১৯৯৭ ও ১৯৯৯ সাল
রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের জীবন।
নূতন ধন চাকমা, সংবাদকর্মী
পর্ব-১-১৪
বিএসসি পড়তাম।
সকালে রান্না করে সেই খাবার রাতেও খেতে হতো। গরমে তরকারি বাসি হয়ে যেতো।
সারাদিন কলেজে ক্লাশ।
বিকেলে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশ। হোস্টেলে ফিরতে মাঝে২ সন্ধ্যা হয়ে যেত। রুমে ফেরার পর শরীর দুর্বল হয়ে যেতো।
স্নান শেষে একটু বিশ্রাম নিলেই রাত হয়ে যেতো।
তাই মাঝে মাঝে রান্না করারও সুযোগ হতো না। সকালের রান্না পর বিকালে তরকারী বাসি হয়ে যেত। এমনভাবে বাসি হয়ে যেত যে-তরকারী সমূহ ফেনায় ভরে যেত। তবুও খেয়েছি সেই বাসি খাবার।কত বাসি খাবার খেয়েছি। তার কোনো ইয়াত্ত¡া নেই। সে খরব বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে কলেজে। তখন অনেক বন্ধু বান্ধবী জেনে যায় বাসি খাবার খাওয়ার কথা।মাঝে মাঝে রাতভর থাকে না বিদ্যুৎ। গরমে ছটপট করে লেখা লেখাপড়া করতে হয়েছে। হোস্টেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে মাঝে মাঝে ১১/১২টা বেজে যেত। তখন রাতভর চুরি করে লেখাপড়া করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।প্রায় সময় বন্ধুদের থেকে চুরি করে রাতভর লেখাপড়া চালিয় যেতাম।
মাঝে২ ভোরে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যখন সূত্রপাত করত তখন ঘুমিয়ে পড়তাম।
আবার রান্নার জন্য ৭টা বা সাড়ে ৭টা সময় উঠতে হতো।।হাতমূখ দোত করা, স্নান করা, ওয়াশ রুমে কাজ শেষ করতে আর রান্না করতে করতে সময় যেত প্রায় ঘন্টা খানেক। কলেজে যেতে হবে, কলেজের স্যারদের বাড়ী কাজ করতে করতে চলে যেত আরো প্রায় ঘন্টা খানেক।
সেই অনেক পরিশ্রমের কাজ ছিল। অনেক কষ্ট করেছি জীবনে সফলতার জন্য। এমনি একটা দিনে রান্না শেষে সকালে মন খারাব করে আনমনে বসে আছি হোস্টেলে বারান্দায়।
হঠাৎ এক বন্ধবী এসে আমায় অভ্যার্থনা জানালো। (বান্ধবীটি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।)
জিজ্ঞেস করলো কেমন আছি। প্রতি উত্তরে, দুঃখের সুরে লম্বা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে -
বললাম, আছি ভালো কোনো মতে।
তিনি আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দেওয়া অনুভব করে বললেন- দাদা, খুবই কষ্টে আছেন মনে হয়।
তাকে বললাম- আমি কৃষকের ছেলে। কষ্টতো শুধু আমাদের জন্য এসেছে। আপনাদের জন্য নয়।
তিনি বললেন- কেন?
প্রতি উত্তরে বললাম- আপনার জীবতো সুখের। মা-বাবা সরকারী চাকুরী করেন। তাই কষ্ট কি? তা বুজতে পারেনি। কোনো কিছুরই অভাব আপনার নেই।
আর আমি চলি কোন রকমে।
মাস শেষ হওয়ার আগে শেষ হয়ে যায় টাকা।শেষ হয় বাড়ী থেকে পাঠিয়ে দেওয়ার চাউল। তখন বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে মাস শেষ করতে হয়।
এ কথাগুলো বলতে বলতে আমার কথার ফাঁকে তিনি আমাকে বললেন -
সারাদিন দাড়িঁয়ে রাখবেন? না রুমে নিবেন?
বললাম চলেন রুমে।
রুমে যাওয়ারর পর আমার পড়া চেয়ারে বসতে বললাম তাকে তিনি বসলেন না।
বসলেন পড়ার টেবিলের পাশে আমার বিছানায়।
বললেন-আজ আপনার রান্না করা ভাত খাবো।
তাকে বললাম-আমি শুধু আলু আর আমেল্ল্যা(এক ধরনের টক তরকারী) রান্না করছি। যা আপনি খাবেন না।
এবংকি খেতেও পারবেন না।
তিনি প্রতি উত্তরে বললেন-খাবো।আপনি যা খাবেন তা দিয়ে।
তাকে বললাম- রুমে পানি নেই। পানি নিয়ে আসি অপেক্ষা করেন।
তারপর পানি আনার অন্যের থেকে খাবারের প্লেত ১টা আনলাম।
খাবার রেডি করতে করতে তিনি ব্যাগ থেকে ছোট্ট দু'টি টিপিনের বক্স বের করলেন।
তাকে বললাম -এগুলো কি?
তিনি বললেন- এ দু'টি বক্সের মধ্যে ১টিতে মুরগীর মাস। আর অপরটিতে চাপিলা মাছের ভাসি আছে। তখন একটু লজ্যাও পেলাম।
বললাম কেন আনলেন এগুলো?
উত্তরে তিন বললেন-কলেজে অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি পঁচা বাসি খাবার খান মাঝে মাঝে। তাই এগুলো নিয়ে আনলাম আপনার জন্য।
তাকে বললাম-এগুলো যে আনলেন আপনার বাবা-মা কি জানেন?
তিনি বললেন- না।
তাকে বললাম-আমি কৃষকের ছেলে।
তাও আবার ৭ভাই বোনের মাঝে আমি সবার ছোট।
একসাথে ৩ ভাই-বোন লেখা পড়া করি।
বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী।
অভাবতো থাকবেই স্বাভাবিক।
একথা বলার সাথে সাথে কেন জানি তার চোখের পানি এসে গেছে।
তাকে চোখের পানি মুছতে বললাম।
তিনি চোখ মুছলেন।
বললাম -চলেন খেতে বসি।
খাওয়া শুরু করে দিলাম। তিনি শুধু
আমেল্ল্যা ঝোল আর কিছু আলু তরকারী খাবার প্লেটে নিলেন।
মাস আর মাংস নিতে বললেও তিনি নিলেন না।
বললেন-আমিতো সব সময় মাস,মাস দিয়ে
খাবার খাই। তাই খেতে ইচ্ছে করছে না।
শুধু এগুলো দিয়ে খাবার অভ্যাস করার চেষ্টা শুরু করি।
তখন অভাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে
রইলাম।
এ ফাকে সে আমার খাবার প্লেটে কয়েক পিচ মাস আর মাংসের তরকারী দিয়ে দিলেন। এবং আমাকে খাওয়ার জন্য
অনরোধ করলেন।
আমি বললাম-আপনি না খেলে আমিও খাবো না।
তখন তিনি আমার প্লেট থেকে এক পিচ ভাজি মাস আর এক টুকরো মাংসের পিচ নিলেন।
খাবার শেষে বাকী থাকা মাস আর মাংসের
তরকারী সমূহ বক্স সহ রেখে দিলেন।
বললেন -এগুলো দুপুরে খাবেন আর রাত্রে।
আর বললেন-রেডি হয়ে যান কলেজে যেতে হবে।
আমিও রেড হয়ে যায়। চলে গেলাম কলেজে।
বান্ধবিটাকে কলেজে নাস্তা করাবো সে হাতকড়িও আমার নেয়। তখন মাস প্রায় শেষে।
তাই তাকে নাস্তা করাবো চিন্তা করেও করাতে পারিনি।
কলেজে ২টি ক্লাশ করার পর সে আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আসে। আমি ক্লাশ রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমাকে দেখে নিলেন কলেজ ক্যান্টিনে।
আমার হাতকড়ি নেয়। তাই পড়লাম মহা সংকতে।
নাস্তা করার পর বিল দেওয়ার টাকাও আমার নেয়।
তিনি বললেন -আমি দেবো।
খাবার শেষে বেরিয়ে আসলাম ক্যান্টিন থেকে।
তিনি আমাকে অনেক অনুরোধ করলেন গাছ তলায় বসে তার সাথে গল্প করতে।
আমি সময় দিতে পারিনি। সে সময় ছিল গণিতের ক্লাশ। তাই আবার ক্লাশে গেলাম।
গণিতের স্যার সপ্তাহে আসেন মাত্র ৩ দিন।কোনো অবস্থাতেই ক্লাশ ফাকি দেওয়া যায় না।
পর্ব -২।
গণিতের স্যার ছিলেন খুবই তীক্ষ্ন বুদ্ধিদীপ্ত।মনে হয় গণিতের পুরো বইটি মুখস্ত। ক্লাশ শেষে স্যার কিছু নোট দিলেন ফটোকপি করে রাখার জন্য।
আমার হাতে টাকা না থাকায় ফটোকপি করে রাখতে পারলাম না।
আমার সকল বন্ধুরা ফটোকপি করে রেখেছেন।
ক্লাশ শেষে বুক ভরা দুঃখ নিয়ে হোস্টেলে যাচ্ছিলাম।
পথে সেই বান্ধবীটি আমার অপেক্ষায় আছে।
আমাকে দেখে বললেন- মুখের ভাজে এত দুঃখ দেখা যাচ্ছে কেন?
সকালে আমি তরকারী এনে দিয়েছি তাই?
উত্তরে বললাম- নাতো, শরীর ক্লান্ত লাগছে তাই।
পরে গণিত স্যারে নোটের কথা বললাম।টাকা না থাকায় নোটগুলো ফটোকপি করে রাখতে পারিনি। তাই মন খারাব।
একথা বলার সাথে সাথে তিনি পার্স থেকে টাকা বের করে দিলেন। নেন এগুলো।এগুলো দিয়ে
ফটোকপি করে রেখে দিন। কাজে লাগবে।
তাকে বললাম- বন্ধুদের কপি থেকে পরে ফটোকপি করে রেখে দেবো।
আজ করবো না।
মেয়েটি কোন কথা না শুনে টাকাগুলো দিয়ে গেলেন।বললেন আজকের মতো বাই।
কাল সকালে দেখা হবে। যাওয়ার সময় ফটোকপি করে রেখে দেওয়ার কথা স্মরন করিয়ে দিলেন।
পরের দিন কলেজে গেলাম।মেয়েটি আমায়
দেখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বললেন-কেমন আছেন?
বললাম ভালো আছি। তিনি বললেন একটু দাড়িঁয়ে কথা বলতে। সময় দিতে পারাবোনা বললাম। এখন আমার পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাশ। পরে কথা বলবো।
এ বলে ক্লাশে গেলাম। পদার্থ বিজ্ঞানের স্যারও অনেক নোট দিলেন ফটোকপি করার জন্য।
আমার সেই একই অবস্থা।
ক্লাশ থেকে বের হবার সাথে সাথে দেখলাম মেয়েটি দাড়িঁয়ে আছে আমার ক্লাশ রুমের পাশে।
বললেন চলেন ক্যান্টিনে। আমি না বলাতেই সে হাত ধরে নিয়ে হেলেন ক্যান্টিনে। নাস্তা করালেন।
এবং বললেন ক্লাশে যান। ক্লাশ মিস না করারও অনুরোধ করলেন।
ক্লাশ শেষে কলেজ বাউন্ডারির চারিদিকে তাকিয়ে চাইলাম। মেয়েটি সম্ভবত বাসায় ফিরেছে।
দুপুরে হোস্টেলে এসে খাবার খেলাম।কিছু বিশ্রাম নিয়ে কলেজে প্রাকটিস ক্লাশ করলাম।
আর মনে মনে বাবার কথা স্মরন করলাম।বাবা কবে আসবেন? টাকা, চাউল করে এনে দিবেন?
পর্ব-৩
পরের দিন ছিল রবিবার।
প্রতি দিনের মতো রান্না করে খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।
আজ সেই মেয়েটির সাথে দেখা হলো না।
তাই একটু মন খারাব ছিল। ইংরেজী, গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাশ করে দুপুরে খাবার খাওয়ারের জন্য হোস্টেলে ফেরার পথে মেয়েটির বান্ধবী ছোট্ট একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিলেন।
সেই কাগজে লেখা ছিল-
প্রিয় দাদা,
আমার মন ভালো নেই। তাই কলেজে আসা হলো না। ভালো থেকো।
ইতি
সেই আমি।
কাগজটি পেয়ে আমারও খারাব লাগলো।
খাবার খেয়ে আবারও কলেজে গেলাম এবং ক্লাশও করলাম। তবু দেখা হলো না
তার সাথে।
পরের দিন ৭টায় ঘুম থেকে উঠে হাত মূখ ধূয়ে ভাতের পাতিলা চুলায় তুলে দিলাম।
সেই ক্ষনে তিনি হোস্টেলের আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করলেন -কেমন আছি?
বললাম ভালো আছি। তবে মন ভালো নেয়।
তিনি বললেন -কে?
বললাম হাতে টাকা নেই। তাছাড়া বাড়ী থেকে আনা চাউলগুলোও শেষ হচ্ছে। পরশু বাবা না আসলে না খেয়ে থাকতে হবে।
তিনি বললেন- চিন্তার কোনো কারন নেই। কাল আমি টাকা এনে দেবো।
বললাম -কেন?
তিনি বললেন হাত খরচের জন্য।
আবার বললাম-আপনার থেকে টাকা নিলে ফেরৎ দিতে কষ্ট হবে। লাগবেন না।
তিনি বললেন-ফেরৎ দিতে হবে না।
তাকে বললাম আমার লাগবে না। কারন আমি হোস্টেলের বাইরে কোথাও বাহির হবো না।
কলেজ আর হোস্টেলেই থাকবো।
কথা বলতে বলতে ভাতগুলো হয়ে গেছে। আলু রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সে সময় তিনি বললেন -আজ আলু খাবো না।
আমি মুরগীর মাংস এনেছি। শুধু মুরগীর মাংস দিয়ে খাবো।
তাকে বললাম-আমার জন্য এত কষ্ট করেন কেন?
আপনার "মা" কি জানেন? এখানে এসেছেন? মাংসের তরকারী এনেছেন।
তিনি বললেন- মা'র অনুমিত নিয়ে মাংস নিয়ে এসেছি। ভোরে মা রান্না করে দিয়েছে।
মাকে আপনার কথা বলেছি। তাই মা'ই বলেছে মাংস নিয়ে আসতে।
যতারীতি খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।এবং ক্লাশগুলো করার পর দুপুরে খাবারের জন্য হোস্টেলে আসার পথে আবার তার সাথে দেখা হলো।
তিনি আমার সাথে হোস্টেলে আসলেন। দু'জনে খাবার শেষে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি ঠিক সে সময় বাবা রুমের বাইরে থেকে আমার রুম মেট থেকে জিজ্ঞেস করলেন আমার "কালা বাবা" কি এ রুমে থাকে।
রুম মেট আমাকে ডাক দিয়ে বললেন -দাদা আপনার বাবা এসেছেন।
তখন আমি খুশি হয়ে বাবা'কে ডাক দিলাম রুমে আসার জন্য।
বাবা চাউল এক বস্তা কাঁধে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।
বাবা'কে পায়ে ধরে প্রণাম দিলাম।
আমার সাথে মেয়েটিও প্রণাম দিলেন।
বাবা বললেন মেয়েটি কে?
বাবাকে বললাম আমার বন্ধু।
বাবাকে পানি দিলাম। ৫/৬ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে "বাবা" বললেন-
"কালা বাবা" আমি চলে যাবো। দেরী হলে গাড়ী পাবো না।
বাবা আমাকে ২ মাসের খরচের ৩৩০০ শত টাকা হাতে দিলেন।
আর বললেন তোমার প্রাইভেটের টাকাগুলো দিয়ে দিও।
অবশিষ্ট টাকাগুলো দিয়ে কষ্ট করে ২ মাস চলতে হবে।
"বাবা" দীর্ঘ একটা নিঃস্বাস ছেড়ে দিয়ে বললেন সেই ভোর ৪টায় বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। বাসায় ফিরতে রাত ৮/৯ টা বাজবে।
এ বলে চলে আসলেন।বাবা ধূতি পড়েন।
বাবা আসার পর মেয়েটি বললেন -আপনার বাবা আপনার জন্য অনেক অনেক কষ্ট করেন?
তাকে বললাম -আমি গ্রামের লোক।কৃষকের ছেলে। পানছড়ি উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রামে থাকি।
তাই বাবাকে সেই পাখি ডাকা ভোরে আসতে হয়েছে। ঘরে ফিরতে রাত ৮/৯ টা বেজে যেতে পারে। এভাবে কথা বলতে বলতে কলেজে দিকে রওনা দিলাম দু"জনে। ক্লাশ শেষে বিকালে আমাকে বাই বাই কাল দেখা হবে বলে চলে গেলেন।
আমিও হোস্টেলে গেলাম মনের আনন্দে।
পর্ব-৪
প্রতি দিনের মতো করে সহপাঠীদের নিয়ে কলেজে গেলাম।
তবে আজ সকালে দেখা হয়নি। দু'টি ক্লাশ করে গণিত ৩য় পত্রের খুটিনাটি জানার জন্য আমার ৩ সহপাঠীসহ লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রায় আধা ঘন্টায় গণিতের অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম।
লাইব্রেরী থেকে বাহির হওয়ার পথে মেয়েটির সাথে দেখা হল।আমাকে দেখে মেয়েটি বন্ধুদের সামনে
"দা -আ-দা" (যেন এক নরম সুরে)ডাক দিলেন।
ডাক শুনে বন্ধুদের বললাম
আপনারা ক্লাশে যান। আমি আসতেছি। সহপাঠীরা চলে যাওয়ার পর মেয়েটির ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে গেলাম।
মেয়েটিকে বিনয়ের সুরে বললাম
আমার এখন গণিতের ক্লাশ। ক্লাশে যাবো। মেয়েটি হ্যাঁ না কিছুই বললেন না।
বললাম ঘন্টা খানেক পরে দেখাা হবে। এবং
মেয়েটিকেও ক্লাশে যেতে অনুরোধ করলাম।
মেয়েটি অনেকটা মুখ কালো করে ক্লাশে গেলেন।
ক্লাশ শেষে মেয়েটির সাথে দেখা হলে
মেয়েটি বললেন চলেন গাছের ছায়ায় গল্প করি।
মেয়েটির কথা সাড়া দিয়ে মেয়েটির সাথে গাছতলায় গেলাম।
সাথে মেয়েটির এক বান্ধবীও ছিল।
গাছের ছায়ায় বসার সাথে সাথে
মেয়েটি বললেন এখন থেকে তুমি বলতে হবে।
আপনি বললে অনেক দূরে মনে হয়। তাই আপনি করে কথা না বলার অনুরোধ করলেন।
মেয়েটিকে বললাম-দেখেন আমি কৃষকের ছেলে। আমরা সাত ভাইবোন।
২ ভাই ৫বোন।বড় ভাই ইন্টার পড়ার সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমি গরীবের ছেলে।
আমি সবার ছোট। বিএসসি ভর্তি হওয়ার জন্য ২২ হাজার টাকা দিয়ে
বাবার ১ কানি(৪০শতাংশ)ধান্য জমি বিক্রি করতে হয়েছে। সে টাকা দিয়ে বিএসসি পড়তে এসেছি। জানিনা সেই টাকা দিয়ে বিএসসি শেষ করতে পারবো কিনা? আর
আপনিতো সরকারী চাকুরী জীবির মেয়ে।আপনার বাবা মা দু'জনেই সরকারী চাকুরী করেন।
প্রেমের সম্পর্ক হলেও আপনাকে হয়ত আমি নাও পেতে পারি।এভাবে বলার সাথে সাথে মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বললেন-আমি সবকিছুই মানি।
মেনে নিয়েছি বিধায় আপনার কাছে আসি।
তখন মেয়েটিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা কেন জানি হারিয়ে ফেলেছি।
বললাম আজ থেকে তুমিই বলবো। আর কেঁদো না।
চোখের পানি মুছতে বলার সাথে সাথে সে মুছে নিল।
এরপর
মেয়েটিকে বললাম তোমায় কি নামে ডাকতে পারি?
মেয়েটি বলল "চিজি" বলে ডাকো।
তখন থেকে মেয়েটি আমার জন্য "চিজি" হয়ে গেল।
এবং সে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল।
খামটি তার সামনে খুলতে চাইলে সে না খোলার অনুরোধ করল।
তাই খামটি পকেটে নিতে হলো।
গাছের ছায়া থেকে কলেজে এসে দেখি আমার সহপাঠীরা সবাই চলে গেছে।
এবং কি তার সহপাঠীরাও ।
সে আমাকে বাই বাই বলে চোখে প্রেমের ভাব দেখিয়ে হাতে দৃষ্টিতে লাভ ইউ বলে চলে গেল।
আর আমি খামটি নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম।
পর্ব-৫
বিকাল ৫টা। রুমে যাচ্ছি আর পকেটের খাম থেকে কি যেন প্রেমের আভাস পাচ্ছি।
হোস্টেলের কাছে পৌঁছতেই দেখি হোস্টেলে সহপাঠিরা মাঠে খেলা খেলতেছে।
হোস্টেলের ছোট ভায়েরা কিছু না বললেও সহপাঠিরা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রসিকতা করতে শুরু করেছে।আর আমি কাউকে কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
ড্রেস পরিবর্তন করে স্নান করে হোস্টেলের বারান্দায় একা একা বসে আছি।
আর চিন্তাা করছি "চিজি"কে নিয়ে।
আর মনে মনে বললাম-আমি কি চিজি'র জন্য যোগ্য?
তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বো ? সম্পর্ক করলেও জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো ?
এ রকম হাজারো প্রশ্ন করছি মনে মনে।
যেন চিন্তার মহা সাগরে ভাসতেছি।সে সময়
পাশের রুমে থেকে ববের হয়ে এক বড় ভাই(তিনি রাস্ট্র বিজ্ঞানে এমএ পড়তেছেন)
আমাকে দেখে বললেন- কিরে ছোট ভাই, খেলা না খেলে একা একা বসে আছ কেন?
মন খারাব নাকি?
তাঁকে বললাম-দাদা, শরীর দুর্বল লাগছে তাই।
খেলা শেষে করে সবাই যার যার রুমে আসলো। অনেকেই স্নান করতে গেল।
আর আমি নিঃসঙ্গ করে একা একা বসে আছি। তখন প্রায় সন্ধ্যা।
আমিও রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে পড়ার জন্য বসে গেলাম।
মন মানছে না। বারবার গাছ তলায় গল্প করার কথাগুলো ভেসে আসছে দু'চোখে।
আর তখনি পকেট থেকে খামটি বের করে পড়তে শুরু করলাম।
প্রানের প্রিয়, দাদা,
একরাজ রজনী গন্ধা ফুলের শুভেচ্ছা রইল। খুব বেশি ভালোবাসি তাই তুমি বলে সম্বোধন করলাম।
জানি, চিঠি পেয়ে রাগ করবে। আবেককে সামলাতে না পেরে তবুও লিখতে বাধ্য হয়েছি।
তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে।ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে না পেলে আমি চলে যাবো দূরে,সেই দূরে।অনেক দূরে।
হয়ত জন্ম-জন্মান্তরে দেখা হবে না আর।
জানি পাবো না। তবুও পেতে চাই।
সৃষ্টি ককর্তার কাছে প্রার্থনা করছি
তুমি যেন আমার পবিত্র ভালবাসা গ্রহণ কর।
দাদা, আমার প্রার্থনাটি পূর্ণ করে দাও।
বিভো, দেহ হৃদে বল!
না জানি ভক্তি, নাহি জানি তুষ্টি
কি দিয়া করিব, তোমায় আরতি
আমি নিঃসম্বল!
তোমার দুয়ারে আজি রিক্ক করে
দাঁড়ায়েছি প্রভো, সঁপিতে তোমারে
শুধু আঁখি জল,
দেহ হৃদে বল!
ইতি
সেই আমি।
বিঃদ্র ঃ উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
পর্ব -৬
পড়ার টেবিলে বসে চিঠিটা অনেক অনেক বার পড়ে নিলাম।
সব কিছু মুখস্ত হয়ে গেল। তবুও মন ভরেনি।বার বার পড়তে মন চাইছে। ডুবে গেলাম মহা সমুদ্রে। তখন রাত প্রায় ১০টা।
রুমের পাশের সীটের ছোট ভাই, গণিত বই আর খাতা এনে
বলল -দাদা, ক্যালকুলাসের এ দু'টি অংক পারতেছি না।
আমাকে একটু করিয়ে দেন। তাকে অংক দু'টি করিয়ে দিয়ে
আমিও গণিতের কয়েকটি সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করলাম। ৩-৪টি সমস্যা সমাধান করলাম মাত্র। কি যেন টেনশন মায়ায় ডুকে গেল নিজেও বুজলাম না।
তারপর ওয়াশ রুম থেকে হাত-মূখ ধুয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসে পদার্থ বিজ্ঞানের বাড়ী কাজগুলো করে নিলাম।
ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে গেলাম।
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে তবুও ঘুম আসছে না।
চোখ বন্ধ করতেই মেয়েটির ছবি ভেসে উঠে বার বার।
এভাবে অনেক ক্ষণ থাকার পর অবশেষে নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছি।
খুব ভোরে রাঙামাটি রাজ বন বিহার থেকে মাইকের সুরে গৌতম বুদ্ধে অমৃতময় সুত্রগুলো শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
হাত-মূখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতেই চিঠিটির দু'একটি লাইন আবারও মনে পড়ে গেল।
তবুও মনযোগ দিয়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত পড়ে নিলাম।
তবে কোনো পড়া মুখস্ত করতে পারিনি।
ভাতের পাতিলা চুলায় বসিয়ে দিলাম।
আর আলু রান্না করলাম।
স্নান করে খাবার শেষে আজ সহকর্মীদের বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্যাম্পাসের বারান্দায় দাড়িঁয়ে রইলাম।
কিছুক্ষণ পরে কলেজ বাস থেকে
"চিজি" নেমে গিয়ে ক্যাম্পাসের চারিদিক টাকিয়ে দেখল। মনে হয় যেন আমাকে খুঁজচ্ছে।
ক্যাম্পাসের বান্দার এসে আমায় দেখে
দাদা’ করে ডাক দিয়ে আমার কাছে এসে বলল চল ক্যান্টিনে/লাইব্রেরীতে।
আমি তাকে লাইব্রেরীতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে সে আমাকে ধরে বলল চল লাইব্রেরীতে।
লাইব্রেরীতে গিয়ে পাশাপাশি বসে আমার হাত ধরে বলল- দাদা, খুঁশিতে কাল রাতভর ঘুমাতে পারিনি।
সত্যি করে বল তুমি আমার হবে ?
বললাম-হবো।
আর শর্ত দিলাম যে
ক্লাশ চলাকালীন সময়ে আমাকে যেন না ডাকে।
চিজি রাজি হয়ে বলল-পড়ার সময় তোমাকে ডাকবো না।
আর বলল আমার চিঠি উত্তর কোথায়।চিজি'কে বললাম-চিঠি তো লাগবে না।
কারন তোমাকে আমি মেনে নিয়েছি। চিজি অনেকটা অভিমান করে বলল-
আমার চিঠির উত্তর চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে।
চিজি'কে বললাম তোমার চিঠির উত্তর দেবো পরশু দেবো।চিন্তা করো না।
এই বলে দু'জনেই ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে দুপুরে দেখা হয়নি চিজি'র সাথে।
দুপুরের খাবারের জন্য হোস্টেলে আসলাম। তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
গাছ তলায় দু'জনে অনেক ক্ষণ গল্প করলাম। আর মনের আবেগের কথা প্রকাশ করলাম।
এরপর ক্লাশে চলে গেলাম। একটা ক্লাশ করার পর বের হতেই চিজি বলল।আমার ক্লাশ শেষ।
তোমার আরো ক্লাশ আছে। ক্লাশ কর।
আমি চলে যাচ্ছি বলে চিঠির মাধ্যমে চিঠির উত্তর পাওয়ার শর্ত জুরে দিয়ে লাভ ইউ দাদা বলে চলে গেল।
পর্ব -৭
ক্লাশ শেষে সহপাঠীদের সাথে হোস্টেলে আসলাম।
বিকেলে হোস্টেল মাঠে খেলা খেলে সময় পার করলাম।
খেলা শেষে পড়ায় বসতেই আবার চিজি
মূখ খানি চোখে ভেসে উঠল।
চিজি ছিল আমার চোখে দেখা প্রথম বিশ্ব সুন্দরী।
চোখ, নাক, খুবই সুন্দর ছিল। গায়ের রঙ ফর্সা আর চুল ছিল কোমর পর্যন্ত লম্বা। উচ্চতা
আমার সম পরিমান লম্বা।
মনে হয় যেন পরি।
বয়স কম। তাই একটু চঞ্চল প্রকৃতির। কয়েক দিন সম্পর্কে
আমার সাথে প্রচুর দুষ্টামি করতো।
সুযোগ পেলে জরিয়ে ধরার চেষ্টা করতো।
সেইগুলো চোখে ভাসতে থাকে সব সময়।
তবুও বই পড়ার চেষ্টা করলাম।
সফল হতে পারিনি।
রুমের বাকী দুই ছোট ভাই নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক চেষ্টা করে আমি নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিতে চাইলেও পারিনি। অবশেষে ঘুমিয়ে পড়েছি।
ভোরে আমার পাশে সীটের ছোট ভাইটি জেগে উঠে বলল দাদা উঠেন। ৪টা বেজে গেছে।
হাত মুখ ধৌত করে পড়ার টেবিলে বসলাম।
বেশ কিছু পড়া আয়ত্বেও নিলাম।
৭টা পর ভাত রান্না শুরু করলাম।
প্রায় আধা ঘন্টার পর দোরজায় দেখি চিজি এসে গেছে। আর বলছে।
আজ 'মা' ভোরে রান্না করে তোমার জন্য মাছ পাঠিয়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি আসলাম। আমিও খায়নি। একসাথে খাবো।
দাদা, আজ বিকেলে তোমাকে নিতে বলেছে। অবশ্যই যেতে হবে।
চিজিকে বললাম আজ যাবো না। কয়েক দিন পর যাবো।
তবুও নিতে চাইছে সে। তাকে বললাম মা'কে বলো আজ পড়া লেখার চাপ বেশী।
তাই আসতেছে না। কয়েক দিন পরে আসবে।
এভাবে বলতে বলতে ভাত খাওয়া সেরে ফেললাম।এরপর কলেজে গেলাম।
ক্লাশ শুরু না হওয়ায় দু'জনে গাছের তলা বসে গেলাম।
আমার দু'হাত ধরে চিজি বলল
দাদা-তুমি আমার প্রাণ। তুমি আমার সব কিছু। তোমায় ছাড়া বাসবো না।তোমায় না পেলে আমান জীবন বৃথা হবে।
চিজি'কে বললাম- তোমার জন্য হয়েছে আমার জন্ম। তোমাকে খুবই ভালোবেসেছি।
তুমি ছাড়া আমার জীবনও অচল হবে।
চিজি' কে আরো বললাম-আমাদের সম্পর্কটা তোমার পরিবার
মেনে না নিলে কি করবা?
চিজি হেঁসে হেঁসে বলল-মা আর বাবা আমাকে খুবই ভালোবাসে। তোমার ব্যাপারে মাকে সব ববলেছি। মা মেনে নিয়েছে।
আর বাবা মায়ের কথা শুনে। বাবাও মেনে নেবে।
মেনে না নিলে পালিয়ে বিয়ে করবো।
চিজি বলল- দাদা, আমার চিটি উত্তর দিলে না যে?
বললাম দেবো, পরশু দেবো বলে- দু'জনে ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে আবার দু'জনে দুপুরের খাবারের
জন্য হোস্টেলে আসলাম।
থাবার শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে গাছ তলায় প্রায় ঘন্টা খানেক আড্ডা দিলাম।
পর্ব -৮
বিকালে ক্লাশ শেষ প্রায় ঘন্টা খানেক গাছ তলায় আড্ডা দিলাম।
আজ চিজি যেন আমার ছাড়ছে না।
আমার হাত দু'টো ধরে
একটার পর একটা প্রশ্ন করতে চলেছে।
আর আমাকে নিয়ে পর্যটন ঝুলন্ট ব্রীজ, সুবলং ঝর্ণায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করছে আর অনুমতি নিচ্ছে।
চিজিকে বললাম- আমার এখনো পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ,সুবলং ঝর্ণা আর কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিলল দেখার সুযোগ হয়নি।
চিজি বলল- এত দিন কেন যাওয়া হয়নি।
চিজি'কে বললাম-এমনিতেই যাওয়া হয়নি।
চিজি আরো বলল-হাতে টাকা নাই তাই যাওয়া হয়নি না?
মাথা নিচু করে হ্যাঁ করলাম।
চিজি বলল- আগামী মাসে বন্ধ আছে।সবগুলোতে ঘুরবো, আড্ডা করবো। তোমার জন্য মা থেকে টাকা চেয়েছি। মা দিয়ে দেবে বলেছে।
আমার মা ০+ রক্তের মানুষ।খুবই সহজ সরল, উপকারী আর উদার মনের মানুষ।
তাই বলতে আমাকে প্রশ্ন করল তোমার রক্তের গ্রুপ কি? আমি অই+ গ্রæপের।
আমি বললাম রক্তের গ্রæপ তো পরীক্ষা করা হয়নি।
কাল করে নিয়ো।মাথা নিচু করে হ্যাঁ বললাম। আর রক্ত পরীক্ষা করার জন্য আমার পকেটি ৫০০ টাকা একটা নোট দিয়ে দিল।
টাকাগুলো না নিতে চেয়ে সে অভিমান করল। আর
কিছুক্ষণ পর আমার চিটির উত্তর চাইল।
আমি একটু আদর করে বললাম -চিজি তোমায় আমি খুবই ভালোবাসি।
তোমাকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি।
আরো অনেক অনেক......
চিঠির প্রসঙ্গে বললাম -প্রতিদিনতো দেখা হয়।
মনের কথাগুলো বলাও হয়। তাই চিটি লিখিনি।
এ কথা বলাতেই চিজি কেঁদে দিল।
আর বলল-তুমি আমাকে ভালোবাস না।আমার সাথে ছলনা করতেছ শুধু।
আরো অনেক কিছু। তাই চিঠি দিচ্ছ না। অনেক ক্ষণ কোনো কথা না বলে আমার হাত দু'তো ধরে মাথা নিচু করে রইল।
বুঝাতে চাইলেও বুঝাতে পারিনি। চোখ,নাক,মুখ মুছতে শুরু করল।
তারপর চিজিকে বললাম আমার একটা হাত ছেড়ে দাও। তোমার জন্য সুখবর দেবো। তবুও সে বিশ্বাস করল না।
অবশেষে একটা হাত ছেড়ে দিল।
তারপর প্যান্টের পকেট থেকে চিজির হাতে খামটি ধরিয়ে দিলাম।
তখন সে খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরতে চাইলো।
সাথে সাথে বললাম পাশে কেউ দেখে ফেলবে। জরিয়ে ধরো না।
পরে অনেক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল।চোখ,মুখ মুছতে মুছতে বলল তুমিই আমার জীবন। তুমি আমার স্বপ্ন। তুমিই আমার শ্রষ্টা। তুমি আমার সবকিছু।
আমার সামনে খামটি খুলতে চাইল। না খুলতে অনুরোধ করাতে ব্যাগের পার্সে ঢুকিয়ে নিল।
চিজিকে বললাম প্রায় ৫টা বেজে গেল তোমাকে সিএনজিতে তুলে দিতে হবে।চল।
চিজি আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাইল।
আমি না বলাতে সে আমার হাত ধরে উঠে গেল।
কলেজ গেইটে এসে চিজি'কে সিএনজিতে তুলে দিলাম।
খামটি পেয়ে চিজিও মনের খুঁশিতে চলে গেল।আর আমি হোস্টেলে চলে আসলাম।
পর্ব -৯
পরের দিন বৃস্পতিবার।
সকাল ৮টায় চিজি হোস্টেল রুমে এসে হাজির হল।
বলল শুভ সকাল।
আমিও উত্তর দিলাম শুভ সকাল।
আজ সে মহা খুশি। 'মা'য়ের আর্শীবাদ পেয়েছে তাই। আর
আমার জন্য একটা উপহার এনেছে। আমার হাতে দিয়ে বলল এখন খোলা যাবেনা।
আমিও অবুঝ শিশুর মতো করে উপহার না খুলে ব্যাগে দেখে রেখে দিলাম।
চিজি বলল-আজ কি পাক করেছ?
বললাম শুধু আলু ভাজি।
চোখের ইশারায়
বুঝলাম সে সকালে কিছুই খাইনি।
ডিমটি চিজির জন্য তাড়াতাড়ি ভাজি করে দিলাম।
আর দু'জনে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি দিয়ে খেতে বসলাম।
তার আলু ভাজি ভাল লাগছে না টের পেয় ডিম ভাজিটি তাকে দিয়ে দিলাম।
সে আমায় অর্ধেক দিয়ে দিলো।
তাকে বললাম তোমারতো আলু ভাজি খাওয়ার অভ্যাস নেই তুমি পুরোতায় খাও।সে তবুও আলু ভাজি খেতে চাইল। আর বলল তুমি খেতে পারলে আমি পারবোনা কেন?
তোমার সুখে-দুখে আমি। শুধু তোমার জন্য আমার জন্ম। তোমার ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
তোমাকে আমি খুবই ভালোবাসি।
আমি আবারও অবাক হয়ে
তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বললাম সত্যি কি তাই?
চিজি বললো- সত্যি,সত্যি,সত্যি।
গল্প করতে করতে ভাত খাওয়া শেষ করলাম।
এরপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে রওনা দিলাম।
যাওয়ার সময় চিঠির কথাগুলো সত্য কিনা জিজ্ঞেস করল।
তাকে বললাম চিটিতে যা লিখেছি সবি সত্যি।
কথা বলতে বলতে কলেজে পৌঁছে গেলাম।
ক্লাশ শুরু হতে আর বেশী দেরী নেই।
চিজিকে বললাম তুমিও ক্লাশে যাও।
সে বলল- বাংলা ক্লাশ।
না করলেও চলবে।
আর আমায় জিজ্ঞেস করল তোমার পথম ক্লাশ কি?
বললাম আমাদের রুটিনেও আজ প্রথম ক্লাশ বাংলা।
চিজি বলল-আজ বাংলা ক্লাশ না করলেও চলবে।
আমি বললাম আমি এখনো ক্লাশ মিস করিনি।
চিজি আমার কোনো কথা না শুনে আমার হাত ধরে গাছের তলায় নিয়ে গেল।
বলল-লক্ষী ছেলের মতো এখানে বস।
ক্লাশ মিস করতে পারবো না বলে
উঠে আসতে চাইলে সে অভিমান করে বসে রইল।
তাই আমারও কলেজ জীবনে ঐটি প্রথম
ক্লাশ মিস করতে হলো। আমি অদ্যাবধি ক্লাশ মিস করিনি।
সে আমার থেকে পাওয়া চিঠি পড়ে শুনালো।
চিঠিতে ছিল...
প্রিয়, চিজি,
তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি।
জানি তোমার যোগ্য নয়। তবুও ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
আমিও তোমারকে পেতে চাই জন্ম-জন্মান্তরে।
এ স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হবে কিনা জানিনা।
কারণ তোমার পরিবারে স্ট্যাটাস আর আমার পরিবারে স্ট্যাটাস আকাশ আর পাতালের সমান।
তোমার পরিবার মেনে নেবেনা।
আর গ্রামে গিয়ে তুমি আমার পরিবারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা সন্দেহ।
তাই তোমার সাথে সম্পর্ক করবো কিনা এ নিয়ে আমি মহা সমুদ্রে ভাসতেছি।
ভালো থেকো। শুভ কামনা রইল।
ইতি,
আমি।
পর্ব-১০
সকালে ক্লাশ শেষে দেখা হলো চিজি সাথে।
তখন আমি হোস্টলে আসতেছি।
চিজি আমায় ডাক দিয়ে বলল -কোথায় যাচ্ছ? আমাকে নিচ্ছ না কেন?
বললাম-দুপুরে খাবার খেতে।।
চিজি অভিমান করে বলল- আমারতো পেট নেই।তাই খাওয়ার রুচিও নেই।
চিজিকে বললাম চল হোস্টেলে এক সাথে খাবো।সে বলল আজ যাবো না।
আমি নাস্ট খেয়ে থাকবো।
বললাম-কেন?
সে বলল-আমাকে নেওয়া কোনো ইচ্ছে নেই তাই।
তার অভিমান দেখে আমি আর দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসলাম না।
তখন সে একাই ছিল। আমাকে বলল-যাও খেয়ে আছ।বিকালে তোমার ক্লাশ আছে।
না খেয়ে ক্লাশ করলে মন শরীর দুটোই দুর্বল হবে।
তাহার এমন অভিমানের কথা পেয়ে আমিও তার কাছে গিয়ে বললাম আজ আমিও খাবোনা।
তখন সে বলল-চল ক্যান্টিন থেকে হালকা নাস্টা করে আছি। ক্যান্টিনে গিয় হালকা নাস্টা খেয়ে নিলা।এরপর গাছের তলায় বসলাম।
চিজি আমার বলল-রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা
করার জন্য তোমাকে বলেছি।করেছ কি?
পতি উত্তরে মাথা নিচু করে বললাম করা হয়নি।
সে অনেকটা রাগ করে বলল-আজ বিকালে করে নেবো দু'জনে গিয়ে।
তাকে বললাম পরে করবো।তোমার দেওয়া সেই ৫০০ টাকা আমার খরচ হয়ে গেছে।তাই করা হয়নি।
চিজি বলল- তোমার টাকার চিন্তা করতে হবে না।আমি দেবো।
আজ বিকালে যাবো। আমি অনুরোধ করলাম আজ না কাল শুক্রবারে করবো।
আমাকে নেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করল।আমি গেলাম না।
কারণ আমার হাতে টাকা নেই।
যা আছে তা দিয়ে মাস চলতে হবে।
চিচিকে বললাম এসব বাত দাও।
ব্লাড টেস্ট যেকোনো সময় করা যাবো।
চিজি বলল কাল শুক্রবার নাস্টা করার সাথে নাথে বনরুপা লাইব্রেরী দোকানে আসবে।
সেখানো দেখা হবে। ব্লাড টেস্ট করার পর ঝুলনাত ব্রীজে যাবো।
পড়ে গেলাম আরো মহা ঝামেলায়।
আমার হাতকড়ি প্রায় শেষ।তবুও তাবে বললাম আসবো।
চিজি বলল- তোমাকে আমি জন্ম-জন্মান্তরে ক পেতে চাই।
তোমাকে ছাড়া আমি অচল জয়ে যাবো।
তুমি আমায় গ্রহণ না করলে আমি বিষ খেয়ে মেরবো না হয় অন্য পদ ধরবো।
যা তোমার কল্পনাও বাইরে ছিল।
পরক্ষনে দেখি নবাই নিজ নিজ বাসায় গেছে।
শুধু আমি আর চিজি হাছ তৈায় দেখলাম শুধু আমরা রয়েছি।
চিজিকে বললাম তুমিও যাও তোমার মা চিন্তায় থাকবে ।
যাওয়ার সময় চিজি আমার
হাতে দুটো চুমু দিয়ে বলল ভালো থাকিছ। কাল বনরুপায় দেখা হবে।
তোমায় রক্তের গ্রæপ পরিক্ষা করতে হবে। মনে রেখো কিন্তু।
পর্ব-১১
হোস্টেলে ফিরতেই দেখি বিকাল প্রায় ৫টা বেজে গেছে।
হোস্টেলে বন্ধুরা হোস্টেলের মাঠে খেলা খেলছে।
হ্যাঁ আগে বলা হয়নি।
আমাদে বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই এসে গেছেন রাঙ্গুনিয়া থেকে ।
কলেজ কতৃপক্ষের সাথে কি যেনে একটা সমস্যার কারনে রাগ করে প্রায় বছর খানেক আগে বাড়ী চলে গেছে। আর সপ্তাহ খানেক আগে আবার হোস্টেলে এসেছে।
সেই সপ্তাহ খানেক ধরে আমার আর দুপুরে বা বিকেলে ঠান্ডা ভাত আর মাঝে মাঝে পচাঁ বাসি খাবার খেতে হচ্ছেনা। এবার দুপুরে আর রাত্রে গরম খাওয়ার খাওয়া হচ্ছে।
আরো পরে গেলাম এক সমস্যায়।
তখন হোস্টেলের ডাইল আমার মোটেই ভালো লাগেনি।
সপ্তাহ খানেক ধরে খেতে খেতে তাও অভ্যাসে পরিণত হলো।
আগামী কাল শুক্রবার খাবার মজা করবো, বিরানি, সাদা ভাত, মাছ,মাংছ দিয়ে মজা করে খাবো বলে ম্যাচ ম্যানেজারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আমাদের চাহিদা মতো ম্যাচ ম্যানেজার বিকালে মুরগী, মাছ কিনে আনলেন।
সেই মুরগীগুলো রেখে দিলাম স্টোর রুমে।
আমরা অনেক দিন ধরে মজার খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম।
তাই সবাই একটু হাঁসি-খুশিতে ছিলাম।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো।
মজার মজার খাবার খাবো।
যা অনেক দিন ধরে খাওয়া হয়নি।
আজ কলেজ হোলি দে। তাই সবাই একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠেছে।
আমার পাশে রুমে থাকতেন ম্যাচ ম্যানেজার।
প্রতিমাসে একজন করে ম্যাচ ম্যানেজার পরিবর্তন করতাম।
সেই ম্যানেজারকে কাছে সাত সকালে এসে অভিযোগ দিলেন বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
দাদা দাদা করে ডাক দিয়ে ম্যানেজারকে নেপাল বড়ুয়া ডাকলেন।
তার শব্দে আমারও ঘুম ভেঙ্গে গেল।
নেপাল দা ম্যানেজারকে বললেন দাদা আমাদের স্টোর থেকে মুরগিগুলো চুরি হয়ে গেছে।
আমরা যারা সিনিয়র ছিলাম সবাই বলাবলি করলাম। তদন্ত করে বুঝতে পারলাম
আমাদের মুরগিগুলো শিয়াল মামা চুরি করেছে।
তারপর হোস্টেলের যারা থাকি (প্রায় ৩০/৩৫ জন) হবে।
আলোচনা করলাম কি করা যায়।
বড় ভায়েরা মানে আমরা যারা বিএ, বিএসসি,বিকম, পড়ি আর দু'একজন আছে যারা মাস্টার করতেছেন তারা মিলে পরামর্শ করে শিয়াল মামার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার ঘোষণা দিলাম।
হোস্টেলে কোদাল, কুন্তি নেই।
তাই আরো পরে গেলাম ঝামেলায়।
কোদাল, কুন্তির জন্য হোস্টেলে পাশে এলাকা কল্যাণপুর থেকে বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করলাম।
পর্ব-১২(শিয়াল মামর খোঁজে)
রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের পিছনে বিশাল এলাকা খালি জায়গা।
ঝোঁপ-ঝাড়ে পরিপূর্ণ সেই খালি জায়গাটি।
সেখানে রাত-দিন শিয়ালের বিচরন ভূমি।
সন্ধ্যা হতে না হতেই ডাক মারে শিয়ালগুলো।
এমন কি মেঘলা দিনেও।
বৃহস্পতিবারে জমা রাখা মুরগিগুলো সেই শেয়ালগুলো চুরি করে খেয়ে ফেলেছে।
বলেছেন হোস্টেলের বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
আজ শুক্রবার বিরানি খাবার আশা ছিল। তাই বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবারে বিকালে
মুরগিগুলো আনা হয়েছে।
বাবুর্চি নেপালের খবর শুনে হোস্টেলে সবাই জড়ো হলাম।
আজ যেহেতু শুক্রবার। কলেজ নেই।
কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ী থেকে আনা কোদাল, কুন্তি, দা আনা হয়েছে।
আমার ক্লাশ মেট ছিলেনন স্বপন চাকমা, সুভাস কীর্তি চাকমা, বড় ভাই ছিলেন রুপায়ন চাকমা, ছোট ভাই ছিলেন দিগন্তু চাকমা।
এইচএসসির ছাত্র ছিলেন ত্রিরতন চাকমা, মিন্টু চাকমা, সুপ্রকাশ চাকমা, নিউটন চাকমা, অভিলাষ ত্রিপুরা, বাবুল চাকমা, অনিল জীবন চাকমা, রিন্টু চাকমা সহ আরো অনেকে।
যাদের নাম এখন মনে নেয়।
হোস্টেলে আমরা প্রায় ৪০জনের কাছাকাছি ছাত্র ছিলাম।
আমরা কয়েকটা গ্রæপে ভাগ হয়ে শেয়াল খুঁজতে জঙ্গলে ডুকে পড়লাম।
এক গ্রæপের ছাত্ররা দেখলেন একটি শিয়াল ঘুমাচ্ছে।
সে শিয়ালকে দেখা মাত্র ২/৩ ছাত্র ঘুমন্ত অবস্থায় মেরে পেলেছে ওরা।
শুরু হলো আবার শিয়াল খোঁজার অভিযান।
পেলাম কয়েকটি শেয়ালের গর্ত।
এবার শুরু শেয়ালর গর্ত খুঁড়ানো।
বেশ কয়েকটি গর্ত খুঁড়ানো হয়েছে।
একটি গর্ত ২/৩ টি শিয়ালের 'ছা' পেলাম।
আবার ২টি গর্ত থেকে কয়েকটি 'ছা' পেলাম। সেগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে।
সেগুলো নিয়ে অনেকেই দুষ্টামি শুরু করেছে।
মেরে ফেলা শিয়াল আর 'ছা' গুলো আনা হয়েছে হোস্টেলের মাঠে।
কয়েকজন ছাত্র অতি উৎসাহিত হয়ে মৃত শিয়ালকে নিয়ে
কলেজ ক্যান্টিনে সামনে নিমগাছে বেঁধে ভাগ ভাতোয়ারা করেছে।
শুনেছে শিয়ালের মাংস খেলে নাকি বাত, শূলনি ছাপানি ভালো হয়।
তাই শিয়ালের মাংস মূহুর্তে শেষ।
আর শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য বড় শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
শেয়ালদের কারনে আমার আজ বনরুপায় যাওয়া হয়নি। তাই রক্ত পরীক্ষা করাও হয়নি।
পর্ব-১৩(শিয়াল ছা পালানো)
শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য, মা শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
রাত হলে মা শিয়ালের ছা'গুলো বেঁধে রাখার রুমে আশেপাশে ঘুরতে থাকে।
সে সুযোগে মা শিয়ালদের মেরে ফেলার চেষ্টা করি।
আর তাই আমরা পালাক্রমে ছৌকি দিই। আর বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়াতো প্রায় সময় থাকে।
শিয়ালের ছা'গুলোকে আমরা মুরগির নাড়ি-ভূড়িগুলো খেতে দিই।
শিয়ালের ছা'গুলো দিনভর ডাকাডাকি করে আর রাত হলেতো বেশী।
তাদের ডাক শুনে মা শিয়ালগুলো অছে।
অনেক বার চেষ্টা করেছি মা শিয়ালগুলোকে মেরে ফেলার। পারিনি।
কয়েকটা দিন রাখার পর শিয়ালের ছা'গুলো আমাদের দেখলে পাশে আছে।
পোষ মানতে শুরুকরেছে। শিয়ালের ছা'গুলো হোস্টেল রুমে আছে জানতে পেরে কলেজের অনেক বন্ধু-বান্ধবী দেখতে এসেছে।
খাবার খাওয়ার জন্য সবসময় ডাকাডাকি করে আর রুমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হোস্টেলের চারিপাশ।
হোস্টেল থেকে কলেজের দূরত্ব বেশী হলে ৫০০ গজ হবে।
হোস্টেল থেকে কলেজে যাচ্ছি। কয়েকজন বান্ধবী মিলে সে পথের ধারে তারা আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে কলেজ গেলাম। সেও কিছু বললো না।
শুক্রবারে শিয়াল খুঁড়ার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য বনরুপায় যাওয়া হয়নি।
মনে হয় তাই সে আমার উপর
অভিমান করে বসে আছে।
ক্লাশ করার পর দুপুেের খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসতেছি।
ঠিক সে সময় পথের ধারে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা তিন বন্ধু যাচ্ছিলাম হোস্টেলে।
পিছনে আমি। বন্ধুগুলো থাকার কারনে আমি তাকে কিছু বলিনি।
সে রাগ করে আমার হাত ধরে বলল-কি হয়েছে তোমার?
কালকে বনরুপায় আসনি কেন? তোমার অপেক্ষায় অনেক প্রায় ২ ঘন্টা ছিলাম।
এত অহঙকার কর কেন?
বললাম-কিছুই হয়নি। শরীর দুর্বল লাগছে।
এই বলে হোস্টেলে হেলাম।
আর সে রাগ করে পথের ধারে দাঁড়িয়ে রইল।
বললাম হোস্টেলে চল।আসলো না।খুব অভিমানে রইল।
পর্ব-১৪
দুপুরের খাওয়ার পর কয়েজন মিলে শিয়ালের ছা গুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালের ছা গুলো দৌঁড়ে হোস্টেলে জঙ্গলে চলে গেল আর ডাকাডাকি শুরু করল।
সে দিন আকাশ মেঘলা ছিল।
ছা'গুলো ছেড়ে দেওয়ার পর বিকালে কলেজে গেলাম। ক্লাশ শেষে বিকালে হোস্টেলে চলে আসলাম।
বিকালে তার সাথে দেখা হয়নি। পরের দিন কলেজেও
তাকে তেমন সময় দেওয়া হয়নি।
তাই হয়তো অভিমান করে চলে গেছে।
গত শুক্রবারে শিয়ালের ছা গুলো ধরার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ জানা হয়নি।
তাই বনরুপায়ও যাওয়া হয়নি।
পরের দিন কলেজে যাওয়ার পথে দেখা হলো চিজির সাথে।
দেখা মাত্র সে আমার পাশে এসে হাত ধরে গাছতলায় নিতে চেয়েছিল।
ক্লাশ সময় হওয়ায় তার সাথে যাওয়া হয়নি।
কলেজে ২য় পিরিয়ডে ক্লাশ চলার সময় কি যে গন্ডগোল শুরু হয়েছে।
ক্লাশ শেষ না করে আমি ক্লাশ রুম থেকে বাইরে আসলাম।
বাইরে দেখি মারামারি শুরু হয়েছে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আর ছাত্রলীগের ছেলেদের মধ্যে কোন একটা মহিলা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়েছে।
পরবর্তীতে পাহাড়ী-বাঙালী সম্প্রদায় পর্যন্ত চলে গেছে।
তখন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন
ড. এনায়েতুর রহমান।
কিছুক্ষণ পর কলেজ মাঠে পুলিশ এসে গেল।
হোস্টেলের ছাত্ররা সবাই হোস্টেলে চলে আসলাম।
তখন কলেজ গেইট এলাকার পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত হয়েছে।
শুনেছি কে বা কারা কলেজ গেইটের দোকানগুলো আগুন দিতে চেয়েছিল।
পরিস্থিতি খুব বেশী উত্তপ্ত হওয়ায় অধ্যক্ষ মহোদয় অনিদিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের ঘোষণা দিলে।
আর আমাদের হোস্টেলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিকালের মধ্যে হোস্টেল ত্যাগ করতে হবে বলে হোস্টেলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আমরা যারা খাগড়াছড়ি থেকে হোস্টেলে রয়েছি তারা অধ্যক্ষ সারের কাছে গিয়ে শুধু রাত্রি যাপনের জন্য অনুমোদন পেয়েছি।
তাও অনেক কষ্টে।
পরের দুই দিন হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় হোস্টেলে ছাত্ররা(প্রায় ২০জনের কাছাকাছি) লঞ্চে করে নানিয়াচর হইয়া মহালছড়ি আমলাম।
সেদিনই প্রথম নানিয়াচর বাজার দেখলাম।তাও আবার লঞ্চ থেকে।
তবে অধ্যাবধি যাওয়া হয়নি নানিয়াচরে।
১৯৯৭ সাল পার্বত্য চুক্তির কাছাকাছি হওয়ায় ১৫ দিনপর আমাদের কলেজ খুলে গেছে।
কলেজ খোলার ১ দিন আগে হোস্টেলে গেলাম। তখন হোস্টেলটি নোংরায় পরিপূর্ণ। হোস্টেলে চারিদিক পরিস্কার করতে প্রায় কয়েক ঘন্টা চলে গেলে আমাদের।
কয়েক দিন পরে আমার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারনে কলেজে গিয়ে চিজির সাথে দেখা হলেও আমি সময় দিতে পারিনি।
তাই সে খুব বেশী অভিমান করে আছে।
এক সপ্তাহ পর ৩য় বর্ষের পরীক্ষা হলো।
উত্তীর্ন হয়ে ৪র্থ বর্ষে ভর্তি হলাম।
চলমান-
রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের জীবন।
নূতন ধন চাকমা, সংবাদকর্মী
পর্ব-১-১৪
বিএসসি পড়তাম।
সকালে রান্না করে সেই খাবার রাতেও খেতে হতো। গরমে তরকারি বাসি হয়ে যেতো।
সারাদিন কলেজে ক্লাশ।
বিকেলে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশ। হোস্টেলে ফিরতে মাঝে২ সন্ধ্যা হয়ে যেত। রুমে ফেরার পর শরীর দুর্বল হয়ে যেতো।
স্নান শেষে একটু বিশ্রাম নিলেই রাত হয়ে যেতো।
তাই মাঝে মাঝে রান্না করারও সুযোগ হতো না। সকালের রান্না পর বিকালে তরকারী বাসি হয়ে যেত। এমনভাবে বাসি হয়ে যেত যে-তরকারী সমূহ ফেনায় ভরে যেত। তবুও খেয়েছি সেই বাসি খাবার।কত বাসি খাবার খেয়েছি। তার কোনো ইয়াত্ত¡া নেই। সে খরব বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে কলেজে। তখন অনেক বন্ধু বান্ধবী জেনে যায় বাসি খাবার খাওয়ার কথা।মাঝে মাঝে রাতভর থাকে না বিদ্যুৎ। গরমে ছটপট করে লেখা লেখাপড়া করতে হয়েছে। হোস্টেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে মাঝে মাঝে ১১/১২টা বেজে যেত। তখন রাতভর চুরি করে লেখাপড়া করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।প্রায় সময় বন্ধুদের থেকে চুরি করে রাতভর লেখাপড়া চালিয় যেতাম।
মাঝে২ ভোরে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা যখন সূত্রপাত করত তখন ঘুমিয়ে পড়তাম।
আবার রান্নার জন্য ৭টা বা সাড়ে ৭টা সময় উঠতে হতো।।হাতমূখ দোত করা, স্নান করা, ওয়াশ রুমে কাজ শেষ করতে আর রান্না করতে করতে সময় যেত প্রায় ঘন্টা খানেক। কলেজে যেতে হবে, কলেজের স্যারদের বাড়ী কাজ করতে করতে চলে যেত আরো প্রায় ঘন্টা খানেক।
সেই অনেক পরিশ্রমের কাজ ছিল। অনেক কষ্ট করেছি জীবনে সফলতার জন্য। এমনি একটা দিনে রান্না শেষে সকালে মন খারাব করে আনমনে বসে আছি হোস্টেলে বারান্দায়।
হঠাৎ এক বন্ধবী এসে আমায় অভ্যার্থনা জানালো। (বান্ধবীটি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।)
জিজ্ঞেস করলো কেমন আছি। প্রতি উত্তরে, দুঃখের সুরে লম্বা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে -
বললাম, আছি ভালো কোনো মতে।
তিনি আমার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে দেওয়া অনুভব করে বললেন- দাদা, খুবই কষ্টে আছেন মনে হয়।
তাকে বললাম- আমি কৃষকের ছেলে। কষ্টতো শুধু আমাদের জন্য এসেছে। আপনাদের জন্য নয়।
তিনি বললেন- কেন?
প্রতি উত্তরে বললাম- আপনার জীবতো সুখের। মা-বাবা সরকারী চাকুরী করেন। তাই কষ্ট কি? তা বুজতে পারেনি। কোনো কিছুরই অভাব আপনার নেই।
আর আমি চলি কোন রকমে।
মাস শেষ হওয়ার আগে শেষ হয়ে যায় টাকা।শেষ হয় বাড়ী থেকে পাঠিয়ে দেওয়ার চাউল। তখন বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে মাস শেষ করতে হয়।
এ কথাগুলো বলতে বলতে আমার কথার ফাঁকে তিনি আমাকে বললেন -
সারাদিন দাড়িঁয়ে রাখবেন? না রুমে নিবেন?
বললাম চলেন রুমে।
রুমে যাওয়ারর পর আমার পড়া চেয়ারে বসতে বললাম তাকে তিনি বসলেন না।
বসলেন পড়ার টেবিলের পাশে আমার বিছানায়।
বললেন-আজ আপনার রান্না করা ভাত খাবো।
তাকে বললাম-আমি শুধু আলু আর আমেল্ল্যা(এক ধরনের টক তরকারী) রান্না করছি। যা আপনি খাবেন না।
এবংকি খেতেও পারবেন না।
তিনি প্রতি উত্তরে বললেন-খাবো।আপনি যা খাবেন তা দিয়ে।
তাকে বললাম- রুমে পানি নেই। পানি নিয়ে আসি অপেক্ষা করেন।
তারপর পানি আনার অন্যের থেকে খাবারের প্লেত ১টা আনলাম।
খাবার রেডি করতে করতে তিনি ব্যাগ থেকে ছোট্ট দু'টি টিপিনের বক্স বের করলেন।
তাকে বললাম -এগুলো কি?
তিনি বললেন- এ দু'টি বক্সের মধ্যে ১টিতে মুরগীর মাস। আর অপরটিতে চাপিলা মাছের ভাসি আছে। তখন একটু লজ্যাও পেলাম।
বললাম কেন আনলেন এগুলো?
উত্তরে তিন বললেন-কলেজে অনেক বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছি পঁচা বাসি খাবার খান মাঝে মাঝে। তাই এগুলো নিয়ে আনলাম আপনার জন্য।
তাকে বললাম-এগুলো যে আনলেন আপনার বাবা-মা কি জানেন?
তিনি বললেন- না।
তাকে বললাম-আমি কৃষকের ছেলে।
তাও আবার ৭ভাই বোনের মাঝে আমি সবার ছোট।
একসাথে ৩ ভাই-বোন লেখা পড়া করি।
বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী।
অভাবতো থাকবেই স্বাভাবিক।
একথা বলার সাথে সাথে কেন জানি তার চোখের পানি এসে গেছে।
তাকে চোখের পানি মুছতে বললাম।
তিনি চোখ মুছলেন।
বললাম -চলেন খেতে বসি।
খাওয়া শুরু করে দিলাম। তিনি শুধু
আমেল্ল্যা ঝোল আর কিছু আলু তরকারী খাবার প্লেটে নিলেন।
মাস আর মাংস নিতে বললেও তিনি নিলেন না।
বললেন-আমিতো সব সময় মাস,মাস দিয়ে
খাবার খাই। তাই খেতে ইচ্ছে করছে না।
শুধু এগুলো দিয়ে খাবার অভ্যাস করার চেষ্টা শুরু করি।
তখন অভাক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে
রইলাম।
এ ফাকে সে আমার খাবার প্লেটে কয়েক পিচ মাস আর মাংসের তরকারী দিয়ে দিলেন। এবং আমাকে খাওয়ার জন্য
অনরোধ করলেন।
আমি বললাম-আপনি না খেলে আমিও খাবো না।
তখন তিনি আমার প্লেট থেকে এক পিচ ভাজি মাস আর এক টুকরো মাংসের পিচ নিলেন।
খাবার শেষে বাকী থাকা মাস আর মাংসের
তরকারী সমূহ বক্স সহ রেখে দিলেন।
বললেন -এগুলো দুপুরে খাবেন আর রাত্রে।
আর বললেন-রেডি হয়ে যান কলেজে যেতে হবে।
আমিও রেড হয়ে যায়। চলে গেলাম কলেজে।
বান্ধবিটাকে কলেজে নাস্তা করাবো সে হাতকড়িও আমার নেয়। তখন মাস প্রায় শেষে।
তাই তাকে নাস্তা করাবো চিন্তা করেও করাতে পারিনি।
কলেজে ২টি ক্লাশ করার পর সে আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আসে। আমি ক্লাশ রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে আমাকে দেখে নিলেন কলেজ ক্যান্টিনে।
আমার হাতকড়ি নেয়। তাই পড়লাম মহা সংকতে।
নাস্তা করার পর বিল দেওয়ার টাকাও আমার নেয়।
তিনি বললেন -আমি দেবো।
খাবার শেষে বেরিয়ে আসলাম ক্যান্টিন থেকে।
তিনি আমাকে অনেক অনুরোধ করলেন গাছ তলায় বসে তার সাথে গল্প করতে।
আমি সময় দিতে পারিনি। সে সময় ছিল গণিতের ক্লাশ। তাই আবার ক্লাশে গেলাম।
গণিতের স্যার সপ্তাহে আসেন মাত্র ৩ দিন।কোনো অবস্থাতেই ক্লাশ ফাকি দেওয়া যায় না।
পর্ব -২।
গণিতের স্যার ছিলেন খুবই তীক্ষ্ন বুদ্ধিদীপ্ত।মনে হয় গণিতের পুরো বইটি মুখস্ত। ক্লাশ শেষে স্যার কিছু নোট দিলেন ফটোকপি করে রাখার জন্য।
আমার হাতে টাকা না থাকায় ফটোকপি করে রাখতে পারলাম না।
আমার সকল বন্ধুরা ফটোকপি করে রেখেছেন।
ক্লাশ শেষে বুক ভরা দুঃখ নিয়ে হোস্টেলে যাচ্ছিলাম।
পথে সেই বান্ধবীটি আমার অপেক্ষায় আছে।
আমাকে দেখে বললেন- মুখের ভাজে এত দুঃখ দেখা যাচ্ছে কেন?
সকালে আমি তরকারী এনে দিয়েছি তাই?
উত্তরে বললাম- নাতো, শরীর ক্লান্ত লাগছে তাই।
পরে গণিত স্যারে নোটের কথা বললাম।টাকা না থাকায় নোটগুলো ফটোকপি করে রাখতে পারিনি। তাই মন খারাব।
একথা বলার সাথে সাথে তিনি পার্স থেকে টাকা বের করে দিলেন। নেন এগুলো।এগুলো দিয়ে
ফটোকপি করে রেখে দিন। কাজে লাগবে।
তাকে বললাম- বন্ধুদের কপি থেকে পরে ফটোকপি করে রেখে দেবো।
আজ করবো না।
মেয়েটি কোন কথা না শুনে টাকাগুলো দিয়ে গেলেন।বললেন আজকের মতো বাই।
কাল সকালে দেখা হবে। যাওয়ার সময় ফটোকপি করে রেখে দেওয়ার কথা স্মরন করিয়ে দিলেন।
পরের দিন কলেজে গেলাম।মেয়েটি আমায়
দেখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে বললেন-কেমন আছেন?
বললাম ভালো আছি। তিনি বললেন একটু দাড়িঁয়ে কথা বলতে। সময় দিতে পারাবোনা বললাম। এখন আমার পদার্থ বিজ্ঞানের ক্লাশ। পরে কথা বলবো।
এ বলে ক্লাশে গেলাম। পদার্থ বিজ্ঞানের স্যারও অনেক নোট দিলেন ফটোকপি করার জন্য।
আমার সেই একই অবস্থা।
ক্লাশ থেকে বের হবার সাথে সাথে দেখলাম মেয়েটি দাড়িঁয়ে আছে আমার ক্লাশ রুমের পাশে।
বললেন চলেন ক্যান্টিনে। আমি না বলাতেই সে হাত ধরে নিয়ে হেলেন ক্যান্টিনে। নাস্তা করালেন।
এবং বললেন ক্লাশে যান। ক্লাশ মিস না করারও অনুরোধ করলেন।
ক্লাশ শেষে কলেজ বাউন্ডারির চারিদিকে তাকিয়ে চাইলাম। মেয়েটি সম্ভবত বাসায় ফিরেছে।
দুপুরে হোস্টেলে এসে খাবার খেলাম।কিছু বিশ্রাম নিয়ে কলেজে প্রাকটিস ক্লাশ করলাম।
আর মনে মনে বাবার কথা স্মরন করলাম।বাবা কবে আসবেন? টাকা, চাউল করে এনে দিবেন?
পর্ব-৩
পরের দিন ছিল রবিবার।
প্রতি দিনের মতো রান্না করে খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।
আজ সেই মেয়েটির সাথে দেখা হলো না।
তাই একটু মন খারাব ছিল। ইংরেজী, গণিত আর পদার্থ বিজ্ঞান ক্লাশ করে দুপুরে খাবার খাওয়ারের জন্য হোস্টেলে ফেরার পথে মেয়েটির বান্ধবী ছোট্ট একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিলেন।
সেই কাগজে লেখা ছিল-
প্রিয় দাদা,
আমার মন ভালো নেই। তাই কলেজে আসা হলো না। ভালো থেকো।
ইতি
সেই আমি।
কাগজটি পেয়ে আমারও খারাব লাগলো।
খাবার খেয়ে আবারও কলেজে গেলাম এবং ক্লাশও করলাম। তবু দেখা হলো না
তার সাথে।
পরের দিন ৭টায় ঘুম থেকে উঠে হাত মূখ ধূয়ে ভাতের পাতিলা চুলায় তুলে দিলাম।
সেই ক্ষনে তিনি হোস্টেলের আমার রুমে এসে জিজ্ঞেস করলেন -কেমন আছি?
বললাম ভালো আছি। তবে মন ভালো নেয়।
তিনি বললেন -কে?
বললাম হাতে টাকা নেই। তাছাড়া বাড়ী থেকে আনা চাউলগুলোও শেষ হচ্ছে। পরশু বাবা না আসলে না খেয়ে থাকতে হবে।
তিনি বললেন- চিন্তার কোনো কারন নেই। কাল আমি টাকা এনে দেবো।
বললাম -কেন?
তিনি বললেন হাত খরচের জন্য।
আবার বললাম-আপনার থেকে টাকা নিলে ফেরৎ দিতে কষ্ট হবে। লাগবেন না।
তিনি বললেন-ফেরৎ দিতে হবে না।
তাকে বললাম আমার লাগবে না। কারন আমি হোস্টেলের বাইরে কোথাও বাহির হবো না।
কলেজ আর হোস্টেলেই থাকবো।
কথা বলতে বলতে ভাতগুলো হয়ে গেছে। আলু রান্না করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সে সময় তিনি বললেন -আজ আলু খাবো না।
আমি মুরগীর মাংস এনেছি। শুধু মুরগীর মাংস দিয়ে খাবো।
তাকে বললাম-আমার জন্য এত কষ্ট করেন কেন?
আপনার "মা" কি জানেন? এখানে এসেছেন? মাংসের তরকারী এনেছেন।
তিনি বললেন- মা'র অনুমিত নিয়ে মাংস নিয়ে এসেছি। ভোরে মা রান্না করে দিয়েছে।
মাকে আপনার কথা বলেছি। তাই মা'ই বলেছে মাংস নিয়ে আসতে।
যতারীতি খাবার খেয়ে কলেজে গেলাম।এবং ক্লাশগুলো করার পর দুপুরে খাবারের জন্য হোস্টেলে আসার পথে আবার তার সাথে দেখা হলো।
তিনি আমার সাথে হোস্টেলে আসলেন। দু'জনে খাবার শেষে কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি ঠিক সে সময় বাবা রুমের বাইরে থেকে আমার রুম মেট থেকে জিজ্ঞেস করলেন আমার "কালা বাবা" কি এ রুমে থাকে।
রুম মেট আমাকে ডাক দিয়ে বললেন -দাদা আপনার বাবা এসেছেন।
তখন আমি খুশি হয়ে বাবা'কে ডাক দিলাম রুমে আসার জন্য।
বাবা চাউল এক বস্তা কাঁধে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন।
বাবা'কে পায়ে ধরে প্রণাম দিলাম।
আমার সাথে মেয়েটিও প্রণাম দিলেন।
বাবা বললেন মেয়েটি কে?
বাবাকে বললাম আমার বন্ধু।
বাবাকে পানি দিলাম। ৫/৬ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে "বাবা" বললেন-
"কালা বাবা" আমি চলে যাবো। দেরী হলে গাড়ী পাবো না।
বাবা আমাকে ২ মাসের খরচের ৩৩০০ শত টাকা হাতে দিলেন।
আর বললেন তোমার প্রাইভেটের টাকাগুলো দিয়ে দিও।
অবশিষ্ট টাকাগুলো দিয়ে কষ্ট করে ২ মাস চলতে হবে।
"বাবা" দীর্ঘ একটা নিঃস্বাস ছেড়ে দিয়ে বললেন সেই ভোর ৪টায় বাসা থেকে রওনা দিয়েছি। বাসায় ফিরতে রাত ৮/৯ টা বাজবে।
এ বলে চলে আসলেন।বাবা ধূতি পড়েন।
বাবা আসার পর মেয়েটি বললেন -আপনার বাবা আপনার জন্য অনেক অনেক কষ্ট করেন?
তাকে বললাম -আমি গ্রামের লোক।কৃষকের ছেলে। পানছড়ি উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রামে থাকি।
তাই বাবাকে সেই পাখি ডাকা ভোরে আসতে হয়েছে। ঘরে ফিরতে রাত ৮/৯ টা বেজে যেতে পারে। এভাবে কথা বলতে বলতে কলেজে দিকে রওনা দিলাম দু"জনে। ক্লাশ শেষে বিকালে আমাকে বাই বাই কাল দেখা হবে বলে চলে গেলেন।
আমিও হোস্টেলে গেলাম মনের আনন্দে।
পর্ব-৪
প্রতি দিনের মতো করে সহপাঠীদের নিয়ে কলেজে গেলাম।
তবে আজ সকালে দেখা হয়নি। দু'টি ক্লাশ করে গণিত ৩য় পত্রের খুটিনাটি জানার জন্য আমার ৩ সহপাঠীসহ লাইব্রেরীতে গিয়ে প্রায় আধা ঘন্টায় গণিতের অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম।
লাইব্রেরী থেকে বাহির হওয়ার পথে মেয়েটির সাথে দেখা হল।আমাকে দেখে মেয়েটি বন্ধুদের সামনে
"দা -আ-দা" (যেন এক নরম সুরে)ডাক দিলেন।
ডাক শুনে বন্ধুদের বললাম
আপনারা ক্লাশে যান। আমি আসতেছি। সহপাঠীরা চলে যাওয়ার পর মেয়েটির ডাকে সাড়া দিয়ে কাছে গেলাম।
মেয়েটিকে বিনয়ের সুরে বললাম
আমার এখন গণিতের ক্লাশ। ক্লাশে যাবো। মেয়েটি হ্যাঁ না কিছুই বললেন না।
বললাম ঘন্টা খানেক পরে দেখাা হবে। এবং
মেয়েটিকেও ক্লাশে যেতে অনুরোধ করলাম।
মেয়েটি অনেকটা মুখ কালো করে ক্লাশে গেলেন।
ক্লাশ শেষে মেয়েটির সাথে দেখা হলে
মেয়েটি বললেন চলেন গাছের ছায়ায় গল্প করি।
মেয়েটির কথা সাড়া দিয়ে মেয়েটির সাথে গাছতলায় গেলাম।
সাথে মেয়েটির এক বান্ধবীও ছিল।
গাছের ছায়ায় বসার সাথে সাথে
মেয়েটি বললেন এখন থেকে তুমি বলতে হবে।
আপনি বললে অনেক দূরে মনে হয়। তাই আপনি করে কথা না বলার অনুরোধ করলেন।
মেয়েটিকে বললাম-দেখেন আমি কৃষকের ছেলে। আমরা সাত ভাইবোন।
২ ভাই ৫বোন।বড় ভাই ইন্টার পড়ার সময় স্ট্রোক করে মারা গেছেন। আমি গরীবের ছেলে।
আমি সবার ছোট। বিএসসি ভর্তি হওয়ার জন্য ২২ হাজার টাকা দিয়ে
বাবার ১ কানি(৪০শতাংশ)ধান্য জমি বিক্রি করতে হয়েছে। সে টাকা দিয়ে বিএসসি পড়তে এসেছি। জানিনা সেই টাকা দিয়ে বিএসসি শেষ করতে পারবো কিনা? আর
আপনিতো সরকারী চাকুরী জীবির মেয়ে।আপনার বাবা মা দু'জনেই সরকারী চাকুরী করেন।
প্রেমের সম্পর্ক হলেও আপনাকে হয়ত আমি নাও পেতে পারি।এভাবে বলার সাথে সাথে মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বললেন-আমি সবকিছুই মানি।
মেনে নিয়েছি বিধায় আপনার কাছে আসি।
তখন মেয়েটিকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা কেন জানি হারিয়ে ফেলেছি।
বললাম আজ থেকে তুমিই বলবো। আর কেঁদো না।
চোখের পানি মুছতে বলার সাথে সাথে সে মুছে নিল।
এরপর
মেয়েটিকে বললাম তোমায় কি নামে ডাকতে পারি?
মেয়েটি বলল "চিজি" বলে ডাকো।
তখন থেকে মেয়েটি আমার জন্য "চিজি" হয়ে গেল।
এবং সে আমার হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিল।
খামটি তার সামনে খুলতে চাইলে সে না খোলার অনুরোধ করল।
তাই খামটি পকেটে নিতে হলো।
গাছের ছায়া থেকে কলেজে এসে দেখি আমার সহপাঠীরা সবাই চলে গেছে।
এবং কি তার সহপাঠীরাও ।
সে আমাকে বাই বাই বলে চোখে প্রেমের ভাব দেখিয়ে হাতে দৃষ্টিতে লাভ ইউ বলে চলে গেল।
আর আমি খামটি নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম।
পর্ব-৫
বিকাল ৫টা। রুমে যাচ্ছি আর পকেটের খাম থেকে কি যেন প্রেমের আভাস পাচ্ছি।
হোস্টেলের কাছে পৌঁছতেই দেখি হোস্টেলে সহপাঠিরা মাঠে খেলা খেলতেছে।
হোস্টেলের ছোট ভায়েরা কিছু না বললেও সহপাঠিরা আমাকে নিয়ে বিভিন্ন রসিকতা করতে শুরু করেছে।আর আমি কাউকে কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।
ড্রেস পরিবর্তন করে স্নান করে হোস্টেলের বারান্দায় একা একা বসে আছি।
আর চিন্তাা করছি "চিজি"কে নিয়ে।
আর মনে মনে বললাম-আমি কি চিজি'র জন্য যোগ্য?
তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বো ? সম্পর্ক করলেও জীবন সঙ্গী হিসেবে পাবো ?
এ রকম হাজারো প্রশ্ন করছি মনে মনে।
যেন চিন্তার মহা সাগরে ভাসতেছি।সে সময়
পাশের রুমে থেকে ববের হয়ে এক বড় ভাই(তিনি রাস্ট্র বিজ্ঞানে এমএ পড়তেছেন)
আমাকে দেখে বললেন- কিরে ছোট ভাই, খেলা না খেলে একা একা বসে আছ কেন?
মন খারাব নাকি?
তাঁকে বললাম-দাদা, শরীর দুর্বল লাগছে তাই।
খেলা শেষে করে সবাই যার যার রুমে আসলো। অনেকেই স্নান করতে গেল।
আর আমি নিঃসঙ্গ করে একা একা বসে আছি। তখন প্রায় সন্ধ্যা।
আমিও রুমে গিয়ে পড়ার টেবিলে পড়ার জন্য বসে গেলাম।
মন মানছে না। বারবার গাছ তলায় গল্প করার কথাগুলো ভেসে আসছে দু'চোখে।
আর তখনি পকেট থেকে খামটি বের করে পড়তে শুরু করলাম।
প্রানের প্রিয়, দাদা,
একরাজ রজনী গন্ধা ফুলের শুভেচ্ছা রইল। খুব বেশি ভালোবাসি তাই তুমি বলে সম্বোধন করলাম।
জানি, চিঠি পেয়ে রাগ করবে। আবেককে সামলাতে না পেরে তবুও লিখতে বাধ্য হয়েছি।
তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে।ভালোবাসি। ভীষণ ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে না পেলে আমি চলে যাবো দূরে,সেই দূরে।অনেক দূরে।
হয়ত জন্ম-জন্মান্তরে দেখা হবে না আর।
জানি পাবো না। তবুও পেতে চাই।
সৃষ্টি ককর্তার কাছে প্রার্থনা করছি
তুমি যেন আমার পবিত্র ভালবাসা গ্রহণ কর।
দাদা, আমার প্রার্থনাটি পূর্ণ করে দাও।
বিভো, দেহ হৃদে বল!
না জানি ভক্তি, নাহি জানি তুষ্টি
কি দিয়া করিব, তোমায় আরতি
আমি নিঃসম্বল!
তোমার দুয়ারে আজি রিক্ক করে
দাঁড়ায়েছি প্রভো, সঁপিতে তোমারে
শুধু আঁখি জল,
দেহ হৃদে বল!
ইতি
সেই আমি।
বিঃদ্র ঃ উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
পর্ব -৬
পড়ার টেবিলে বসে চিঠিটা অনেক অনেক বার পড়ে নিলাম।
সব কিছু মুখস্ত হয়ে গেল। তবুও মন ভরেনি।বার বার পড়তে মন চাইছে। ডুবে গেলাম মহা সমুদ্রে। তখন রাত প্রায় ১০টা।
রুমের পাশের সীটের ছোট ভাই, গণিত বই আর খাতা এনে
বলল -দাদা, ক্যালকুলাসের এ দু'টি অংক পারতেছি না।
আমাকে একটু করিয়ে দেন। তাকে অংক দু'টি করিয়ে দিয়ে
আমিও গণিতের কয়েকটি সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করলাম। ৩-৪টি সমস্যা সমাধান করলাম মাত্র। কি যেন টেনশন মায়ায় ডুকে গেল নিজেও বুজলাম না।
তারপর ওয়াশ রুম থেকে হাত-মূখ ধুয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসে পদার্থ বিজ্ঞানের বাড়ী কাজগুলো করে নিলাম।
ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুয়ে গেলাম।
রাত গভীর থেকে গভীর হচ্ছে তবুও ঘুম আসছে না।
চোখ বন্ধ করতেই মেয়েটির ছবি ভেসে উঠে বার বার।
এভাবে অনেক ক্ষণ থাকার পর অবশেষে নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছি।
খুব ভোরে রাঙামাটি রাজ বন বিহার থেকে মাইকের সুরে গৌতম বুদ্ধে অমৃতময় সুত্রগুলো শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
হাত-মূখ ধুয়ে পড়ার টেবিলে বসতেই চিঠিটির দু'একটি লাইন আবারও মনে পড়ে গেল।
তবুও মনযোগ দিয়ে সকাল ৬টা পর্যন্ত পড়ে নিলাম।
তবে কোনো পড়া মুখস্ত করতে পারিনি।
ভাতের পাতিলা চুলায় বসিয়ে দিলাম।
আর আলু রান্না করলাম।
স্নান করে খাবার শেষে আজ সহকর্মীদের বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্যাম্পাসের বারান্দায় দাড়িঁয়ে রইলাম।
কিছুক্ষণ পরে কলেজ বাস থেকে
"চিজি" নেমে গিয়ে ক্যাম্পাসের চারিদিক টাকিয়ে দেখল। মনে হয় যেন আমাকে খুঁজচ্ছে।
ক্যাম্পাসের বান্দার এসে আমায় দেখে
দাদা’ করে ডাক দিয়ে আমার কাছে এসে বলল চল ক্যান্টিনে/লাইব্রেরীতে।
আমি তাকে লাইব্রেরীতে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে সে আমাকে ধরে বলল চল লাইব্রেরীতে।
লাইব্রেরীতে গিয়ে পাশাপাশি বসে আমার হাত ধরে বলল- দাদা, খুঁশিতে কাল রাতভর ঘুমাতে পারিনি।
সত্যি করে বল তুমি আমার হবে ?
বললাম-হবো।
আর শর্ত দিলাম যে
ক্লাশ চলাকালীন সময়ে আমাকে যেন না ডাকে।
চিজি রাজি হয়ে বলল-পড়ার সময় তোমাকে ডাকবো না।
আর বলল আমার চিঠি উত্তর কোথায়।চিজি'কে বললাম-চিঠি তো লাগবে না।
কারন তোমাকে আমি মেনে নিয়েছি। চিজি অনেকটা অভিমান করে বলল-
আমার চিঠির উত্তর চিঠির মাধ্যমে দিতে হবে।
চিজি'কে বললাম তোমার চিঠির উত্তর দেবো পরশু দেবো।চিন্তা করো না।
এই বলে দু'জনেই ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে দুপুরে দেখা হয়নি চিজি'র সাথে।
দুপুরের খাবারের জন্য হোস্টেলে আসলাম। তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
গাছ তলায় দু'জনে অনেক ক্ষণ গল্প করলাম। আর মনের আবেগের কথা প্রকাশ করলাম।
এরপর ক্লাশে চলে গেলাম। একটা ক্লাশ করার পর বের হতেই চিজি বলল।আমার ক্লাশ শেষ।
তোমার আরো ক্লাশ আছে। ক্লাশ কর।
আমি চলে যাচ্ছি বলে চিঠির মাধ্যমে চিঠির উত্তর পাওয়ার শর্ত জুরে দিয়ে লাভ ইউ দাদা বলে চলে গেল।
পর্ব -৭
ক্লাশ শেষে সহপাঠীদের সাথে হোস্টেলে আসলাম।
বিকেলে হোস্টেল মাঠে খেলা খেলে সময় পার করলাম।
খেলা শেষে পড়ায় বসতেই আবার চিজি
মূখ খানি চোখে ভেসে উঠল।
চিজি ছিল আমার চোখে দেখা প্রথম বিশ্ব সুন্দরী।
চোখ, নাক, খুবই সুন্দর ছিল। গায়ের রঙ ফর্সা আর চুল ছিল কোমর পর্যন্ত লম্বা। উচ্চতা
আমার সম পরিমান লম্বা।
মনে হয় যেন পরি।
বয়স কম। তাই একটু চঞ্চল প্রকৃতির। কয়েক দিন সম্পর্কে
আমার সাথে প্রচুর দুষ্টামি করতো।
সুযোগ পেলে জরিয়ে ধরার চেষ্টা করতো।
সেইগুলো চোখে ভাসতে থাকে সব সময়।
তবুও বই পড়ার চেষ্টা করলাম।
সফল হতে পারিনি।
রুমের বাকী দুই ছোট ভাই নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক চেষ্টা করে আমি নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিতে চাইলেও পারিনি। অবশেষে ঘুমিয়ে পড়েছি।
ভোরে আমার পাশে সীটের ছোট ভাইটি জেগে উঠে বলল দাদা উঠেন। ৪টা বেজে গেছে।
হাত মুখ ধৌত করে পড়ার টেবিলে বসলাম।
বেশ কিছু পড়া আয়ত্বেও নিলাম।
৭টা পর ভাত রান্না শুরু করলাম।
প্রায় আধা ঘন্টার পর দোরজায় দেখি চিজি এসে গেছে। আর বলছে।
আজ 'মা' ভোরে রান্না করে তোমার জন্য মাছ পাঠিয়েছে।
তাই তাড়াতাড়ি আসলাম। আমিও খায়নি। একসাথে খাবো।
দাদা, আজ বিকেলে তোমাকে নিতে বলেছে। অবশ্যই যেতে হবে।
চিজিকে বললাম আজ যাবো না। কয়েক দিন পর যাবো।
তবুও নিতে চাইছে সে। তাকে বললাম মা'কে বলো আজ পড়া লেখার চাপ বেশী।
তাই আসতেছে না। কয়েক দিন পরে আসবে।
এভাবে বলতে বলতে ভাত খাওয়া সেরে ফেললাম।এরপর কলেজে গেলাম।
ক্লাশ শুরু না হওয়ায় দু'জনে গাছের তলা বসে গেলাম।
আমার দু'হাত ধরে চিজি বলল
দাদা-তুমি আমার প্রাণ। তুমি আমার সব কিছু। তোমায় ছাড়া বাসবো না।তোমায় না পেলে আমান জীবন বৃথা হবে।
চিজি'কে বললাম- তোমার জন্য হয়েছে আমার জন্ম। তোমাকে খুবই ভালোবেসেছি।
তুমি ছাড়া আমার জীবনও অচল হবে।
চিজি' কে আরো বললাম-আমাদের সম্পর্কটা তোমার পরিবার
মেনে না নিলে কি করবা?
চিজি হেঁসে হেঁসে বলল-মা আর বাবা আমাকে খুবই ভালোবাসে। তোমার ব্যাপারে মাকে সব ববলেছি। মা মেনে নিয়েছে।
আর বাবা মায়ের কথা শুনে। বাবাও মেনে নেবে।
মেনে না নিলে পালিয়ে বিয়ে করবো।
চিজি বলল- দাদা, আমার চিটি উত্তর দিলে না যে?
বললাম দেবো, পরশু দেবো বলে- দু'জনে ক্লাশে চলে গেলাম।
ক্লাশ শেষে আবার দু'জনে দুপুরের খাবারের
জন্য হোস্টেলে আসলাম।
থাবার শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে গাছ তলায় প্রায় ঘন্টা খানেক আড্ডা দিলাম।
পর্ব -৮
বিকালে ক্লাশ শেষ প্রায় ঘন্টা খানেক গাছ তলায় আড্ডা দিলাম।
আজ চিজি যেন আমার ছাড়ছে না।
আমার হাত দু'টো ধরে
একটার পর একটা প্রশ্ন করতে চলেছে।
আর আমাকে নিয়ে পর্যটন ঝুলন্ট ব্রীজ, সুবলং ঝর্ণায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনক্ষণ ঠিক করছে আর অনুমতি নিচ্ছে।
চিজিকে বললাম- আমার এখনো পর্যটন ঝুলন্ত ব্রীজ,সুবলং ঝর্ণা আর কাপ্তাই কর্ণফুলী পেপার মিলল দেখার সুযোগ হয়নি।
চিজি বলল- এত দিন কেন যাওয়া হয়নি।
চিজি'কে বললাম-এমনিতেই যাওয়া হয়নি।
চিজি আরো বলল-হাতে টাকা নাই তাই যাওয়া হয়নি না?
মাথা নিচু করে হ্যাঁ করলাম।
চিজি বলল- আগামী মাসে বন্ধ আছে।সবগুলোতে ঘুরবো, আড্ডা করবো। তোমার জন্য মা থেকে টাকা চেয়েছি। মা দিয়ে দেবে বলেছে।
আমার মা ০+ রক্তের মানুষ।খুবই সহজ সরল, উপকারী আর উদার মনের মানুষ।
তাই বলতে আমাকে প্রশ্ন করল তোমার রক্তের গ্রুপ কি? আমি অই+ গ্রæপের।
আমি বললাম রক্তের গ্রæপ তো পরীক্ষা করা হয়নি।
কাল করে নিয়ো।মাথা নিচু করে হ্যাঁ বললাম। আর রক্ত পরীক্ষা করার জন্য আমার পকেটি ৫০০ টাকা একটা নোট দিয়ে দিল।
টাকাগুলো না নিতে চেয়ে সে অভিমান করল। আর
কিছুক্ষণ পর আমার চিটির উত্তর চাইল।
আমি একটু আদর করে বললাম -চিজি তোমায় আমি খুবই ভালোবাসি।
তোমাকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি।
আরো অনেক অনেক......
চিঠির প্রসঙ্গে বললাম -প্রতিদিনতো দেখা হয়।
মনের কথাগুলো বলাও হয়। তাই চিটি লিখিনি।
এ কথা বলাতেই চিজি কেঁদে দিল।
আর বলল-তুমি আমাকে ভালোবাস না।আমার সাথে ছলনা করতেছ শুধু।
আরো অনেক কিছু। তাই চিঠি দিচ্ছ না। অনেক ক্ষণ কোনো কথা না বলে আমার হাত দু'তো ধরে মাথা নিচু করে রইল।
বুঝাতে চাইলেও বুঝাতে পারিনি। চোখ,নাক,মুখ মুছতে শুরু করল।
তারপর চিজিকে বললাম আমার একটা হাত ছেড়ে দাও। তোমার জন্য সুখবর দেবো। তবুও সে বিশ্বাস করল না।
অবশেষে একটা হাত ছেড়ে দিল।
তারপর প্যান্টের পকেট থেকে চিজির হাতে খামটি ধরিয়ে দিলাম।
তখন সে খুশিতে আমাকে জরিয়ে ধরতে চাইলো।
সাথে সাথে বললাম পাশে কেউ দেখে ফেলবে। জরিয়ে ধরো না।
পরে অনেক ক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল।চোখ,মুখ মুছতে মুছতে বলল তুমিই আমার জীবন। তুমি আমার স্বপ্ন। তুমিই আমার শ্রষ্টা। তুমি আমার সবকিছু।
আমার সামনে খামটি খুলতে চাইল। না খুলতে অনুরোধ করাতে ব্যাগের পার্সে ঢুকিয়ে নিল।
চিজিকে বললাম প্রায় ৫টা বেজে গেল তোমাকে সিএনজিতে তুলে দিতে হবে।চল।
চিজি আরো কিছুক্ষণ থাকতে চাইল।
আমি না বলাতে সে আমার হাত ধরে উঠে গেল।
কলেজ গেইটে এসে চিজি'কে সিএনজিতে তুলে দিলাম।
খামটি পেয়ে চিজিও মনের খুঁশিতে চলে গেল।আর আমি হোস্টেলে চলে আসলাম।
পর্ব -৯
পরের দিন বৃস্পতিবার।
সকাল ৮টায় চিজি হোস্টেল রুমে এসে হাজির হল।
বলল শুভ সকাল।
আমিও উত্তর দিলাম শুভ সকাল।
আজ সে মহা খুশি। 'মা'য়ের আর্শীবাদ পেয়েছে তাই। আর
আমার জন্য একটা উপহার এনেছে। আমার হাতে দিয়ে বলল এখন খোলা যাবেনা।
আমিও অবুঝ শিশুর মতো করে উপহার না খুলে ব্যাগে দেখে রেখে দিলাম।
চিজি বলল-আজ কি পাক করেছ?
বললাম শুধু আলু ভাজি।
চোখের ইশারায়
বুঝলাম সে সকালে কিছুই খাইনি।
ডিমটি চিজির জন্য তাড়াতাড়ি ভাজি করে দিলাম।
আর দু'জনে আলু ভাজি আর ডিম ভাজি দিয়ে খেতে বসলাম।
তার আলু ভাজি ভাল লাগছে না টের পেয় ডিম ভাজিটি তাকে দিয়ে দিলাম।
সে আমায় অর্ধেক দিয়ে দিলো।
তাকে বললাম তোমারতো আলু ভাজি খাওয়ার অভ্যাস নেই তুমি পুরোতায় খাও।সে তবুও আলু ভাজি খেতে চাইল। আর বলল তুমি খেতে পারলে আমি পারবোনা কেন?
তোমার সুখে-দুখে আমি। শুধু তোমার জন্য আমার জন্ম। তোমার ছাড়া আমার জীবন বৃথা হবে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
তোমাকে আমি খুবই ভালোবাসি।
আমি আবারও অবাক হয়ে
তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
বললাম সত্যি কি তাই?
চিজি বললো- সত্যি,সত্যি,সত্যি।
গল্প করতে করতে ভাত খাওয়া শেষ করলাম।
এরপর তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে রওনা দিলাম।
যাওয়ার সময় চিঠির কথাগুলো সত্য কিনা জিজ্ঞেস করল।
তাকে বললাম চিটিতে যা লিখেছি সবি সত্যি।
কথা বলতে বলতে কলেজে পৌঁছে গেলাম।
ক্লাশ শুরু হতে আর বেশী দেরী নেই।
চিজিকে বললাম তুমিও ক্লাশে যাও।
সে বলল- বাংলা ক্লাশ।
না করলেও চলবে।
আর আমায় জিজ্ঞেস করল তোমার পথম ক্লাশ কি?
বললাম আমাদের রুটিনেও আজ প্রথম ক্লাশ বাংলা।
চিজি বলল-আজ বাংলা ক্লাশ না করলেও চলবে।
আমি বললাম আমি এখনো ক্লাশ মিস করিনি।
চিজি আমার কোনো কথা না শুনে আমার হাত ধরে গাছের তলায় নিয়ে গেল।
বলল-লক্ষী ছেলের মতো এখানে বস।
ক্লাশ মিস করতে পারবো না বলে
উঠে আসতে চাইলে সে অভিমান করে বসে রইল।
তাই আমারও কলেজ জীবনে ঐটি প্রথম
ক্লাশ মিস করতে হলো। আমি অদ্যাবধি ক্লাশ মিস করিনি।
সে আমার থেকে পাওয়া চিঠি পড়ে শুনালো।
চিঠিতে ছিল...
প্রিয়, চিজি,
তোমায় অনেক অনেক ভালোবাসি।
জানি তোমার যোগ্য নয়। তবুও ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।
আমিও তোমারকে পেতে চাই জন্ম-জন্মান্তরে।
এ স্বপ্ন বাস্তবে পূরণ হবে কিনা জানিনা।
কারণ তোমার পরিবারে স্ট্যাটাস আর আমার পরিবারে স্ট্যাটাস আকাশ আর পাতালের সমান।
তোমার পরিবার মেনে নেবেনা।
আর গ্রামে গিয়ে তুমি আমার পরিবারের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবে কিনা সন্দেহ।
তাই তোমার সাথে সম্পর্ক করবো কিনা এ নিয়ে আমি মহা সমুদ্রে ভাসতেছি।
ভালো থেকো। শুভ কামনা রইল।
ইতি,
আমি।
পর্ব-১০
সকালে ক্লাশ শেষে দেখা হলো চিজি সাথে।
তখন আমি হোস্টলে আসতেছি।
চিজি আমায় ডাক দিয়ে বলল -কোথায় যাচ্ছ? আমাকে নিচ্ছ না কেন?
বললাম-দুপুরে খাবার খেতে।।
চিজি অভিমান করে বলল- আমারতো পেট নেই।তাই খাওয়ার রুচিও নেই।
চিজিকে বললাম চল হোস্টেলে এক সাথে খাবো।সে বলল আজ যাবো না।
আমি নাস্ট খেয়ে থাকবো।
বললাম-কেন?
সে বলল-আমাকে নেওয়া কোনো ইচ্ছে নেই তাই।
তার অভিমান দেখে আমি আর দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসলাম না।
তখন সে একাই ছিল। আমাকে বলল-যাও খেয়ে আছ।বিকালে তোমার ক্লাশ আছে।
না খেয়ে ক্লাশ করলে মন শরীর দুটোই দুর্বল হবে।
তাহার এমন অভিমানের কথা পেয়ে আমিও তার কাছে গিয়ে বললাম আজ আমিও খাবোনা।
তখন সে বলল-চল ক্যান্টিন থেকে হালকা নাস্টা করে আছি। ক্যান্টিনে গিয় হালকা নাস্টা খেয়ে নিলা।এরপর গাছের তলায় বসলাম।
চিজি আমার বলল-রক্তের গ্রæপ পরীক্ষা
করার জন্য তোমাকে বলেছি।করেছ কি?
পতি উত্তরে মাথা নিচু করে বললাম করা হয়নি।
সে অনেকটা রাগ করে বলল-আজ বিকালে করে নেবো দু'জনে গিয়ে।
তাকে বললাম পরে করবো।তোমার দেওয়া সেই ৫০০ টাকা আমার খরচ হয়ে গেছে।তাই করা হয়নি।
চিজি বলল- তোমার টাকার চিন্তা করতে হবে না।আমি দেবো।
আজ বিকালে যাবো। আমি অনুরোধ করলাম আজ না কাল শুক্রবারে করবো।
আমাকে নেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করল।আমি গেলাম না।
কারণ আমার হাতে টাকা নেই।
যা আছে তা দিয়ে মাস চলতে হবে।
চিচিকে বললাম এসব বাত দাও।
ব্লাড টেস্ট যেকোনো সময় করা যাবো।
চিজি বলল কাল শুক্রবার নাস্টা করার সাথে নাথে বনরুপা লাইব্রেরী দোকানে আসবে।
সেখানো দেখা হবে। ব্লাড টেস্ট করার পর ঝুলনাত ব্রীজে যাবো।
পড়ে গেলাম আরো মহা ঝামেলায়।
আমার হাতকড়ি প্রায় শেষ।তবুও তাবে বললাম আসবো।
চিজি বলল- তোমাকে আমি জন্ম-জন্মান্তরে ক পেতে চাই।
তোমাকে ছাড়া আমি অচল জয়ে যাবো।
তুমি আমায় গ্রহণ না করলে আমি বিষ খেয়ে মেরবো না হয় অন্য পদ ধরবো।
যা তোমার কল্পনাও বাইরে ছিল।
পরক্ষনে দেখি নবাই নিজ নিজ বাসায় গেছে।
শুধু আমি আর চিজি হাছ তৈায় দেখলাম শুধু আমরা রয়েছি।
চিজিকে বললাম তুমিও যাও তোমার মা চিন্তায় থাকবে ।
যাওয়ার সময় চিজি আমার
হাতে দুটো চুমু দিয়ে বলল ভালো থাকিছ। কাল বনরুপায় দেখা হবে।
তোমায় রক্তের গ্রæপ পরিক্ষা করতে হবে। মনে রেখো কিন্তু।
পর্ব-১১
হোস্টেলে ফিরতেই দেখি বিকাল প্রায় ৫টা বেজে গেছে।
হোস্টেলে বন্ধুরা হোস্টেলের মাঠে খেলা খেলছে।
হ্যাঁ আগে বলা হয়নি।
আমাদে বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই এসে গেছেন রাঙ্গুনিয়া থেকে ।
কলেজ কতৃপক্ষের সাথে কি যেনে একটা সমস্যার কারনে রাগ করে প্রায় বছর খানেক আগে বাড়ী চলে গেছে। আর সপ্তাহ খানেক আগে আবার হোস্টেলে এসেছে।
সেই সপ্তাহ খানেক ধরে আমার আর দুপুরে বা বিকেলে ঠান্ডা ভাত আর মাঝে মাঝে পচাঁ বাসি খাবার খেতে হচ্ছেনা। এবার দুপুরে আর রাত্রে গরম খাওয়ার খাওয়া হচ্ছে।
আরো পরে গেলাম এক সমস্যায়।
তখন হোস্টেলের ডাইল আমার মোটেই ভালো লাগেনি।
সপ্তাহ খানেক ধরে খেতে খেতে তাও অভ্যাসে পরিণত হলো।
আগামী কাল শুক্রবার খাবার মজা করবো, বিরানি, সাদা ভাত, মাছ,মাংছ দিয়ে মজা করে খাবো বলে ম্যাচ ম্যানেজারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
আমাদের চাহিদা মতো ম্যাচ ম্যানেজার বিকালে মুরগী, মাছ কিনে আনলেন।
সেই মুরগীগুলো রেখে দিলাম স্টোর রুমে।
আমরা অনেক দিন ধরে মজার খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম।
তাই সবাই একটু হাঁসি-খুশিতে ছিলাম।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো।
মজার মজার খাবার খাবো।
যা অনেক দিন ধরে খাওয়া হয়নি।
আজ কলেজ হোলি দে। তাই সবাই একটু দেরীতে ঘুম থেকে উঠেছে।
আমার পাশে রুমে থাকতেন ম্যাচ ম্যানেজার।
প্রতিমাসে একজন করে ম্যাচ ম্যানেজার পরিবর্তন করতাম।
সেই ম্যানেজারকে কাছে সাত সকালে এসে অভিযোগ দিলেন বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
দাদা দাদা করে ডাক দিয়ে ম্যানেজারকে নেপাল বড়ুয়া ডাকলেন।
তার শব্দে আমারও ঘুম ভেঙ্গে গেল।
নেপাল দা ম্যানেজারকে বললেন দাদা আমাদের স্টোর থেকে মুরগিগুলো চুরি হয়ে গেছে।
আমরা যারা সিনিয়র ছিলাম সবাই বলাবলি করলাম। তদন্ত করে বুঝতে পারলাম
আমাদের মুরগিগুলো শিয়াল মামা চুরি করেছে।
তারপর হোস্টেলের যারা থাকি (প্রায় ৩০/৩৫ জন) হবে।
আলোচনা করলাম কি করা যায়।
বড় ভায়েরা মানে আমরা যারা বিএ, বিএসসি,বিকম, পড়ি আর দু'একজন আছে যারা মাস্টার করতেছেন তারা মিলে পরামর্শ করে শিয়াল মামার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার ঘোষণা দিলাম।
হোস্টেলে কোদাল, কুন্তি নেই।
তাই আরো পরে গেলাম ঝামেলায়।
কোদাল, কুন্তির জন্য হোস্টেলে পাশে এলাকা কল্যাণপুর থেকে বন্ধুদের মাধ্যমে সংগ্রহ করলাম।
পর্ব-১২(শিয়াল মামর খোঁজে)
রাঙামাটি কলেজ হোস্টেলের পিছনে বিশাল এলাকা খালি জায়গা।
ঝোঁপ-ঝাড়ে পরিপূর্ণ সেই খালি জায়গাটি।
সেখানে রাত-দিন শিয়ালের বিচরন ভূমি।
সন্ধ্যা হতে না হতেই ডাক মারে শিয়ালগুলো।
এমন কি মেঘলা দিনেও।
বৃহস্পতিবারে জমা রাখা মুরগিগুলো সেই শেয়ালগুলো চুরি করে খেয়ে ফেলেছে।
বলেছেন হোস্টেলের বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়া।
আজ শুক্রবার বিরানি খাবার আশা ছিল। তাই বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবারে বিকালে
মুরগিগুলো আনা হয়েছে।
বাবুর্চি নেপালের খবর শুনে হোস্টেলে সবাই জড়ো হলাম।
আজ যেহেতু শুক্রবার। কলেজ নেই।
কল্যাণপুরের বিভিন্ন বাসা-বাড়ী থেকে আনা কোদাল, কুন্তি, দা আনা হয়েছে।
আমার ক্লাশ মেট ছিলেনন স্বপন চাকমা, সুভাস কীর্তি চাকমা, বড় ভাই ছিলেন রুপায়ন চাকমা, ছোট ভাই ছিলেন দিগন্তু চাকমা।
এইচএসসির ছাত্র ছিলেন ত্রিরতন চাকমা, মিন্টু চাকমা, সুপ্রকাশ চাকমা, নিউটন চাকমা, অভিলাষ ত্রিপুরা, বাবুল চাকমা, অনিল জীবন চাকমা, রিন্টু চাকমা সহ আরো অনেকে।
যাদের নাম এখন মনে নেয়।
হোস্টেলে আমরা প্রায় ৪০জনের কাছাকাছি ছাত্র ছিলাম।
আমরা কয়েকটা গ্রæপে ভাগ হয়ে শেয়াল খুঁজতে জঙ্গলে ডুকে পড়লাম।
এক গ্রæপের ছাত্ররা দেখলেন একটি শিয়াল ঘুমাচ্ছে।
সে শিয়ালকে দেখা মাত্র ২/৩ ছাত্র ঘুমন্ত অবস্থায় মেরে পেলেছে ওরা।
শুরু হলো আবার শিয়াল খোঁজার অভিযান।
পেলাম কয়েকটি শেয়ালের গর্ত।
এবার শুরু শেয়ালর গর্ত খুঁড়ানো।
বেশ কয়েকটি গর্ত খুঁড়ানো হয়েছে।
একটি গর্ত ২/৩ টি শিয়ালের 'ছা' পেলাম।
আবার ২টি গর্ত থেকে কয়েকটি 'ছা' পেলাম। সেগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে।
সেগুলো নিয়ে অনেকেই দুষ্টামি শুরু করেছে।
মেরে ফেলা শিয়াল আর 'ছা' গুলো আনা হয়েছে হোস্টেলের মাঠে।
কয়েকজন ছাত্র অতি উৎসাহিত হয়ে মৃত শিয়ালকে নিয়ে
কলেজ ক্যান্টিনে সামনে নিমগাছে বেঁধে ভাগ ভাতোয়ারা করেছে।
শুনেছে শিয়ালের মাংস খেলে নাকি বাত, শূলনি ছাপানি ভালো হয়।
তাই শিয়ালের মাংস মূহুর্তে শেষ।
আর শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য বড় শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
শেয়ালদের কারনে আমার আজ বনরুপায় যাওয়া হয়নি। তাই রক্ত পরীক্ষা করাও হয়নি।
পর্ব-১৩(শিয়াল ছা পালানো)
শেয়ালের 'ছা' গুলো হোস্টেলের একটা খালি রুমে বেঁধে রাখা হয়েছে।
লক্ষ্য, মা শেয়ালদেরও মেরে ফেলার।
রাত হলে মা শিয়ালের ছা'গুলো বেঁধে রাখার রুমে আশেপাশে ঘুরতে থাকে।
সে সুযোগে মা শিয়ালদের মেরে ফেলার চেষ্টা করি।
আর তাই আমরা পালাক্রমে ছৌকি দিই। আর বাবুর্চি নেপাল বড়ুয়াতো প্রায় সময় থাকে।
শিয়ালের ছা'গুলোকে আমরা মুরগির নাড়ি-ভূড়িগুলো খেতে দিই।
শিয়ালের ছা'গুলো দিনভর ডাকাডাকি করে আর রাত হলেতো বেশী।
তাদের ডাক শুনে মা শিয়ালগুলো অছে।
অনেক বার চেষ্টা করেছি মা শিয়ালগুলোকে মেরে ফেলার। পারিনি।
কয়েকটা দিন রাখার পর শিয়ালের ছা'গুলো আমাদের দেখলে পাশে আছে।
পোষ মানতে শুরুকরেছে। শিয়ালের ছা'গুলো হোস্টেল রুমে আছে জানতে পেরে কলেজের অনেক বন্ধু-বান্ধবী দেখতে এসেছে।
খাবার খাওয়ার জন্য সবসময় ডাকাডাকি করে আর রুমে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে হোস্টেলের চারিপাশ।
হোস্টেল থেকে কলেজের দূরত্ব বেশী হলে ৫০০ গজ হবে।
হোস্টেল থেকে কলেজে যাচ্ছি। কয়েকজন বান্ধবী মিলে সে পথের ধারে তারা আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে কলেজ গেলাম। সেও কিছু বললো না।
শুক্রবারে শিয়াল খুঁড়ার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার জন্য বনরুপায় যাওয়া হয়নি।
মনে হয় তাই সে আমার উপর
অভিমান করে বসে আছে।
ক্লাশ করার পর দুপুেের খাওয়ার জন্য হোস্টেলে আসতেছি।
ঠিক সে সময় পথের ধারে তার এক বান্ধবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা তিন বন্ধু যাচ্ছিলাম হোস্টেলে।
পিছনে আমি। বন্ধুগুলো থাকার কারনে আমি তাকে কিছু বলিনি।
সে রাগ করে আমার হাত ধরে বলল-কি হয়েছে তোমার?
কালকে বনরুপায় আসনি কেন? তোমার অপেক্ষায় অনেক প্রায় ২ ঘন্টা ছিলাম।
এত অহঙকার কর কেন?
বললাম-কিছুই হয়নি। শরীর দুর্বল লাগছে।
এই বলে হোস্টেলে হেলাম।
আর সে রাগ করে পথের ধারে দাঁড়িয়ে রইল।
বললাম হোস্টেলে চল।আসলো না।খুব অভিমানে রইল।
পর্ব-১৪
দুপুরের খাওয়ার পর কয়েজন মিলে শিয়ালের ছা গুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শিয়ালের ছা গুলো দৌঁড়ে হোস্টেলে জঙ্গলে চলে গেল আর ডাকাডাকি শুরু করল।
সে দিন আকাশ মেঘলা ছিল।
ছা'গুলো ছেড়ে দেওয়ার পর বিকালে কলেজে গেলাম। ক্লাশ শেষে বিকালে হোস্টেলে চলে আসলাম।
বিকালে তার সাথে দেখা হয়নি। পরের দিন কলেজেও
তাকে তেমন সময় দেওয়া হয়নি।
তাই হয়তো অভিমান করে চলে গেছে।
গত শুক্রবারে শিয়ালের ছা গুলো ধরার কারনে আমার রক্তের গ্রুপ জানা হয়নি।
তাই বনরুপায়ও যাওয়া হয়নি।
পরের দিন কলেজে যাওয়ার পথে দেখা হলো চিজির সাথে।
দেখা মাত্র সে আমার পাশে এসে হাত ধরে গাছতলায় নিতে চেয়েছিল।
ক্লাশ সময় হওয়ায় তার সাথে যাওয়া হয়নি।
কলেজে ২য় পিরিয়ডে ক্লাশ চলার সময় কি যে গন্ডগোল শুরু হয়েছে।
ক্লাশ শেষ না করে আমি ক্লাশ রুম থেকে বাইরে আসলাম।
বাইরে দেখি মারামারি শুরু হয়েছে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আর ছাত্রলীগের ছেলেদের মধ্যে কোন একটা মহিলা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়েছে।
পরবর্তীতে পাহাড়ী-বাঙালী সম্প্রদায় পর্যন্ত চলে গেছে।
তখন আমাদের কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন
ড. এনায়েতুর রহমান।
কিছুক্ষণ পর কলেজ মাঠে পুলিশ এসে গেল।
হোস্টেলের ছাত্ররা সবাই হোস্টেলে চলে আসলাম।
তখন কলেজ গেইট এলাকার পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত হয়েছে।
শুনেছি কে বা কারা কলেজ গেইটের দোকানগুলো আগুন দিতে চেয়েছিল।
পরিস্থিতি খুব বেশী উত্তপ্ত হওয়ায় অধ্যক্ষ মহোদয় অনিদিষ্ট কালের জন্য কলেজ বন্ধের ঘোষণা দিলে।
আর আমাদের হোস্টেলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিকালের মধ্যে হোস্টেল ত্যাগ করতে হবে বলে হোস্টেলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আমরা যারা খাগড়াছড়ি থেকে হোস্টেলে রয়েছি তারা অধ্যক্ষ সারের কাছে গিয়ে শুধু রাত্রি যাপনের জন্য অনুমোদন পেয়েছি।
তাও অনেক কষ্টে।
পরের দুই দিন হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে।
যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় হোস্টেলে ছাত্ররা(প্রায় ২০জনের কাছাকাছি) লঞ্চে করে নানিয়াচর হইয়া মহালছড়ি আমলাম।
সেদিনই প্রথম নানিয়াচর বাজার দেখলাম।তাও আবার লঞ্চ থেকে।
তবে অধ্যাবধি যাওয়া হয়নি নানিয়াচরে।
১৯৯৭ সাল পার্বত্য চুক্তির কাছাকাছি হওয়ায় ১৫ দিনপর আমাদের কলেজ খুলে গেছে।
কলেজ খোলার ১ দিন আগে হোস্টেলে গেলাম। তখন হোস্টেলটি নোংরায় পরিপূর্ণ। হোস্টেলে চারিদিক পরিস্কার করতে প্রায় কয়েক ঘন্টা চলে গেলে আমাদের।
কয়েক দিন পরে আমার তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা থাকার কারনে কলেজে গিয়ে চিজির সাথে দেখা হলেও আমি সময় দিতে পারিনি।
তাই সে খুব বেশী অভিমান করে আছে।
এক সপ্তাহ পর ৩য় বর্ষের পরীক্ষা হলো।
উত্তীর্ন হয়ে ৪র্থ বর্ষে ভর্তি হলাম।
চলমান-