্টেলে কোদাল, কুন্তি নেই।
তাই আরো পরে গেলাম ঝামেলায়।
কোদাল, কুন্তির জন্য হোস্টেলে পাশে এলাকা কল্যাণপুর থেকে বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করলাম।

                          পর্ব-১২(শিয়াল মামর খোঁজে)

রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের পিছনে বিশাল এলাকা খালি জায়গা।
ঝোঁপ-ঝাড়ে পরিপূর্ণ সেই খালি জায়গাটি।
সেখানে রাত-দিন শিয়ালের বিচরন ভূমি।
 সন্ধ্যা হতে না হতেই ডাক মারে শিয়ালগুলো।
এমন কি মেঘলা দিনেও।
বৃহস্পতিবারে জমা রাখা মুরগিগুলো সেই শেয়ালগুলো চুরি করে খেয়ে ফেলেছে।
বলেছেন হোস্টেলের বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
আজ শুক্রবার বিরানি খাবার আশা ছিল। তাই বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবারে বিকালে
মুরগিগুলো আনা হয়েছে।
বাবুর্চি নেপালের খবর শুনে হোস্টেলে সবাই জড়ো হলাম।
 আজ যেহেতু শুক্রবার। কলেজ নেই।
কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ী থেকে আনা কোদাল, কুন্তি,  দা আনা হয়েছে।
আমার ক্লাশ মেট ছিলেনন স্বপন চাকমা, সুভাস কীর্তি চাকমা, বড় ভাই ছিলেন রুপায়ন চাকমা, ছোট ভাই ছিলেন দিগন্তু চাকমা।
এইচএসসির ছাত্র ছিলেন ত্রিরতন চাকমা, মিন্টু চাকমা, সুপ্রকাশ চাকমা, নিউটন চাকমা, অভিলাষ ত্রিপুরা, বাবুল চাকমা, অনিল জীবন চাকমা, রিন্টু চাকমা সহ আরো অনেকে।
 যাদের নাম এখন মনে নেয়।
হোস্টেলে আমরা প্রায় ৪০জনের কাছাকাছি ছাত্র ছিলাম।
আমরা কয়েকটা গ্রæপে ভাগ হয়ে শেয়াল খুঁজতে জঙ্গলে ডুকে পড়লাম।
এক গ্রæপের ছাত্ররা দেখলেন একটি শিয়াল ঘুমাচ্ছে।
সে শিয়ালকে দেখা মাত্র ২/৩ ছাত্র ঘুমন্ত অবস্থায় মেরে পেলেছে ওরা।
শুরু হলো আবার শিয়াল খোঁজার অভিযান।
পেলাম কয়েকটি শেয়ালের গর্ত।
এবার শুরু শেয়ালর গর্ত খুঁড়ানো।
বেশ কয়েকটি গর্ত খুঁড়ানো হয়েছে।
একটি গর্ত ২/৩ টি শিয়ালের 'ছা' পেলাম।
আবার ২টি গর্ত থেকে কয়েকটি 'ছা' পেলাম। সেগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে।
সেগুলো নিয়ে অনেকেই দুষ্টামি শুরু করেছে।
মেরে ফেলা শিয়াল আর 'ছা' গুলো আনা হয়েছে হোস্টেলের মাঠে।
কয়েকজন ছাত্র অতি উৎসাহিত হয়ে মৃত শিয়ালকে নিয়ে
কলেজ ক্যান্টিনে সামনে নিমগাছে বেঁধে ভাগ ভাতোয়ারা করেছে।
শুনেছে শিয়ালের মাংস খেলে নাকি বাত, শূলনি ছাপানি ভালো হয়।
তাই শিয়ালের মাংস মূহুর্তে শেষ।
আর শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য বড় শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
শেয়ালদের কারনে আমার আজ বনরুপায় যাওয়া হয়নি। তাই রক্ত পরীক্ষা করাও হয়নি।

পর্ব-১৩(শিয়াল ছা পালানো)

শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য, মা শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
রাত হলে মা শিয়ালের ছা'গুলো বেঁধে রাখার রুমে আশেপাশে ঘুরতে থাকে।
সে সুযোগে মা শিয়ালদের মেরে ফেলার চেষ্টা করি।
আর তাই আমরা পালাক্রমে ছৌকি দিই। আর বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়াতো প্রায় সময় থাকে।
শিয়ালের ছা'গুলোকে আমরা মুরগির নাড়ি-ভূড়িগুলো খেতে দিই।
শিয়ালের ছা'গুলো দিনভর ডাকাডাকি করে আর রাত হলেতো বেশী।
তাদের ডাক শুনে মা শিয়ালগুলো অছে।
অনেক বার চেষ্টা করেছি মা শিয়ালগুলোকে মেরে ফেলার। পারিনি।
কয়েকটা দিন রাখার পর শিয়ালের ছা'গুলো আমাদের দেখলে পাশে আছে।
পোষ মানতে শুরুকরেছে। শিয়ালের ছা'গুলো হোস্টেল রুমে আছে জানতে পেরে কলেজের অনেক বন্ধু-বান্ধবী দেখতে এসেছে।
খাবার খাওয়ার জন্য সবসময় ডাকাডাকি করে আর রুমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হোস্টেলের চারিপাশ।
হোস্টেল থেকে কলেজের দূরত্ব বেশী হলে ৫০০ গজ হবে।
হোস্টেল থেকে কলেজে যাচ্ছি। কয়েকজন বান্ধবী মিলে সে পথের ধারে তারা আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে কলেজ গেলাম। সেও কিছু বললো না।
শুক্রবারে শিয়াল খুঁড়ার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য বনরুপায় যাওয়া হয়নি।
মনে হয় তাই সে আমার উপর
অভিমান করে বসে আছে।
ক্লাশ করার পর দুপুেের খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসতেছি।
ঠিক সে সময় পথের ধারে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা তিন বন্ধু যাচ্ছিলাম হোস্টেলে।
পিছনে আমি। বন্ধুগুলো থাকার কারনে আমি তাকে কিছু বলিনি।
সে রাগ করে আমার হাত ধরে বলল-কি হয়েছে তোমার?
কালকে বনরুপায় আসনি কেন? তোমার অপেক্ষায় অনেক প্রায় ২ ঘন্টা ছিলাম।
এত অহঙকার কর কেন?
বললাম-কিছুই হয়নি। শরীর দুর্বল লাগছে।
এই বলে হোস্টেলে হেলাম।
আর সে রাগ করে পথের ধারে দাঁড়িয়ে রইল।
বললাম হোস্টেলে চল।আসলো না।খুব অভিমানে রইল।
পর্ব-১৪

দুপুরের খাওয়ার পর কয়েজন মিলে শিয়ালের ছা গুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালের ছা গুলো দৌঁড়ে হোস্টেলে জঙ্গলে চলে গেল আর ডাকাডাকি শুরু করল।
সে দিন আকাশ মেঘলা ছিল।
ছা'গুলো ছেড়ে দেওয়ার পর বিকালে কলেজে গেলাম। ক্লাশ শেষে বিকালে হোস্টেলে চলে আসলাম।
বিকালে তার সাথে দেখা হয়নি। পরের দিন কলেজেও
তাকে তেমন সময় দেওয়া হয়নি।
তাই হয়তো অভিমান করে চলে গেছে।
গত শুক্রবারে শিয়ালের ছা গুলো ধরার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ জানা হয়নি।
তাই বনরুপায়ও যাওয়া হয়নি।
পরের দিন কলেজে যাওয়ার পথে দেখা হলো চিজির সাথে।
দেখা মাত্র সে আমার পাশে এসে হাত ধরে গাছতলায় নিতে চেয়েছিল।
ক্লাশ সময় হওয়ায় তার সাথে যাওয়া হয়নি।
কলেজে ২য় পিরিয়ডে ক্লাশ চলার সময় কি যে গন্ডগোল শুরু হয়েছে।
ক্লাশ শেষ না করে আমি ক্লাশ রুম থেকে বাইরে আসলাম।
বাইরে দেখি মারামারি শুরু হয়েছে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আর ছাত্রলীগের ছেলেদের মধ্যে কোন একটা মহিলা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়েছে।
পরবর্তীতে পাহাড়ী-বাঙালী সম্প্রদায় পর্যন্ত চলে গেছে।
তখন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন
ড. এনায়েতুর রহমান।
কিছুক্ষণ পর কলেজ মাঠে পুলিশ এসে গেল।
হোস্টেলের ছাত্ররা সবাই হোস্টেলে চলে আসলাম।
তখন কলেজ গেইট এলাকার পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত হয়েছে।
শুনেছি কে বা কারা কলেজ গেইটের দোকানগুলো আগুন দিতে চেয়েছিল।
পরিস্থিতি খুব বেশী উত্তপ্ত হওয়ায় অধ্যক্ষ মহোদয় অনিদিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের ঘোষণা দিলে।
আর আমাদের হোস্টেলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিকালের মধ্যে হোস্টেল ত্যাগ করতে হবে বলে হোস্টেলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আমরা যারা খাগড়াছড়ি থেকে হোস্টেলে রয়েছি তারা অধ্যক্ষ সারের কাছে গিয়ে শুধু রাত্রি যাপনের জন্য অনুমোদন পেয়েছি।
তাও অনেক কষ্টে।
পরের দুই দিন হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় হোস্টেলে ছাত্ররা(প্রায় ২০জনের কাছাকাছি) লঞ্চে করে নানিয়াচর হইয়া মহালছড়ি আমলাম।
সেদিনই প্রথম নানিয়াচর বাজার দেখলাম।তাও আবার লঞ্চ থেকে।
তবে অধ্যাবধি যাওয়া হয়নি নানিয়াচরে।
১৯৯৭ সাল পার্বত্য চুক্তির কাছাকাছি হওয়ায় ১৫ দিনপর আমাদের কলেজ খুলে গেছে।
কলেজ খোলার ১ দিন আগে হোস্টেলে গেলাম। তখন হোস্টেলটি নোংরায় পরিপূর্ণ। হোস্টেলে চারিদিক পরিস্কার করতে প্রায় কয়েক ঘন্টা চলে গেলে আমাদের।
কয়েক দিন পরে আমার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারনে কলেজে গিয়ে চিজির সাথে দেখা হলেও আমি সময় দিতে পারিনি।
তাই সে খুব বেশী অভিমান করে আছে।
এক সপ্তাহ পর ৩য় বর্ষের পরীক্ষা হলো।
উত্তীর্ন হয়ে ৪র্থ বর্ষে ভর্তি হলাম।
চলমান-

পত্থম লেন্

পত্থম লেন্
নূতন ধন চাকমা

এক সমারে ডাঙঅর ওয়েয়,
এক সমারে স্কুলোদ যিয়েয়,
সেনে হোচ পাঙ তরে।
তুই অলে ম্ পত্থম লেন্,
যদি ন্ পাঙ মুই তরে।

এক আদাম্ম্যে এলঙ তরলোয়,
হোচ পা-পিও বেজ এহল।
তরে সুগে রাগেবার চেরেত্তা গত্ত্যে মর
তরে পানা ন্ অহল।

সঙ-সমারে স্কুলোদ যেদঙ,
অাজি-হুজি গুরি।
স্কুলোদ যাদে গল্প দিদোঙ,
হুরো হুজ্জ্যে গুরি।

হদক স্ববন দেক্কেয় অামি,
পা-পি অবাত্ত্যেয়।
সে স্ববন ভাঙি যিয়ে মর,
তরে ন্ পেনেয়।

জীদ গুরি লেঘা শিঘিদুঙ,
তরে পেবাত্ত্যেয়।
ত্ অাজায় এলুঙ মুই,
সংসার দুগোদ পরিনেয়।

তরে গমে রাগেবার
 হুব চেরেত্তা মুই গোজ্জোঙ।
তরে ফেলেয় সেনে মুই,
লেঘা শিঘা যেয়োঙ।

সে সুযুগে বৌ যেয়োজ,
মন্ অাজা পুরেয়োজ।
গম, লক্কী, শীলবান অা নীতিবান,
নেক এক্কো তুই পেয়োজ।

গাড়ী-বাড়ি বেগ ওয়ে তর,
অাগে অারো মন্ সুখ।
তরে অারেয় বাজ্জ্যে মর,
জনমত্ত্যেয় দুগ।

সরকারী চাগুরি গরজ তুই,
ওয়োজ অারো বড় মানজ্জো মোগ।
ইত্তুন বেজ সুগী অ্ তুই,
জীবনত্ত্যেয় ন্ তায় যেন হন মন্ দুগ।

দুগ বাদে সুখ নেয়,
মর জীবনদ।
জীবনত্ত্যেয় সুখ ন্ জুদিবো মর,
এ ভব সঙসারদ।

অক্ত অক্ত ধূন্ধূগ হাঙ
হবাল বিলেয় নেয়।
সঙসারদ জন্মেয়োঙ মুই,
ভালক পাপ হরিনেয়।

জীবনান মর দুক্ক্যে জীবন
গরিবারও হিচ্ছু নেয়।
অারো বেজ দুক্ক্যে ওয়োঙ,
তরে অারেয়নেয়।

তরে চেবার অক্ত অক্ত
তোমা সিন্দি এজঙ।
হবাল মর গম নয় হেনেয়,
তরে ন্ দেগঙ।

দেমও হেনে হ্?
তুই অল বড় মানজো মোগ,
হারাক্কায় হন্ ন দেগে।
পূর্ণিমা জুন পহরত্তুন বেজ দামী তুই,
সেনে তাজ ত্ দগে।

৩০ দিন পর দেগা যায়,
পূর্ণিমা জুন পহরান।
বজর ছ'মাজেও দেগা ন্ পায় তরে,
গমি জাদি যোগ তর জীবনান।

গজেনত্তুন বর মাগি দোঙ নিত্ত্যো,
সুগে যেন থেয় পারজ।
হন্ দুগ নেয় গরি তুই,
জীবনান যেন হাদেয় যেয় পারজ।

=======
পুর-১৪.১০.২০১৯ইং

Sunday, October 13, 2019

"থুম ন্ উয়ে হোচপানা"

"থুম ন্ উয়ে হোচপানা" 
নূতন ধন চাকমা 

 মরি যেম জনম লোম্বি, 
এ জনমর অাগোজ ন পুরেয়ে হোচপানা,
অারো তরে গোজেম্বি। 

তুই যুদি ন্ গজজ, 
মন্ দুগোদ অারো থেম। 
জন্ম-জন্মান্তরে তরে পেবার, 
হোচপানা পারমি পুরেয় যেম। 

তুই এ্যালে্ মর অাগোজোর, 
চিদোধ বান্ন্যে ধনপুদি। 
পা-পি অবার তরলোয় অামি, 
স্ববন দেদিদোঙ জুর গরি। 

মুইও এ্যালুঙ ত্ অাগোজোর, 
চিদোধ বান্ন্যে রাধামন। 
সুগে এ্যালঙ দ্বি'জনে অামি, 
হ্ধক পুরেবার চিয়েয় অামা মন। 

মন্ অাজা ন্ পুরোয় অামার, 
গোজেনে বর ন্ দে। 
পা-পি অবার তরলোয় অামি, 
দেক্কেয় হ্ধক স্ববনে। 

মন্ অাজা পুরেবার, 
গম জামেয় মনে গুরি অাগে অাগে 'বো' যেয়োজ। 
সুগোর অাজায় 'বো' যেনেয়ও, 
মন্ দুক্কান অাহ্ধে ধুরি তুই লোয়জ। 

মন্ দুগোদ বেজ ন্ থেম, 
সুগে সঙসার গরি যেজ। 
ধুন্ধুগ অার ন্ গরিজ, 
গম মনে্ জীঙগানির নিজেনী হাদেবার 
যোগা যেজ। 

সুগোর অাজায় 'বো' যেয় নেয়ও, 
মন্ দুগোদ তুয়ো তাজ। 
হোচপানা'র পারমি পুরেয় তুই, 
পর জনমে যেন মরে পাজ। 

সিনি শুনিলে চিদ পুরে মর, 
অাঙি যায় পরানান। 
গরি বার ইক্কে হিচ্ছু নেয়, 
বৃথা ওই যেলগোই তর-মর জীবনান। 

পর জনমে পা-পি অবার, 
দশ পারমি পুরেয় যেজ। 
মন্ দুগোদ ন্ থেনেয়, 
গোজেনত্তুন বর মাগি যেজ। 

তরে মুইও হোচ পেয়োঙ, 
হোচ পেয় যেম জনমান। 
মুরিবার হাদাল্ল্যেও বর মাগি যেম, 
পর জনমে তরে যে তরে পাঙ। 

তত্ত্যেয় বিলি মর এ্যা্ হোচপানা, 
থুম অহ্ধ নয় হন্ দিন। 
বিজুম যেলে মন্ দুগ ন্ পেজ তুই, 
ঈদোধ উদিলে তরে নাঙ গিনিম। 

এ জনমে পা-পি ন্ অহলঙ, 
গরিবারও হিচ্ছু নেয়। 
পর জনমে তরে পেবার, 
দশ পারমি পুরেয় যেম। 
====== 
পুর- ১২।১০।২০১৯ইং।

যেভাবে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হলাম

যেভাবে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হলাম



নূতন ধন চাকমা, সংবাদকর্মী।
পর্ব -১
আদো আদো মনে পড়ে
সেই ১৯৮৬ সালের কথা। তখন মায়ের দুধ পান করতাম। স্কুলে যায় কিনা মনে নেয়।
তবে বাসায় বাল্য শিক্ষা বইটি শেষ করা হয়েছে। ৭ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলাম।
প্রথম বড় বোন ২টি। সে পরে আমার বড় ভাই পভূ মুনি চাকমা। এর পর বড় বোন ৩টি। আর সবার ছোট আমি। বাবা'র মা অর্থাৎ আমার নানু আমার নাম দিলেন হরি মুনি চাকমা। আর আমার দাদু মা'র বাবা নাম দিলেন নূতন ধন চাকমা। আমার বাবারা ছিলেন তিন ভাই এক বোন। আর মা শুধু একা। কোনো ভাইবোন নেই। তাই বড় ভাইসহ ৫ভাই বোন হওয়ার পর মধুমঙ্গল পাড়া ত্যাগ করে বাবা-মা চলে যান খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার শিব মন্দিরের পাশে জোর মরম গ্রামে( বর্তমানে রবিধন পাড়া)। সেখানে আমার আর বড় বোন সাগরিকা চাকমা ও আমা র জন্ম হয়। কয়েক বছর থাকার পর বাবা-মা আবার পানছড়ি উপজেলার পুরাতন গ্রামে চেঙ্গী ইউনিয়নে মধু মঙ্গল পাড়ায় আছে। মধু মঙ্হল পাড়ায় বাপের তোলা ঘর-বাড়ীতে এখনো থাকি। দু'টো নাম থেকে স্কুলের নাম হলো নূতন ধন চাকমা নামে।
১৯৯৮৬ সাল।গ্রামে তখন কোনো স্কুল ছিলনা। চেঙগী নদীর ঐ পাড়ে একটা প্রাইমারী স্কুল ছিল। দাদুরা নাকি তখন ছিলেন নদীর ঐ পাড়ে অনিল কার্বারী পাড়ায়।আপনর দাদুর নাম ছিল জয় মুনি চাকমা। বড় দাদু নাম ছিল কিস্ট মুনি পাড়া। দাদুরা ছিলেন সচেতন। ছিলেন প্রভাবশালীও। তাই বড় দাদুর নামে প্রাইমারী স্কুলের নাম বসে কিস্ট মুনি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
তখন চোর-ডাকাতের প্রভাব ছিল।সে ভয়ে আজুকে নদীর একুলে অর্থাৎ মধু মঙ্গল পাড়ায় স্থানান্তরিত হতে হয়েছে স্ব-পরিবারে। চেঙগী নদীটি ছিল স্রোতম্বিনী। চলতো তখন নৌকা। একটু বৃষ্টিতে নদীর দু'কুল বেগে যায়। তাই স্কুলে যেতে বারন করে সবাই। ছোটকালে স্কুলে যাওয়া হয়নি। সে চিন্তা করে গ্রামে একটি প্রাইমারী স্কুল তোমলার উদ্যোগ নেয় গ্রামের লোকজন। স্কুলের নাম দেয় মধু মঙ্গল পাড়া বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা তখন এসএসসি পাস করেছে। সে শিক্ষিত হওয়ার সুবাদে বাল্য শিক্ষা শেষ করার পর ১ম শ্রেণি আর ২য় শ্রেণি না পড়ে ১৯৮৬ সালে সরাসরি ৩য় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেয় বড় ভাই। এর পর শুরু হয় স্কুল জীবন।তখনও আমি মা’য়ের দুধ পান করি।
স্কুলে প্রথম শিক্ষা গুরু ছিলেন আশুতোষ চাকমা। সে এসসসি পাস করেনি। তবুও খুবই ভালো পড়াতেন। এসএসসি পাস না করায় স্কুলের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার পরও সে শিক্ষক হতে পারেনি। স্কুলে চেয়ার টেবিল ছিল না। বাঁশ দিয়ে চেয়ার, টেবিল, হাই বেঞ্চ ও ল বেঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। বসলে প্রায় সময় পেশিগুলো বাঁশে চিপায় পড়তো।এভাবে বিরক্ত হতে হতে একটু বড় হয়ে কিষ্ট মুনি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সে বছর পার্বত্য পরিস্থিতির কারনে অনেক লোক ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। শরনার্থী হওয়ার জন্য আমাদের পরিবারও যেতে হয়েছে। ভারতের সীমান্তবর্তী বাঘমারা এলাকায় আশ্রয় নেয় ১ সপ্তাহ পর্যন্ত। বাঘমারা যাওয়ার সময় পুরো পথ কিছু হেটে, কিছু পথ মায়ের কাল্লোঙ (বাঁশের তৈরী এক ধরেনের আদিবাসী সরঞ্জাম) এর উপরে, কিছু পথ বড় ভাই প্রভূ মুনি চাকমার কাঁধে করে যেতে হয়েছে। তখন খুবই ছোট ছিলাম। ছিলাম সবার আদরের।
হ্যা,ঁ বাঘমারা অর্থাৎ যেখানে শ্রীযুক্ত বাবু- মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার শ্মশ্বান ছিল। তখন তাঁর শ্মশ্বান দেখা হয়েছে অনেকবার। চারিদিকে বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। আর ছিল প্রকৃতির পাথর।
চলমান-২
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সেই বাঘমারা। সম্ভবত অনেক অনেক আগে সে স্থানে বাঘ মারা হয়েছে। তাই ঐ স্থানটি নাম বাঘমার রাখা হয়েছে। যেখানে জুম্ম জাতির অগ্রদূত সেই শ্রীযুক্ত বাবু- মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা শ্মশান ভূমি রয়েছে।
চারিদিকে পাহাড় আর পাহাড়। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ী ছড়া। সেই ছড়ার পাশে শ্রী যুক্ত বাবু-স্বর্গীয় মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার শ্মশান ভূমি। তখনকার সময়ে  শ্মশানটি রাখা হয়েছে বাঁশের বেড়া দিয়ে। বেড়ার ভিতর প্রকৃতির ছোট ছোট পাথর। এটা বিগত ৩৩ বছর আগের কথা। অর্থাৎ ১৯৮৬ ইং সালের কথা। মনে হয় এখন আর সেই বেড়াগুলো আর পাথরগুলোও সেখানে নেই।
ঠিক বিঝুর পূর্ববর্তী সময়ে যেতে হয়েছে আমাদের। তাই সে সময় পাওয়া যেত ঘড়া 'বাচ্ছুরি'। আমরা সেই ঘড়া বাচ্ছুরি খোঁজার জন্য মিঃ লারমার শ্মশানের পাশে বড়দের সাথে বাচ্ছুরি খুঁজতে যেতাম।
যাওয়া হয়েছে অনেক বার। বড় জনের আমাদের বলতেন শ্মশানের ভিতরে পা না দেওয়ার জন্য।
আর অনেক অনেক  মানুষ তার শ্মশানে গিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা করে হাত জোর করে প্রণাম করত। মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রণাম করত। অনেকের চোখে জ্ল আসতো। তাঁকে ম্মরণ করে করে বিলাপ করতো। বলতো তিনি খুবই মহৎ মনের মানুষ ছিলে। ছিলেন অমায়িক, মৃতভাষী,তিনি নিজেই প্রাণী হত্যাও করতেন না। থাকতেন খুবই সাদাসিদে ভাবে। মাঝে মাঝে নাকি ছিঁড়া কাপড় দিয়েও থাকতেন। তিনি যে কুয়ায় স্নান করতেন সে কুয়ায় থাকতো কাঁকড়া, মাছ বেগেনা। সেই মাছ,কাঁকড়া গুলোকে খাবার দিতেন। সে সব প্রাণীদের না মারার জন্য তাঁর সাথে থাকা কর্মী সব সময় বললেন। সেই শ্মশানের পাশে পাহাড়ে ছিল তাঁর থাকার 'ব্যারেকটি। তিনি নাকি ব্যাক্তিগতভাবে ধার্মীক ছিলেন। এসব লোক মুখে শোনার কথা।
আমি তখন ছোট ছিলাম। ছোট একটা 'দা' নিয়ে বড়দের সাথে 'ঘড়া' বাচ্ছুরি খুঁজতে যেতাম। কিছু পেতামও। আর কুড়ে নিয়ে আসতাম জঙ্গলী আলু। তবে খুব বেশী পেতাম না। হ্যাঁ, বলা হয়নি আমাদের পরিবারের সদস্যার শরনার্থী হওয়ার জন্য গেলেও বাবা যাননি। তিনি মা, মাটি আর মাতৃভূমির টানে বাড়ীতে রয়ে গেছেন। বাবা'র জন্য 'মা' সব সময় চিন্তায় থাকতেন। সেখানে আমাদের চাউলগুলো প্রায় শেষের পথে ছিল। তাই বাবা ২ দিন পর চাউল নিয়ে সেই বাঘমারায় গেছেন। দুপুরে আবার ফেরৎ এসেছেন।
বাঘমারা থেবে কয়েক কিলোমিটার গেলেই নাকি পৌঁছে যাওয়া যায় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে।  প্রতিদিন হাজার জাজার মানুষ যাচ্ছে ভারতে শরনার্থী হতে। আমাদের তখনো যাওয়া হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের জন্য বাঘমারায় প্রায় এক সপ্তাহ থাকতে হয়েছে আমাদের।
আহারে জীবন!  সবাই চলে যাচ্ছে শরনার্থী হতে।
পর্ব -৩
প্রতিদিন শত শত পরিবার ভারতে যাচ্ছে বাঘমার পথ দিয়ে।  আশ্রয় নিচ্ছে শরনার্থী হিসেবে। সে এক করুন কাহিনী। 
আহা! মানব জীবন!
কেউ ফেলে যাচ্ছে আপন আত্মীয়-স্বজন। প্রায় সবাই যাচ্ছে চোখের জল ফেলে ফেলে চোখ মুছে মুছে।
বিদায় নিচ্ছে আর বলছে কাকা-কাকি, মামা-মামি, দাদা-দিদি যদি বেঁচে থাকি দেখা হবে কোনো এক সময়। এভাবে বলে বলে একে অপর থেকে বিদায় নিচ্ছে। আবার, কেউবা বাঘমারায় রেখে যাচ্ছে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি।  আহা! স্বপ্ন কত? বলছে কাল না হয় পরশু নিতে আসবো। কত কিছু স্বপ্ন তাদের। কেউতো আর আত্মীয়-স্বজন খোঁজ নিতে আসতে পারছে না। কেউ গরু-ছাগল নিতে আসতে পারছেনা।
কার গরু-ছাগল কে দেখে?
নিজে বাঁচতে পারছেনা আবার গরু-ছাগলের চিন্তুা? যে দিন আমরা বাঘমারায় আশ্রয় নিয়েছি সে দিন বাঘমারার ছড়ার পাশে বাঁশ পাতা, কলা পাতা আরো বিভিন্ন ধরনের লতাপাতা দিয়ে আমরা ছোট ছোট খামার করেছি। সে সব খামারে মধু মঙ্গল পাড়া, অনিল পাগা, মুনি পাড়া, খেদার ছড়া পাড়া, কিনাধন বৈদ্য পাড়াসহ অনেক পাড়ার মানুষ বাঘমারায় অবস্থান নিয়েছি।  অবস্থানের তিন দিনের মাথায় গণহারে শুররু হলো ডায়রিয়া, সদ্দি, জ্বর, ম্যালেরিয়া। আমাদের দেখার কেউ নেয়। পার্টি(জেএস্েস)থেকে কিছু কিছু ঔযুধ দেওয়া হয়েছে।যা পর্যাপ্ত নয়। সে ঔযুধ দিয়ে কি আর হয়? দেখেছি কয়েক জনকে বিনা ঔযুধে মরতে। জ্বরের পরিমাণ বেশী হওয়ায় আমার এক ভাগিনা চোখ-মু উলোত-পালত করছে।আর কি যেন আবুল –তাবুল বলছে।  আর ২/৩ মিনিট পর জ্ঞান হারাচ্ছে। শুরু হয়েছে কান্নাকাটি। সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে। সেই ভাগিনাটির নাম ফেলা রাম চাকমা। বর্তমানে সে অটোরিক্সা সিএনজি চালিয়ে জীবন নির্বাহ করছে। ডায়রিয়া প্রকোপ এত ছিল যে কমবেশী সবাই আক্রান্ত হয়েছে। তা থেকে কেউ রক্ষা পায়নি। চোখের সামনে অনেক লোক মারা গেছে। স্মৃষ্টিকর্তা সহায় ছিল বলে আমরা বেঁচে গেছি।
কার দুঃখ কে দেখে?
ডায়রিয়ার পরিমাণ বেশী হওয়ায় একজন লোক তার মা'কে ভারতে নিতে পারেনি। শুধু তার পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারতে চলে গেছে।  স্মৃষ্টি কর্তার আশায় নিজের মা'কে রেখে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে 'মা' কাল তোমাকে নিতে আসবো।
ঐ লোকটি যাওয়ার দু'দিন পরেও মাকে নিতে আসেনি।
ডায়রিয়া কিছুটা ভালো হওয়ায় সে বিভিন্ন পরিবার থেকে খুঁজে খুঁজে ভাত খেত। আর বলত ’গুরো ধরি ধরি’ হেম। সে বৃদ্ধা মহিলাটি ছিল ধাত্রী। তাই সে গুরো ধরি ধরি হেম কথাটি বলত। অর্থাৎ সে ধাত্রী করে করে খাবে।
আমি ছিলাম ছোট।আমার বড় বোন আর আমার কাকাতো দু'ভাই ও বোন ঐ বৃদ্ধা মহিলাটির ভয়ে ঘর থেকে বের হতাম না। ছোট ছিলাম বিধায় আমরা বুঝতাম না। মনে করতাম আমাদেরকে ধরে ধরে খেয়ে ফেলবে।
 পর্ব -৪
বাঘমারা ফেলে যাওয়া সেই ধাত্রী এখনো আছে ছেলেয় আশায়।প্রহর গুনছে কবে নিতে আসবে তার ছেলে। তিন দিনের মাখায়ও আসেনি তাঁকে নিতে।  পাখি ডাকা ভোর সকালে বিলাপ করছে আর বলছে। এটা গ্রাম নয়।এখানে আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেয়। কে দেখবে আমার?  কে দেখাশোনা করবে?  কে লালন পালন করবে আমায়?
নাতিগুলোর জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছে। বয়স বেশ হয়েছে।  কাজও করতে পারবো না। আমার কপাল এত খাারাব কেন? জীবনে কি পাপ করেছি আমি? কি পাপের ফলে আজ আমার এ অবস্থা হলো। এভাবে বিলাপ করছে আর অঝোরে কান্না করে করে থাকে। যা শোনা যাচ্ছে আমাদের ঝুঁপড়ি কুড়ে ঘর থেকেও। এরপর থেকে ঐ ধাত্রীর নাম রেখে দিলাম আমরা 'ফেলেয় যেয়ে' বুড়ি ।
সকালে ভাত খাওয়ার আগে আমাদের কুঁড়ে ঘরে ভাতের প্লেট নিয়ে হাজির হলো  ফেলেয় যেয়ে বুড়ি। বলছে-আমাকে কিছু ভাত দেন। এরপর পাশে ঝুঁপড়ি ঘরে। এভাবে ভিক্ষা করে করে চলছে সেই বুড়ি। আমাদের ঘরে ভাতের জন্য আসায় সময় আমি খুব ভয় পেয়েছি। মনে করেছি আমাকে খাওয়ার জন্য এসেছে। সব সমময় মা'য়ে পাশে পাশে থেকেছি। কারণ সেই বুড়ি বলেছে 'গুরো ধুরি ধুরি হেম'। মানে ধাত্রী করে করে খাবে। সে কথা তখন বুঝায় সময় আমার হয়নি। তাই তাকে দেখলে প্রচুর ভয় পেতাম। বুড়ি চলে যাওয়র পর 'মা' আমাকে বুঝালেন সে তোমাদের ধরে ধরে খাবে না। সে হচ্ছে ঐঝা'/ধাত্রী। তখন আমার ভয় কেটে গেছে। খাবার খাওয়ার পর আমরা আমার গেলাম বাচ্ছুরি খুঁজতে। গেলাম সেই মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা শ্মশ্বানের পাশে। সাথে নিয়ে হেলাম কিছু সরিষার তেল। বাঁশের কুপি বানিয়ে সে উপরে তেল আর টেনা দিয়ে বাতি জ্বালিয় আমরা মানবেন্দ্র লারমার শ্মশ্বানে বাতি দিয়ে প্রণাম করলাম। এরপর আমরা বাচ্ছুরি খুঁজতে সেই পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে গেলাম। বেশ কিছু বাচ্ছুরি, কাঁকড়া,টেঁকি শাক নিয়ে বাসায় ফিরলাম। এসে দেখি আমাদের পাশ দিয়ে শত শত মানুষ ভারতে যাচ্ছে শরনার্থী হতে। চলে গেলে আমাদের সাথে থাকা অনেক পরিবারও। আমাদের ঝুঁপড়ি ঘর গুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। অর্ধেক পরিবার ভারতে গেছে শরনার্থী হতে। আমরা আছি বাবা'র অপেক্ষায়। এদিকে আমাদের ভাতের চাল শেষ হওয়ার পথে। বাবা একদিন পর আসার কথা এখনো আসেনি। আগামী কাল না আসলে আমাদেরকেও উপাস থাকতে হবে।
পর্ব-৫
অর্ধেক পরিবার ভারতে যাওয়ার আমাদের ঝুঁপড়ি কুড়ে ঘরগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে।
আমরা আছি বাবা'র অপেক্ষা।
ভাতের চাল শেষ হওয়ার পথে। বড় জোড় ৪/৫ বেলা খাবার হবে। মা আছে চিন্তায়।
বাবা আমাদের সাথে বাঘমারায় আসেনি। মা,মাটির টানে আমার বড় বোন পভূ লতা চাকমাকে নিয়ে মধুমঙ্গল পাড়ায় রয়ে গেছে।এদিকে জমিতে ধান ফেঁকে গেছে। গ্রামে নাকি ৩/৪ টি পরিবার রয়ে গেছে। তারাসহ বাবা আর বড় বোন একটা বাড়ীতে থাকে।
সবাই মিলে ধান কাটতে যায়। গরু ছাগলগুলো দেখাশুনা করে। বাজারে ধানের আঁড়ি(১০কেজিতে এক আঁড়ি) নাকি ২০/৩০ টাকাও বিক্রি হয় না। আর চাউল কেজি প্রতি ৫টাকাও বিক্রি হচ্ছে না।
আমাদের ঘর-বাড়ী আর বাগানগুলো প্রতি পক্ষের লোকেরা বাবা আর বড় বোনের চোখে সামনে ভেঙ্গে দিয়েছে আর মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। তারা দূর থেকে তা দেখেছে। ঘরবাড়ী ভেঙ্গে দেওয়ার সময় বাবা আর বড় বোনের প্রতি পক্ষদের কাছে আসার সাহজ পায়নি।
৩ দিনের মাথায় বাবা আর বড় বোন চাউল নিয়ে বাঘমারায় এসেছে। আর হাজার খানেক টাকা মা'র কাছে জমা দিয়েছে। বড় বোনের কাছ থেকে ঘরবাড়ী ভেঙ্গে দেওয়া লুটপাত করার কথা শুনেছি।
ঘর-বাড়ী ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় আমাদের হাতে তেমন টাকা-পয়সা ছিল নাহাতে টাকা পয়সা নাই। কিভাবে ভারতে যাবো। কিভাবে শরনার্থী হবো। যাওয়ার সাথে সাথে ছেলে-মেয়েরা কি খাবো।এ সব সলা পরামর্শ করছে বাবা আর মা।
ভারতে শরনার্থী হতে যাবে কি যাবে না এ নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে গেছে তাঁরা। থাকলে কিভাবে থাকবে এখানে। সবাইকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে শরনার্থী করানোর জন্য।
দু'একদিন পর সবাইতো চলে যাবে শরনার্থী হতে। এখানো থাকলে আমাদেরও শরনার্থী হতে যেতে হবে। শরনার্থীতে না যাওয়ার বিকল্প পথ খুঁজতেছে বাবা।
এদিকে দুপুরে সেই ধাত্রীটি আবার ভাত খুঁজতে এসেছে আমাদের কুঁড়ে ঘরে। মা' তাঁকে এক প্লেট ভাত আর তরকারী দিলেন। আমার, আমার বড় এক বোনে ডাইরিয়া হয়েছে। নেই কোনো ঔযুধ। শুধু গরম পানি আর জঙ্গলের লতাপাতা দিয়ে বানানো ঔযুধ খেয়েছি। সৃষ্টিকর্তা সহায় হওয়ায় আমরা ভালো হয়েছি। সেই দুঃখের সময় কিনা ধন বৈদ্য পাড়ার এক বুড়ো লোক একটি রেডিও নিয়ে গেছে। সেই বুড়ো লোকটি অনেক বড় বড় করে গান আর খবরগুলো শুনে। তাঁকে অনেকই বলেছে বড় বড় করে গান না শুনার জন্য। সে কারো কথা শুনেনা।সে সব সময় বড় বড় করে গান শুনে।বুড়ো লোকটির পাশে ঝুঁপড়ি ঘরে ডাইরিয়ায় একটি শিশু মারা গেছে। তার আত্মীয় -স্বজন কান্নাকাটি করছে আর বিলাপ করছে। তারপরও ঐ বুড়ো লোকটি গান শুনছে।সে এক মহা বিরক্তিকর। এদিকে ৩ দিনের মাথায়ও ঐ ধাত্রীকে নিতে আসেনি তাঁর ছেলেটি।তাই সেই ধাত্রীটি কপালে হাত দিয়ে বলছে বুড়ো বয়সে এ দুঃখে পড়ার জন্য ছেলে-মেয়ে বড় করেছি।
হায় কপাল আমার! ভগবান, ইশ্বরকে ডেকে ডেকে এ সব বিলাপ করছে।
বিকালে শরনার্থী যাওয়ার জন্য অনেক পরিবার প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। গাইডারগুলো তাদের নিয়ে যাবে। আমরা আজ যাবো না বলে গাইডারদেরকে বলেছে বাবা।কাল যাবো, পরশু যাবো বলে বলে সময় পার করছে বাবা। এখনো রয়েছি বাঘমারায়।
পর্ব-৬
আহা! কি আনন্দ সেই বুড়ো লোকটির। কিনাধন বৈদ্য পাড়ায় তাঁর গ্রাম। নাম পন চোগা চাকমা। সেই পাখি ডাকা ভোর থেকে রেডিওতে গান শুনে।বড় ভাই প্রভূ মুনি চাকমা ডায়রিয়া হয়েছে। সাথে জ্বরও।রাতভর পায়খানায় আসা-যাওয়া করেছে।
যেন কিছুতেই ভাল হচ্ছেনা। সকালে গাছের শিকড় আর বাকল দিয়ে এক প্রকার ওযুধ বানিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। সেই থেকে কিছু ভাল রয়েছে। আমাদের পাশে সেই রেডিও ওয়ালা পনচোগা চাকমাদের ঝুঁপড়ি ঘরটি।
রেডিওটি বন্ধ করার করার জন্য মা অনেক বার বলেছে। তবুও শুনেনি। আমাদের আশেপাশের বেশ কয়েকজন মুরুব্বী গিয়ে বাঁধা দেওয়ায় সে রেডিওটি বন্ধ করে রেখেছে।
ঝুঁপড়ি ঘর গুলো গতরাতে আরো বেশী খালি হয়ে গেছে।
গতকাল বিকালে অর্ধেক পরিবারকে নিয়ে গেছে গাইডারগুলো। তাদেরকে নেওয়া হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের করবুক নামক জায়গায়। তাদেরকে শরনার্থী করানোর জন্য তালিকা করানো হচ্ছে। ঘরবাড়ী নেই। তাই রাতদিন খোলা আকাশে থাকতে হচ্ছে সেই পরিবারগুলোকে। আজ বিকালে আমাদেরকে নেওয়া হবে বলে গাইডারগুলো জানিয়ে দিয়েছে। বড় ভাইয়ের ডাইরিয়া ভালো না হওয়ায় আমাদেরকে নেওয়া হয়নি। আর সেই রেডিও ওয়ালা বুড়ো লোকটির পরিবারও চলে গেলে শরনার্থী হতে। ধাত্রীর ছেলেটি গতকাল রাতেও আসেনি মা'কে নিতে। অনেকের অনুরোধে গাইডারেরা সেই ধাত্রীকে নিয়ে যায়। সর্বশেষ তাঁর ছেলেকে খুঁজে ফেল কিনা জানানো সম্ভব হয়নি। তবে সেই ধাত্রীকে মনে পড়লে আমার আজও মন কাঁদে। সর্বশেষ ২০/৩০টি পরিবার রয়ে গেলাম বাঘমারায়। এদিকে বাবা আর অন্যান্য রা শরনার্থী না যাওয়ার সলা পরামর্শ করছে। প্রায় পরিবারগুলোকে শরনার্থী করতে পারাতে গাইডারগুলো এখন অনেকটা সুর নরম করেছে। যারা স্বেচ্ছায় শরনার্থী হতে যাবে না তাদেরেকে আমরা জোর করে নেবো না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে যারা গ্রামে ফিরে যাবে তারা বিপদে পড়লে কেউ দায়ী থাকবেনা বলেও জানিয়ে দেয়। গ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ রয়েছে। এতকিছু শোনানোর পরও আমরা স্বেচ্ছায় ভারতে যায়নি। হতে যায়নি শরনার্থী হতে। আজ রাত সেই পরিবারগুলো বাঘমারা থেকে গ্রামের বাড়ীতে ফিরে আসলাম। ফিরে এসে দেখি আমাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছে। চুরি করা হয়েছে মালামাল। চারিদিকে জনশূণ্য।গ্রামগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে।
পর্ব-৭
আমাদের গ্রামের অর্ধেকরও বেশী পরিবার বাঘমারা থেকে ফেরৎ আসেনি।
তারা শরনার্থী হতে গেছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। পরবর্তীতে শুনলাম শরনার্থী হওয়া পরিবারগুলোও ভাগ হয়েছে।কিছু পরিবার করবুক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কিছু পরিবারকে ভারতের শীলাছড়িতে নিয়ে গেছে। গ্রামে ফেরৎ পরিবারগুলো সব সময় আতঙ্কে থাকি।পরিস্থিতি কখন কি হয় তাই। চারিদিকে জনশূণ্য। গ্রামগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। নতুন করে ঘরবাড়ী তোলা হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন করে কর্ম জীবন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর মাস খানেক পরে স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম। তখন তৃতীয় শ্রেণি পড়ি। অর্ধেক বন্ধু রইলাম স্কুলে। এভাবে থাকতে থাকতে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল ফেলাম। আমার রোল হল ৪।
১৯৮৭ সালে ৪র্থ শ্রণিতে উঠলাম। গ্রামের আশেপাশে কোনো দাকানপাত ছিলনা। কোনো কিছু কিনতে হলে বাজারে যেতে হতো তাও বড় জনেরা বাদে কেউ বাজারে যায় না।
সপ্তাহে একদিন পানছড়ি বাজার বসে। বাজার থেকে প্রতিজনে কেরোসিন ১ কেজি আর ১ পোয়া দ্রব্যমূল্য আনার অনুমতি ছিল। কখনো বেশী আনা যেত না। বেশি আনলে বাঁধার মুখে পড়তে হতো। সেই ১ কেজি কেরোসিন দিয়ে পুরো সপ্তাহ পার যেতো না।আর ১ পোয়া শুটকি দিয়েও সপ্তাহ যেত না। আমাদের উৎপাদিত মালামাল সস্তা দামে বিক্রি করতে হতো। আমরা চার ভাইবোন (বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা কলেজে পড়ে, বড় কোন জোনাকি চাকমা,সাগরিকা চাকমা আর স্কুলে পড়ি) এক সাথে লেখাপড়া করি।
তাই ১ কেজি কেরোসিন দিয়ে সপ্তাহ পার হতো না। দিনের আলোয় লেখাপড়া শেষ করতে হতো। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।
পর্ব-৮
চার ভাইবোন একসাথে লেখা-পড়া করার কারনে ১ কেজি কেরোসিন দিয়ে সপ্তাহ পার হতো না। তাই দিনের আলোয় লেখা-পড়া শেষ করতে হতো। তখন পানছড়ি বাজার ও লোগাঙ বাজার বাদে পূজগাঙ এ কোনো দোকানপাত ছিলনা। এভাবে লেখা-পড়া চালিয়ে গিয়ে ১৯৮৭ইং সালে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলে রোল ২ হয়ে ১৯৮৮ ইং সালে ৫ম শ্রেণিতে উত্তীর্ন হই। আর রোল এক হলেন নন্দ লাল চাকমা। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর সাথে পারিনি। তখন সে তাঁর দাদু বাসায় থাকত। তাঁর দাদুর নাম ছিল মজেন্দ্র লাল চাকমা। তিনিই আমাদের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মজেন্দ্র লাল স্যার থেকে সকাল বিকাল প্রাইভেট পড়তেন। প্রাইভেট আমার ভাগ্যে জুটেনি। যা পেরেছি নিজের ইশ্চায়।খুব বেশী সমস্যা হলে বড় ভাই প্রভুমুনি থেকে শিখে নিতাম।
মজেন্দ্র স্যার ছিলেন খুবই দক্ষ একজন শিক্ষক।শুনেছি তখনকার সময়ে তিনি নাকি ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এরপর শিক্ষকতা চাকরি পেয়েছেন। বাংলা, ইংরেজী আর গণিতে তিনি খুবই দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃত মনা ব্যাক্তিও। তাঁর ব্যাক্তি জীবনী, বিভিন্ন গল্প, নাটক লিখে গেছেন। তখনকার প্রকাশনার উদ্যোগ না থাকায় সেগুলো তেমন প্রকাশিত হয়নি।
তবে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন।
তাঁহার লেখা চাকমা নাটক "রঙ মালা" টি শুটিঙ করা হয়েছে। তখনকার ভিডিও করার কোন কিছু না থাকায় তা সংরক্ষণ করা যায়নি। সেই "রঙ মালা" নাটকটি এলাকায় বিশাল
জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সে নাটকটি পরিবেশন করার জন্য নেওয়া হতো। নাটকটি শুরু হয়েছে সেই ১৯৮৬ সালের আগে। আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। বড় ভাইবোন বা মা'য়ের সাথে দেখতে যেতাম।
রাজা-মন্ত্রী, সেনাপতি ছিল সেই নাটকে। নাটকে "উজু আর বেঙআ" নামক দুজনের যুদ্ধগুলো এখনো মরে পড়ে। ১৯৮৮ইং সালে ৫ শ্রেণিতে উঠার পর আমার লেখা-পড়ার চাপ আরো বাড়তে
থাকে। আমার বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা থেকে সহযোগিতা নিতাম আর আমার এক কাকাতো ভাই বুদ্ধ জয় চাকমা থেকেও সহযোগিতা নিতাম। প্রভূমুনি চাকমা আর বুদ্ধজয় চাকমার হাতের লেখাগুলো খুবই সুন্দর ছিল।তাঁরা দু'জনই কলেজে পড়তেন। বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা লেখতেন বাম হাত দিয়ে। বাংলা, ইংরেজী লেখাগুলো খুবই সুন্দর ছিল। ১৯৮৮ সালে ৫ম শ্রেণিত পড়ি। তখনও আমি মা'য়ের বুকের দুধ খেতাম। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে মাকে বলতাম মা একটু দাঁড়াও। তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুধ খেতাম। এরপর স্কুলে যেতাম। আমাকে মা'য়ের দুধ না খাওয়ার জন্য বড় ভাই খুব বেশী বাঁধা দিতেন। তবুও খেতাম। বড় ভাই একদিন একটি ছোট বল এনে দিয়ে বললেন মা'য়ের বুকের দুধ ছাড়লে তোমাকে এ বলটি দিয়ে দিবো।
বল পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। প্রায় এক সপ্তাহ পর্ষনাত মা'য়ের বুকের দুধ খাইনি।
তখন আমাদের উঠানে ছিল একটি খেজুর গাছ। দুই ভায়ে খেলা খেলতে খেলতে তিনি খুব বড় করে লাঠি দিয় বল আকাশের দিকে তুলে দিলেন। বল পড়ে গেল সুপারি গাছের কাদায়। নষ্ট হলো বলটি। সেদিন বিকাল থেকে আবার মা'য়ের দুধ খাওয়া শুরু করলাম।
পরবর্তীতে আর একটা বল পাওয়ায় মা'য়ের বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করি।
আজ মা নেয়। তিনি ২০০৩ইং সালে ডিসেম্বরে শেষের দিকে স্বর্গীয় হন।
মাঝে মাঝে সেই কথাগুলো মনে পড়লে কখন চোখের পানি আসে ঠেরও পায়নি।
পড়ে যায় আবেগের স্রোতে। মা'কে তাঁর বৌ মা'কে দেখাততে পারিনি। মা'ও বুকভরা দুঃখ নিয়ে স্বর্গীয় হন। আর আমি মাঝে মাঝে আফসোসে পরে আবেগের সোতে ভেসে যায়।

বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা ছিলের খুবই সুন্দর মানুষ। গায়ের বঙ ছিল খুবই ফর্সা। অচেনা লোকে দেখলে বলতো এ ছেলেটি কার? রাজপুত্রের মতো চেহারা।এভাবে বলাবলি করতে নিজে অনেকবার শুনেছি।
হ্যাঁ দাদা ছিলেন খুবই সুন্দর চেহারাবান আর ফর্সা একটা পুরুষ। বড় ভাইকে মা-বাবা বাবু বলে ডাকতেন। এপ্রিল মাসে আমাদের পরিবারে বিরাট করে ঝড় বয়ে গেল। বিঝুর কাছাকাছি সময়ে বড় ভাই প্রভূমুনি চাকমা স্ত্রোক করে স্বর্গীয় হয়। তখন বাবা আর মা প্রায় পাগল হয়ে গেছেন। বাবা-মা ঘন ঘন মুর্ছা যান। বাব আর -মা'তো দাদার চিতার সাথে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চাইছিলেন।
আত্মীয়-স্বজনগুলো ধরে রাখাতে তাঁরা আগুনে পুড়ে জ্যান্ত মরতে পারেনি। মা আর বাবা না খেয়ে থেকেছে অনেক দিন। না খেয়ে থাকতে থাকতে মা'তো উঠতে বসতেও পারতেন না। আমরা অনেক কৌশল করে পানি নাম দিয়ে ভাতের মার খাওয়াতাম বাবা আর মাকে । আর বাবা পাগলের মতো করে সারাদিন গ্রামে ঘুরতেন।
বলতেই ঐ যে আমার বাবু। দেখতে পাচ্ছি।তাই বলে সেদিকে দৌঁড় দিতেন। গ্রামের যেদিকে যান সেদিকে দাদাকে দেখবেন মনে করতেন। তাই না খেয়ে পাগলের মতো করে পুরো গ্রাম ঘুরতেন । বাসায় আসলে বাবু, ঐ বাবু.... বলে ডেকে ডেকে মুর্ছা যেতেন। তখন সবাই মিলে অঝোরে কান্না করতাম।
পর্ব-৯
বড় ভাই প্রভু মুনি চাকমার সাপ্তাহিক ক্রিয়া শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরে শুরু আমাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু। তাই সে বছর বিঝু উৎসব হয়নি আমাদের পরিবারের। বাবা আর মা বড় ভাই প্রভূ মুনি চাকমার বন্ধু-বান্ধবদের দেখলে অঝোরে কান্না করতেন। বিশেষ করে তাঁর সহপাঠী বুদ্ধজয় চাকমা, শিমুল চাকমা(স্বর্গ ধন চাকমা), রুপান্ত চাকমাদের দেখলে শুধু বিলাপ করে করে কান্না করতেন। তাই তাঁরা আমাদের বেড়াতে আসতেন না। দুই ভাই থেকে এক ভাই হওয়ায় সেই আগের দিনের কুসংস্কারে ধরে আমার বাম কান ফুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।অর্থাৎ আমাকে ক্ষত করা হয়।যেন আমি মরে না য়ায়। প্রায় দু'মাস পরে আমাকে স্ব-ধর্ম রীতিনীতি অনুসারে আমাদের জন কল্যাণ বৌদ্ধ বিহারে শ্রমণ করে দেওয়া হয়। সাত দিন থাকার কথা থাকলে আমি প্রায় ১০ দিন ছিলাম শ্রমণ অবস্থায়। এরপর রঙ বস্ত্র ছেড়ে বাড়ীতে আছি।
মা-বাবা আস্তে আস্তে  কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকেন। গ্রামের আত্মীয়-স্বজন বাবা মাকে বুঝাতে থাকেন। ২ ছেলের মধ্যে এক ছেলেকে হারালেও আর এক ছেলে আছে।এ ছেলেকে নিয়ে ভরসা করে থাকেন।এভাবে আরো অনেক কিছু।
আমি ৫ শ্রণিতে পড়তেছি। তাই আমাদের স্কুলের সে সময়ের প্রধান শিক্ষক যুদ্ধ চন্দ্র চাকমা প্রায় সময় আমাদের বাসায় আসতেন।বাবা-মাকে বুঝাতেন।আত্মীয় সম্পর্কে তিনি আমার কাকা হন। আবার আমরা এক গোষ্ঠীও।
আমার রোল ২। তাই বৃত্তি পরীক্ষা যেতে হবে।সেজন্য পস্তুতি নিতে তিনি আমাবে উৎসাহিত করেন। আরা বাবা-মাকেও বুঝান।
এরপর ডিসেস্বরে আমাদের বার্ষিকী পরীক্ষা হয়। কয়েক দিন বৃত্তি পরীক্ষা বৃত্তি পরীক্ষার জন্য পানছড়ি বাজার মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষা পস্তুতির জন্য আমার কোনো গাইড লাইন ছিলনা।পরীক্ষায় আমি ভালো করতে পারিনি।
তবু পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ন হয়ে ১৯৮৯ইং সালে পূজ গাং মূখ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। প্রায় ৪ মাস ক্লাশ চলার পর পাহাড়ের পরিস্থিতির কারনে আবার ভাবতে শরনার্থীতে হতে হয়েছে। শরনার্থীতে মা, আমার বড় বোন জোনাকি চাকমা, সাগরিকা চাকমা গিয়েছি। এবারও আমাদের সাথে শরনার্থী হতে যাননি বাবা আর বড় বোন প্রভূ লতা চাকমা। বর্তমানে চয়েস মা। তারা এক সপ্তাহ পরে শরনার্থী হতে গেছেন। তাই তাঁরা আলাদা কার্ডে আর আমরা আলাদ কার্ডে রেশন পেয়েছি।
সেখানে গিয়ে আমাদদের করবুক শরনার্থী শিবিরে থাকতে হয়েছে। লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে আমাদের। নতুন নতুন জায়গা।নতুন পরিবেশ, আমাদের খাপ-খাইয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে।
প্রতিদিন বেশ কয়েকজন লোক মারা যাচ্ছে। সে এক করুন কাহিনী।
শিবিরে যাওয়ার ১ সপ্তাহের মাথায় আমার আর বড় বোন সাগরিকা চাকমা ডাইরিয়া হয়েছে।ডাইরিয়া থেকে অমাশয় হয়েছে আমাদের দুই ভাই বোনের। শিবির থেকে পায়খানা ঘর অনেক দূরে।পায়খানা করতে করতে আমরা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ি। পায়খানা করতে করতে পরবর্তীতে মল আসেনা। আছে শুধু কিছু রক্ত। আমরা খুবই দুর্বল হয়ে পড়ি।
আমাদের অবস্থা দেখে মা পায়খানা করার জন্য ঘরের ভিতরে ছোট্ট গর্ত করে দেন।সেখানে পায়খানা ছাড়তে হয়েছে।
কোনো ডাক্তারি ঔযুধ না থাকায় জঙ্গলে লতাপাতা আর কি একটা গাছের বাকল বাঁশের চুঙ্গায় সিদ্ধ করে খাওয়ানো হয়েছে।
প্রায় ৪/৫ দিন পর আমরা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকি। সে সময় দেওয়া হয়েছে লাল সিদ্ধ চাল।যা খাওয়ার উপযোগি নয়। তবুও খেতে হয়েছে।
আহা!
শরনার্থীতে পাওয়া ডাইল তরকারী আর সেই লাল চাউলের ভাত গুলো ২/৩ বার খেলে ভাল শরীরও নিজে নিজে দুর্বল হয়ে যায়। টাকা ন থাকায় তবুও খেতে হয়েছে। আমাদের দু'ভাইবোনের অবস্থা দেখে মা সে লাল চাউলগুলো বিক্রি করে কয়েক কেজি আতপ চাউল কিনে আনেন।সে আতপ চাউলের ভাত খেতে পেয়ে দু'ভাইবোন কিছু স্বাভাবিক হতে থাকি।
পর্ব-১০
লাল চাউলগুলো বিক্রি করে কয়েক কেজি মাত্র আতপ চাউল কিনে এনেছেন মা। কয়েক সন্ধ্যা খাওয়ার পর সেই আতপ চাউলগুলো শেষ হয়েছে। মার হাতে টাকাও নেই। তাই অন্যের থেকে চাউল ধার করে খেতে হয়েছে আমাদের। ২দিন পর বাবা বাংলাদেশ থেকে শরনার্থী শিবিরে আসলেন। বাবা কিছু টাকা এনেছেন। চাউল নাই শুনে বাবা একবস্তা আতপ চাউল কিনে এনেছেন। সেই আতপ চাউল খেয়ে দুই ভাইবোন সুস্থ হয়ে উঠি।
আমাদের শরনার্থী শিবির থেকে শরনার্থীদের পরিচালিত স্কুলের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার হবে। টাকা পয়সা না থাকায় আমরা স্কুলে ভর্তি হতে পারিনি। তাই স্কুলে যাওয়া হয়নি।
আমাদের গ্রাম থেকে ১৯৮৬ সালে যাওয়া শরনার্থীরা করবুকের শিবিরে অবস্থান করতেছে।
সেই শিবির থেকে আমাদের শিবিরের দূরত্বও প্রায় ২ কিলোমিটার।
একদিন সকালে মা'র সাথে আমি আর আমার কাক তো ভাই ঐরাশা মুনি চাকমা করবুক বাজারে যাচ্ছিলাম। আমার কাকাতো ভাই ঐরাশা মুনি আমার থেকে বয়সে ৬মাসের ছোট।
আমাদের পিছনে কয়েক জন রিয়াং মহিলা আর দু'জন আমাদের সম বয়সি ছেলে স্কুলে যাচ্ছে। মেয়েগুলো নীল রঙয়ের শাড়ী পড়া। ৯শ্রেণিতে উঠলে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সে সময়ে বাধ্যতামূলক শাড়ী নাকি পড়তে হয়। সম্ভবত মেয়েগুলো ৯/১০ ক্লাশে পড়ে।
আমি আর ঐরাশা মুনি মা'য়ের পিছে পিছে যাচ্ছিলাম। আমাদের পিছনে পিছনে আসা দুইটা ছেলে থেকে একটা ছেলে আমার কাকাতো ভাই ঐরাশা মুনি পিছন থেকে এসে জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। শব্দ শুনে পিছনে দেখি ভাই মাটিতে পরে গেছেন।
তখন বললাম ভাই কি হয়েছে বলাতে সে বলল ঐ ছেলেটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দিয়েছে। আমি রাগ করে ভাইকে বললাম তুমি চালিয়ে দাও। আমি ঐ ছেলেকে মারার জন্য দৌঁড়ে গেলাম।
আমি ঐ ছেলেকে মারার যাওয়ার আগে শাড়ী পড়া এক শিক্ষার্থী(মেয়ে) ধাক্কা দেওয়া ছেলেকে কয়েকটা ঠাপ্পর দিলেন। আর তাদের ভাষায় কি জানি বলেছেন। শাড়ী পড়া মেয়েটি সম্ভবত তার বড় বোন হবে। আমার রাগের সুরে কথা শুনে মা বলতেছে কি হয়েছে। আমার কাকাতো ভাই মাকে সব বলে দিলেন। মা বললেন তোমরা কিছু করোনা। এটা আমাদের দেশ নয়। চুপ করে থাক।
ঐ শাড়ী পড়া মেয়েটি আমার ভাইকে বলেন তোমরা যাও গা। আর ভাই শান্তনা দিয়ে বললেন ভাই গচ্ছা(রাগ) করো না। তারপর আমরা কিছু না বলে চলে আসলাম মা'য়ের সাথে চলে আসলাম।
পর্ব-১১
সে দিন করবুকের মূল শিবিরের (অর্থাৎ যারা ১৯৮৬ সালে শরনার্থী হয়েছে) বাজার থেকে বাজার করার পর আমরা আমাদের শিবিরে ফিরে আসলাম। আমাদের শিবিরে সামনে একটা মাচাং ঘর তোলা হয়েছে। কে তুলেছে জানি না। সকাল থেকে বিকাল সেই ঘরে গল্প দিতাম। খাবার খাওয়া আর রাত্রি বাদে সেই ঘরে দিনভর লুডু খেলা, তাস খেলা খেলতাম। স্নান করার জন্য আমাদের শিবিরের সামনে বড় গর্ত করে কুয়া বানানো হয়েছে। সেই কুয়া থেকে খাবার পানি, স্নান করা মানে সব কিছু করতে হতো। সকালে আর বিকালে পানির সংকট হতো প্রচুর। ভোরে স্নান না করলে দিনভর স্নান করা হতো না। তাই মেয়েদের সেই পাখি ডাকা ভোর থেকে পানির জন্য যুদ্ধ করতে হতো। দেরি হলে পানি পাওয়া যেত না। এভাবে প্রায় ৩/৪মাস কেটে যায়।
বাবা আর দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হরি পদ চাকমা(চম্পা বাব, কয়েক বছর আগে তিনি স্বর্গীয় হয়েছেন) প্রায় সময় তবলছড়ির ফেনীর জলেয়ে নামক জায়গা দিকের মাছ ধরার জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসতেন। বিকালে ফিরতেন খালি হাতে।
এভাবে বেশ কয়েক বার আসার পর একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা আজও মাছ পাননি?
একবারও তো মাছ নিয়ে আসলেন না কেন? এমন প্রশ্ন করার পর মা বললেন তোমরা কাউকে বলবে না শিবির থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা খুঁজতে যায় তারা। অন্যরা জানতে পারলে সমস্য হবে। কাউকে বলা যাবে না।
আমাদের শিবিরগুলো ছিল অনেক লম্বা লম্বা। এক শিবিরে প্রায় ২০/২৫ টি পরিবারকে থাকতে হতো। শিবিরগুলোর প্রস্থ ছিল ৬/৭ হাত।
প্রতিজনের জন্য বরাদ্ধ ছিল দৈর্ঘ্যের ১ হাত। আমাদের পরিবারে সদস্য ছিলাম দুটি রেশন কার্ডে ৬ জন। তাই আমরা ৬হাত শিবির বরাদ্ধ পেয়েছি। সেই ৬হাত শিবির ঘরে রান্না করা, খাওয়া আর ঘুমানো। প্রতি দশ দিনে রেশন দেওয়া হতো জনপ্রতি ৪ কেজি ২৫ গ্রাম। মাঝে মাঝে চাউলের পরিবর্তে দেওয় হতো ছিড়া। আমার সম বয়সী অনেকেই স্কুলে যায়। আমাদের তিন ভাইবোনের স্কুলে যাওয়া হয়না। একদিন মা'য়ের সাথে আমি রেশন তুলতে গেলাম।
ছোট ছিলাম তাই চাউল আনতে পারিনি।তাই আমাকে শুটকিগুলো আনার জন্য বলা হয়েছে। ভারতের প্লাস্টিকের বেগ নিয় আমি শুটকি আনতে গেলাম ডিলারের কাছ থেকে।
শুটকিগুলো আনার সময় অর্ধেক পথে শুটকির দাত আর কাটার কারনে আমার প্লাস্টিকের ব্যাগ ছিড়ে যায়। আর সাথে সাথে অর্ধেক শুটকি রাস্তায় পরে যায়।
পর্ব-১২
শুটকিগুলো রাস্তায় পড়ে যাওয়ায় আমি কান্না শুরু করি। টাকার অভাবে মাছ,মাংসা কিনে খাওয়া হয়না। শুটকিগুলোই হলো মাছ আর মাংস। আমার কান্না দেখে মা তাড়াতাড়ি এসে চাউলের কাল্ল্যোঙটি( বাঁশের বেট দিয়ে তৈরী) মাটিতে রেখে শুটকিগুলো তুলে নিলেন কাল্ল্যোঙ এ। অবশিষ্ট শুটকিগুলো ব্যাগে নিয়ে আসলাম। আমাদের শিবিরে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হচ্ছে। শ্বশ্মানের পাশ দিয়ে আমাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। শ্বশ্মানে ৪টি চিতায় আগুন জ্বলছে। সেই চিতাগুলো দেখে আমি মায়ের পিছু ছাড়িনি। মায়ের পিছনে পিছনে এসেছি। শুধু আজ নয় প্রতিদিন বেশ কয়েকজনের দেহ শ্বশ্মানে পোড়ানো হয়। শিবিরে আর শ্বশ্মানে প্রতিদিন কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রায় সবাই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। শিবিরে দুই-এক জনের ডায়রিয়া হলে পুরো কয়েকটি শিবিরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। আর অনেকেই জঙ্গলের লতাপাতা, গাছের শিকর দিয়ে তৈরী ঔযুধ খেয়ে সুস্থ হয়। তাও আবার ভগবানের অপার কৃপায়। শিবিরে মারা যায় বিশেষ করে ডায়রিয়ায়।

বাড়ীতে এসে দেখি শুটকিগুলোতে অনেক পোকা। পোকাগুলো শুটকিগুলোকে খেয়ে সাবার করে ফেলেছে। সেগুলো পরিস্কার করে রেখেছে মা। কয়েকদিন পর পর সে শুটকিগুলো রান্না করে খাওয়াতেন। শুটকিগুলোতে মাংস বলতে ছিলনা। তবুও খেতে হয়েছে মাছ, মাংসের পরিবর্তে। মাছ, মাংস মাসে একবার জুটে না বললেই চলে। আমাদের শরীর দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে ভিটামিনের অভাবে। মা-বাবা চিন্তায় পড়ে গেছে। অন্যের ঘরে কাজ করলে পেটে-ভাতে হলে দৈনিক মিলে ভারতীয় রুপি ৭/৮ টাকা। খারাব ছাড়া ১১/১২ টাকা। অথচ এক কেজি চাউল কিনতে লাগে কমপক্ষে ২০ টাকা। বাবা-মা অন্যের ঘরে কাজ করতে পারেনা।
মা আর বাবা বলেনন-
সারা জীবন অন্যের ঘরে কাজ করিনি। আমরা গাবুর(মজুরির লোক) নিয়ে কৃষি কাজ করেছি। এখানে এসে কিভাবে মজুরি করতে যাবো? তাছাড়া দৈনিক কাজ করলে এক কেজি চাউল পাওয়া যায় না। তাছাড়াও সেই পাখি ডাকা ভোরে স্থানীদের ঘরে ঘরে গিয়ে কাজ খুঁজে নিতে হয়। যারা কাজ পায় তারা করে। আর যারা কাজ পায় না তারা খালি হাতে ফিরে আসে। অনেক স্থানীয় আছেন খুবই ভালো।আবার অনেকই নাকি খুবই খারাব। অনেক স্থানীয় আছেন সারা দিন কাজ করেও নাকি মজুরির টাকা না দিয়ে খালি হাতে ফেরৎ দেন মজুরকে। দিনভর কাজজ করার পর বিকালে মজুরি টাকা খুঁজতে গিয়ে অনেকে টাকার পরিবর্তে মার(পিটা)খেয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। তবুও পেটের জ্বালায় আবারও স্থানীয়দের কাছে সেই পাখি ডাকা ভোরে গিয়ে কাজ খুঁজতে যায়। এছাড়াও নাকি অনেক বঞ্চনার শিকার হতে হয় । সব স্থানীয় কিন্তু খারাব ব্যবহার করে না।অনেকেই ভালো ব্যবহার করে। কাজ করার সময় বলে দেয়- নিজের মতো করে কাজ করতে। আর খাবারের সময় নাকি অতিথির মতো করে পরিবেশনও করে। যারা ভালো পরিবার ও ভালো মনের মানুষের কাছে কাজ পায় তারা বিকাল হলে খুঁশি মনে বাড়ীতে ফিরে আসে। আর যারা খারাব মানুষের কাছে কাজ পায় তারা খালি হাতে ফিরে আসে। অনেকেই মজুরির টাকা খুঁজতে গিয়ে মার(পিটা) খেয়ে খালি হাতে শিবিরে ফিরে আসে।
চলমান-১৩

Saturday, October 12, 2019

"দেবংসী ঘিলে ফুল"

 "দেবংসী ঘিলে ফুল"

নূতন ধন চাকমা

 দেবংসী ঘিলে ফুলে 
যে্ তে বেলে্ ন্ দেগে। 
অঘুর ভাগ্যত্ত্যে গুরি যে জন্মায়, 
হামাক্কাই বেলে তে্ দেগে।

 দেবংসী ঘিলে ফুল,
 হারাক্কাই হন্ ন্ দেগে।
 ঘিলে ফুলুন যা্ নাঙে ফুদোন? 
বানা্ বেলে্ তে্ দেগে।

দেবংসী ঘিলে ফুলে বেলে দেগিলে?
 হামাক্কাই রাজা উদি পারে, তে্ বিলে। 

 চাকমা দাগ হদায় হন্ 
দেবংসী ঘিলে ফুল দেগিলে।
 হয় বংশ উবোদ উদিবে, 
নয় রাজা ওনেয় রাজ রাজত্ব তুই গরিবে।

গুজোঙ বুজ্জ্যে জিবো কালাবি। 
অঘুর ভাগ্যত্ত্যে গুরি জন্মেয়েগি। 

জুম গরেয়ে জি অলেও 
রুবে-রঙে তুজিমপুরো তে উয়ে।
 জীঙগানির নিজেনী 
 সুখী গরি তে্ রুয়ে। 

 জুমোদ যেনেয় দেবংসী ঘিলে ফুল, 
তে্ দেক্কেগোই। 
সেনে চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ মোগ, 
ওই তে্ পাজ্জ্যেগোই। 

রাজা মোগ ওনেয়, 
কালাবি চাকমাত্তুন কালেন্দী রাণী নাঙ তাঁর বোস্স্যে। 
চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ মোক তে্ উয়ে। 

 রাজা মুরিনেয় হয়েক বজর পরে, 
১৮৪৪-১৮৭৩ সাল পর্যন্ত চাকমা রাজ্যোগান রাজত্ব তে্ গোজ্জ্যে। 
দেবংসী ঘিলে ফুল দেনেয়, রাজা উদি তে পাজ্জ্যে।


 
      
##########

"অাত্ত্যে অা নাদিন"

নূতন ধনন চাকমা
 
নাদিনঃ অাজু হুদু যল্ল্যে?
অাজুঃ বাজারদ।
নাদিনঃ অাজু মুয়ো যেম।
অাজুঃ হিত্ত্যেয়? ন যেয।
নাদিঃ অাজু, মুই যেম।
অাজুঃ অাদি ন্ পারিবে।
নাদিনঃ পারিম অাজু।
অাজুঃ হি এদক বাজার বাজর?
হি গত্ত্যেগোয়।
নাদিনঃ চবলক হেবার অাজু।
অাজুঃ ন্ যেজ।
মুই চবলক অানি দিম।
নাদিনঃ না না অাজু মুইও যেম ত্ লগে।
মুই ললিপপও হেম।

অাজুঃ ত্ বাবা দাগিরে একবারও
বাজারদ ন্ নেযাঙ।
চিগোন হালে ত্ বাবা
বাজারা, রাঙানে হালাও
ন্ দেগেগোই।
ন্ পারিবো অায় ত্ লগে।
যুগুলো ওয়ে যেয়।

ফ্যাক্টঃ পো্ মেয়েত্তুন নাদিনো মেয়ে বেজ।

Thursday, October 10, 2019

'শিঘিবার চেয় তোমাত্তুন'

'শিঘিবার চেয় তোমাত্তুন' 
 নূতন ধন চাকমা

"সীজি মনে রিবেঙত্তুন,
অতালেয় ফুল দিনেয়
পাত্তুরুতুর গজাঙঅর।
সং সমারি উজেয় যেয় পারি পা অামি,
তোমাত্তুন মুই এ বরানি মাগঙঅর।


পাত্তুরুতুরু গজাঙঅর তোমারে,
মন্ চিদোত্তুন।
জাদর ঐতিহ্য তুলি ধুরিবার
লাগদ পা-পি অলঙ অামি ভালক জনে ভালক ভালক দূরোত্তুন।

জাদর ভালেদি হদা,
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ধুরি রাগেবার,
চেরেত্তা গরিবোঙ অামি হুজি গরিনেয়।
জাদর বিজক হদা হোয় যেবঙ অামি
সঙ সমারে মিলিনেয়।

অাগে এস্সে, অাগে লেগেয়ে লেখকুনোত্তুন,
জাত বিজগর মুলুক মুলুক হদা শুনিবোঙ।
তারা হদানি অামি বেগে,
চিদোদ ধুরি রাগেবঙ।

তারা হদানি শুনিনেয়,
নো নো কবিতা লিঘিবোঙ,
বিজগর হদা লিঘিবোঙ।
অাদা-অাত্ত্যা্ বেগে মিলি,
জাদর বিজক ধুরি রাগেবঙ।

তোমাত্তুন অামার,
শিঘিবার অাগে ভালক হিজু,
তুমি অামারে শিঘেয়ো।
লেঘানাদ অামার ভূল অলে,
উজ্কার এক্কা দ্বি'যেয়ো।

তোমাত্তুন অামি...
রাধামন-ধনপুদি, নিলঙধন-নিলোঙবি,
কুঞ্জধন-কুঞ্জবি, কামেচধন-কামেচবি,
ফুজুকধ-ফুজুকবি, মেইয়্যা্ধন-মেয়েবি,
ছেইয়্যা্ধন-ছেয়েবিদাগির
বিজগর হদানি শুনিবোঙ।
ধূধুক-হেঙগরঙ, শিঙে-বাঝি,
বাজেবার তোমাত্তুন অামি শিঘিবোঙ।

চান্দবি-বার মাজও
হোয় যেয়ো।
তারার বিজকও শিঘেয়ো।

সে বাদেও
জাদর বিজক হি হি অাগে,
বেক্কানি শিঘেয়ো অামারে।
তোমা শির্ষ্যো ওনেয় অামি,
মিলিবোঙ তোমা সমারে।

শির্ষ্যো ওনেয় শিঘিবোঙ,
জাদর বিজক লিঘিবোঙ।
জাদর বিজয় ধুরি রাগেবার,
জনমভর চেরেত্তা অামি গরিবোঙ।

অামা বান ঠিগি থোক
এই আজাগান রাগেলুঙ।
শিক্খেগুরু মনে গোরিনেয়,
পাত্তুরুতুরু গোজেলুঙ।


পুর-২৬.০৯.২০১৯ ইং।